ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রচ্ছদ » পাঠকের লেখা » বিস্তারিত

রোহিঙ্গা শরণার্থী : মহা বিপদ সংকেত!

২০১৯ সেপ্টেম্বর ১৯ ১৮:১৪:৩৩
রোহিঙ্গা শরণার্থী : মহা বিপদ সংকেত!

চৌধুরী আবদুল হান্নান


বিপদের পূর্বাভাস পেলে আমরা সতর্ক হই, আবহাওয়ার ক্ষেত্রে এখন প্রায় শতভাগ নিশ্চিত পূর্বাভাস পাওয়া যায়। এমনকি সাইক্লোন, ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার কয়েকদিন পূর্বেই দিনক্ষণ ও লক্ষ্যবস্তু জানা সম্ভব হয় এবং সেভাবে প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা নিলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান অনেক কমে যায়।

পূর্বাভাসকে যথাযত গুরুত্ব না দেয়া আর সতর্কমূলক ব্যবস্থার অতিমাত্রায় ঘাটতি থাকার কারণে মর্মন্তদ পরিনতি আমরা প্রত্যক্ষ করেছি ১৯৭০ এর নভেম্বওে ভোলা জেলায় এবং ১৯৯১ এর ২৯ এপ্রিলের রাতে চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চলে।

মহা বিপদের পূর্বাভাস !

সেনাশাসিত দেশ মিয়ানমার সুদূর প্রসারী মতলব নিয়ে হাজার বছর ধরে বসবাসকারী ওদের মাতৃভূমি থেকে অত্যন্ত নির্দয়ভাবে উচ্ছেদ করেছে । সেনা শাসকদের কোনো মানবিকতা থাকে না, তাদের কাছে জন নিরাপত্তা ও উন্নতির চেয়ে ক্ষমতায় থাকা জরুরি।

ইতিমধ্যে শরণার্থীরা জানিয়েই দিয়েছে, নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে যাওয়ার চেয়ে বন্দিজীবন ভালো। অন্যদিকে জোর করে দুর্গত, আশ্রিত তাড়ানো যায় না। ১৯৯১ এ আটকে পড়া পাকিস্তানীরা এখনও সমাজের বিষ ফোঁড়া হয়ে আছে। এই বিহারীরা নীরবে কতটা সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করে চলেছে তার কোনো হিসাব নেই।

নিপীড়িত, ভয়ার্ত রোহিঙ্গারা জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্যয় খুঁজছে। এই বিপদগ্রস্ত মানুষদের জায়গা দিয়ে বাংলাদেশ মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছে, একটি মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের নাম বিশ্বব্যাপী উজ্জ্বল হয়েছে।

বিশ্বের রাষ্ট্রসমূহের এ মনোভাবকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আমাদের কূটনৈতিক তৎপরতার ক্ষেত্রে মূলধন করে আগাতে হবে। কোনো দেশই নিজ দেশের স্বার্থহানী করে অন্যদেশকে সুবিধা দেয় না।

রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের সুযোগ সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় ১২ লক্ষ রোহিঙ্গা বিভিন্ন দেশে সাময়িক আশ্রয় দেয়ার উদ্যোগ নিতে হবে এবং সকল ব্যয়ভার বহনের ব্যবস্থা করবে। কারণ শরণার্থী ব্যবস্থাপনার দায় জাতিসংঘের, আমাদের নয়।

১৯৯১ এ এক কোটি লোক পূর্ব পাকিস্তান থেকে বিতাড়িত হয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়া শরনার্থী ব্যবস্থাপনায় বিশ্বব্যাপী কূটনৈতিক সাফল্য ছিল বিস্ময়কর। এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরাগান্ধী শরণার্থীদের দুর্দশা লাঘবের জন্য, বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য সর্বোচ্চ কূটনৈতিক তৎপরতা চুড়ান্ত অগ্রগতির পথে নিয়ে যেতে সক্ষম হন। এখান থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে।

জাতিসংঘের বর্তমান মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের (Antonio Guterres) শরনার্থী ব্যবস্থানা ও পূনর্বাসনে ব্যাপক অভিজ্ঞতা রয়েছে, ইতিপূর্বে তিনি প্রায় ১০ বছর জাতিসংঘের শরনার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর (United Nations high Commissioner for Refugee) এর প্রধান ছিলেন। সিরিয়া, ইরাক, দক্ষিণ সুদান, ইয়েমেন, পূর্ব তিমুর এ সকল দেশে উদ্ভুত উদ্বাস্তু সমস্যা মোকাবেলায় তার ভূমিকা বিশ্বব্যাপী প্রশংসনীয়।

গত বছর জুলাই মাসে তিনি বাংলাদেশে এসে আশ্রিত রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে গেছেন। উদ্বাস্তু পূনর্বাসনের জন্য এ মানবিক মানুষটির মাধ্যমে আমাদের অনেক দূর আগানোর সুযোগ রয়েছে।

অতিষ্ঠ হয়ে অচিরেই টেকনাফ, উখিয়ার স্থানীয় বাসিন্দারা সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়ার আশংকা সৃষ্টি হয়েছে, তাতে ইন্ধন দেয়ার লোকের অভাব হবে না। শরণার্থী সমস্যা বিষয়ে সহযোগিতার জন্য আমাদের বিশ্বব্যাপী হাত বাড়াতে হবে, আমাদের সমস্যা, আমাদেরই দৌড়াতে হবে।

বসার জায়গা দিলে শয়ন করতে চায়। তারা যদি বাংলাদেশে স্থায়ী আসন পাতার জন্য বেপরোয়া হয় আর মূলবাসিন্দাদের জীবন দুর্বিসহ করে তুলে এবং সর্বোপরি রোহিঙ্গা অব্যবস্থানার কারণে দেশ যদি অর্থনৈতিক, সামাজিক, নিরাপত্তা বিষয়ক মারাত্মক ঝুঁকিতে নিপাতিত হয় তা হলে আগামী প্রজন্ম বর্তমান সরকারকেই দায়ী করবে।

লেখক : সাবেক ব্যাংকার।