ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রচ্ছদ » অর্থ ও বাণিজ্য » বিস্তারিত

ডিম-মুরগির দাম বেড়েছে 

২০১৯ সেপ্টেম্বর ২৭ ১৪:২৫:৩৬
ডিম-মুরগির দাম বেড়েছে 

স্টাফ রিপোর্টার : পেঁয়াজ ও সবজির চড়া দামের মধ্যে এবার রাজধানীর বাজারগুলোতে বেড়েছে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে বয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে এবং ডিমের দাম বেড়েছে ডজনে ১০ টাকা।

এদিকে শীতের আগাম সবজি শিম, ফুলকপি, পাতাকপি, মুলার সরবরাহ বাড়লেও আগের মতোই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের সবজি। সবজির পাশাপাশি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজও। সরকারের পক্ষ থেকে পেঁয়াজের দাম কমার আশ্বাস দেয়া হলেও বাজারে তার কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না।

শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ানবাজার, রামপুরা, মালিবাগ হাজীপাড়া, খিলগাঁও অঞ্চলের বিভিন্ন বাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৪৫ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৩০-১৩৫ টাকা। বয়লার মুরগির দাম বাড়লেও লাল কক ও পাকিস্তানি লেয়ার মুরগি আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। লাল কক মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২১০-২১৫ টাকা এবং লেয়ার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৫০-২৬০ টাকা।

বয়লার মুরগির দাম বাড়ার বিষয়ে খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী মমিনুল বলেন, গরমের কারণে ব্রয়লার মুরগির দাম অনেকদিন কম ছিল। এখন একটু গরম কমায় দাম বাড়তে শুরু করেছে। আমাদের ধারণা, সামনে ব্রয়লার মুরগির দাম আরও একটু বাড়বে।

ব্রয়লার মুরগির দামের পাশাপাশি বেড়েছে ডিমের দাম। বাজার ভেদে ফার্মের ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১১০-১১৫ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১০০-১০৫ টাকা। আর মুদি দোকানে এক পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৯ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিমের দাম ডজনে ১০ টাকা এবং পিসে ১ টাকা বেড়েছে।

ডিমের দামের বিষয়ে মালিবাগ হাজীপাড়ার ব্যবসায়ী মো. সাবু বলেন, অনেকদিন ধরেই ডিমের ডজন ৯৫-১০০ টাকার মধ্যে বিক্রি করেছি। কিন্তু এখন ডিমের দাম বেড়ে গেছে। তাই ১১০ টাকার নিচে ডজন বিক্রি করার উপায় নেই। ডিমের দাম সহসা কমবে বলে মনে হয় না। কারণ প্রতিবছর এ সময় ডিমের দাম বাড়ে।

এদিকে শীতের আগাম সবজি শিমের কেজি গত সপ্তাহের মতো বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা। ছোট আকারের ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা পিস, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০-৫০ টাকা। ফুলকপির মতো কিছুটা দাম কমেছে পাতাকপি ও মুলার।

গত সপ্তাহে ৪০-৫০ টাকা পিস বিক্রি হওয়া পাতাকপির দাম কমে ৩০-৪০ টাকায় নেমে এসেছে। আর মুলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০-৬০ টাকা কেজি।

শীতের আগাম সবজির সঙ্গে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে লাউ, টমেটো, করলা, গাজর, ঝিঙে, বরবটি, বেগুন, পটল, ঢেঁড়স, উসি, ধুন্দুলসহ সব ধরনের সবজি। ছোট আকারের লাউ আগের সপ্তাহের মতো বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা পিস।

পাকা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকা কেজি। গাজর বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা কেজি। করলা ৬০-৭০ টাকা, বরবটি ৭০-৮০ টাকা, বেগুন ৫০-৬০ টাকা, চিচিংগা, ঝিঙা, ধুন্দুল ৫০-৬০ টাকা, পটল ৪০-৫০ টাকা ও কাঁকরোল ৪০-৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ২০-২৫ টাকা কেজি এবং মিষ্টি কুমড়ার ফালি পাওয়া যাচ্ছে ১৫-২০ টাকার মধ্যে।

সবজির দামের বিষয়ে কারওয়ানবাজারের ব্যবসায়ী আরিফুল বলেন, শীতের আগ সবজির দাম ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। ফুলকপি, পাতাকপি, মুলার দাম ইতোমধ্যে কিছুটা কমেছে। বাজারে শীতের সবজির সরবরাহ আরও বাড়বে শিগগির। তাই আশা করা যায়, কিছুদিনের মধ্যেই সবজির দাম কমে আসবে।

এদিকে ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ার অজুহাতে গত সপ্তাহে হঠাৎ করেই পেঁয়াজের দাম এক লাফে প্রায় দ্বিগুণ হয়। ৫০-৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া দেশি পেঁয়াজের দাম এক লাফে ৭৫-৮০ টাকা হয়ে যায়। পেঁয়াজের এমন দাম বাড়ার প্রেক্ষিতে খোলাবাজারে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করে ট্রেডিং কর্পোরেশন অবস্থা বাংলাদেশ (টিসিবি)।

খোলাবাজারে বিক্রির পাশাপাশি পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে করণীয় ঠিক করতে সরকারি বিভিন্ন দফতর, পেঁয়াজের আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বৈঠকের পর নতুন বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দিন এবং বাংলাদেশ ট‍্যারিফ কমিশনের সদস্য আবু রায়হান আল বিরুনি ঘোষণা দেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পেঁয়াজের দাম কমে যাবে।

সরকারের পক্ষ থেকে এমন ঘোষণা আসার পর ২৪ ঘণ্টার বদলে ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও পেঁয়াজের দাম কমেনি। গত কয়েকদিনের মতো দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭৫-৮০ টাকা কেজি। আর আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকা কেজি।

পেঁয়াজের দামের বিষয়ে মালিবাগের ব্যবসায়ী মশিউর বলেন, কথায় চিড়া ভেজে না। পেঁয়াজের দাম কমাতে হলে বাজারে সরবরাহ বাড়াতে হবে। বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ তো বাস্তবে দেখছি না। টিসিবি যে পেঁয়াজ বিক্রি করছে, সেখান থেকে কয়জন কেনার সুযোগ পাচ্ছে? ঢাকায় যে মানুষ তার এক শতাংশও টিসিবির পেঁয়াজ পাচ্ছে না। তাহলে টিসিবির পেঁয়াজ বিক্রির প্রভাব কীভাবে বাজারে পড়বে?

রামপুরার বাসিন্দা মো. রতন বলেন, কয়েক মাস ধরেই সবজির দাম চড়া। এরপর দাম বাড়ল পেঁয়াজের। এখন আবার বয়লার মুরগির দাম বেড়েছে। আর গরুর মাংসের দাম তো দীর্ঘদিন ধরেই সাড়ে পাঁচশ টাকার ওপরে। আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষের মাংস বলতে ব্রয়লার মুরগিই বোঝায়। এখন সেই মুরগির দামও বাড়ছে। কিন্তু আমাদের কিছু করার নেই। একটার পর একটা জিনিসের দাম বাড়বেই, এটা এখন আমাদের সয়ে গেছে।

(ওএস/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৯)