ঢাকা, বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » লাইফস্টাইল » বিস্তারিত

শিশুর ডায়াপার র‍্যাশের ঘরোয়া সমাধান

২০১৯ অক্টোবর ১৭ ১৩:৪১:০৩
শিশুর ডায়াপার র‍্যাশের ঘরোয়া সমাধান

লাইফস্টাইল ডেস্ক : প্রত্যেক শিশুর শিশুকালে কোনো না কোনো সময় ডায়াপার পরিধান জনিত র‍্যাশ সমস্যা হতে পারে। যে স্থানে ডায়াপার র‍্যাশ ওঠে সেখানকার ত্বক লাল হয়ে যায়, ফুসকুড়ি ওঠে ও চুলকানি বা যন্ত্রণা অনুভূত হতে পারে। শিশুর ডায়াপার র‍্যাশ মারাত্মক কিছু নয়। এ র‍্যাশ প্রতিরোধের সবচেয়ে সহজ উপায় হলো, বাচ্চার ডায়াপার ঘনঘন বদলে ফেলা, এমনকি এইমাত্র প্রস্রাব করলেও।

অনেক পিতামাতা শিশুর র‍্যাশ নিরাময়ের জন্য ওভার দ্য কাউন্টার ক্রিম/অয়েন্টমেন্ট (যা কিনতে চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশনের প্রয়োজন পড়ে না) ব্যবহার করেন, কিন্তু এখানে আলোচিত প্রাকৃতিক পন্থাগুলোও ডায়াপার র‍্যাশ দূর করতে পারে।

* বাতাসের সংস্পর্শ

ডায়াপার র‍্যাশের স্থানটিকে উন্মুক্ত রেখে বাতাসের সংস্পর্শ আসতে দিন, এতে র‍্যাশটি দ্রুত নিরাময় হবে- কিন্তু স্থানটিকে ডায়াপারে ঢেকে রাখলে নিরাময় বিলম্বিত হবে অথবা র‍্যাশটি আরো ছড়িয়ে পড়বে, ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞদের মতানুসারে। ডায়াপার র‍্যাশ সহজে দূর করার উপায় হচ্ছে, স্থানটিকে বাতাসের সংস্পর্শে রেখে পুরোপুরি শুকিয়ে নেয়া।

* ক্যাস্টর অয়েল

ক্যাস্টর অয়েল ব্যথা কমাতে পারে ও ডায়াপার র‍্যাশ দূরীকরণে সাহায্য করতে পারে, বলেন জর্জিয়ার অন্তর্ভুক্ত নর্থ ডিকাটুরের ফ্যামিলি প্র্যাকটিস ফিজিশিয়ান বিন্দিয়া গান্ধী। তিনি যোগ করেন, ‘ক্যাস্টর অয়েলে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক দমনকারী শক্তি রয়েছে। এ তেলের ঘনত্ব বেশি এবং এটি ডায়াপার র‍্যাশের স্থানে আস্তরণ তৈরি করে আর্দ্রতামুক্ত রাখতে পারে।’

* উইচ হ্যাজেল

ডায়াপার র‍্যাশ তাড়ানোর জন্য আরেকটি সহজ প্রাকৃতিক চিকিৎসা হচ্ছে উইচ হ্যাজেল, বলেন ডা. গান্ধী। তিনি আরো বলেন, ‘উইচ হ্যাজেল ডায়াপার র‍্যাশের স্থানে আরামদায়ক অনুভূতি দিতে পারে। যদি আপনি লক্ষ্য করেন যে ডায়াপার র‍্যাশের আবির্ভাব ঘটতে যাচ্ছে (ডায়াপার পরিধানের স্থানে ছোট র‍্যাশ দেখে তা বুঝতে পারবেন), তাহলে উইচ হ্যাজেলের প্রয়োগে এটি অংকুরেই বিনষ্ট হতে পারে।’ উইচ হ্যাজেল হলো একটি প্রাকৃতিক অ্যাস্ট্রিনজেন্ট যা ত্বকের লালতা ও ফোলা হ্রাস করতে পারে।

* চিনি এড়িয়ে চলা

ইস্ট ইনফেকশন অথবা ছত্রাক সংক্রমণ থেকে ডায়াপার র‍্যাশ হতে পারে, বলেন ডা. গান্ধী। তিনি আরো বলেন, ‘সুগার ও কার্বোহাইড্রেট খেয়ে ইস্টের বিকাশ হতে থাকে।’ তাই আপনার বাচ্চার শরীরে ডায়াপার র‍্যাশ লক্ষ্য করলে তাকে চিনিযুক্ত খাবার খাওয়াবেন না।

* পেট্রোলিয়াম জেলি

পেট্রোলিয়াম জেলিকে বেরিয়ার অয়েন্টমেন্ট অথবা বেষ্টনী মলম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রতি ডায়াপার পরিবর্তনে পেট্রোলিয়াম জেলি প্রয়োগ করলে ত্বকের যেকোনো ইরিটেশন প্রতিরোধ হতে পারে। ডা. গান্ধী বলেন, ‘পেট্রোলিয়াম জেলি একটি ঘন বেষ্টনী তৈরি করে যা ত্বককে ডায়াপার র‍্যাশ সৃষ্টিকারী আর্দ্রতা থেকে দূরে রাখে।’ বেশিরভাগ ডায়াপার র‍্যাশ ক্রিম ও অয়েন্টমেন্টে পেট্রোলিয়াম জেলি ও জিংক অক্সাইডের উপস্থিতি থাকে।

* বুকের দুধ

মায়ের বুকের দুধে ফ্যাটি অ্যাসিড ও ইমিউন সিস্টেমকে (শরীরের রোগ দমনকারী তন্ত্র) শক্তিশালী করে এমন উপাদান রয়েছে, বলেন ডা. গান্ধী। তিনি আরো বলেন, ‘ডায়াপার র‍্যাশের স্থানে কিছু ফোঁটা বুকের দুধ মাখলে প্রদাহ প্রশমিত হতে পারে।’ যদিও এ চিকিৎসাকে সমর্থন করার জন্য উল্লেখযোগ্য গবেষণা নেই, কিন্তু আপনি চেষ্টা করে দেখতে পারেন।

* অ্যান্টিবায়োটিক সেবনকালে অতিরিক্ত যত্ন

অ্যান্টিবায়োটিক ও ডায়াপার র‍্যাশের মধ্যে সরাসরি পারস্পরিক সম্পর্ক রয়েছে। অ্যান্টিবায়োটিক ভালো ব্যাকটেরিয়া ও খারাপ ব্যাকটেরিয়া উভয়কেই হত্যা করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যখন আপনার বাচ্চাকে কানের ইনফেকশনের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়াবেন তখন এ ইনফেকশন সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার পাশাপাশি ছত্রাকের গ্রোথ নিয়ন্ত্রণকারী ব্যাকটেরিয়াও ধ্বংস হতে পারে। অ্যান্টিবায়োটিকে ডায়রিয়ার ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়। অধিকাংশ অ্যান্টিবায়োটিক বুকের দুধের মাধ্যমে শিশুর শরীরেও চলে আসতে পারে। ডা. গান্ধী বলেন, ‘ডায়রিয়া প্রতিরোধ করতে অ্যান্টিবায়োটিক সেবনকালে প্রোবায়োটিক গ্রহণ করুন, কারণ ডায়রিয়া থেকে ডায়াপার র‍্যাশ ডেভেলপের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।’ প্রোবায়োটিক অন্ত্রে ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য পুনরুদ্ধার করতে পারে।

শিশুর ডায়াপার র‍্যাশ নিয়ে কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?

আপনার শিশুর ডায়াপার পরিহিত স্থানে আবির্ভূত র‍্যাশ চারদিনের বেশি সময় থাকলে অথবা দিনকে দিন বেড়ে গেলে তাকে শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যেতে হবে, আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব ডার্মাটোলজি অনুসারে। আপনি যেটাকে ডায়াপার র‍্যাশ মনে করছেন সেটা জটিল ব্যাক্টেরিয়াল ইনফেকশনও হতে পারে, যার চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হবে। আপনার বাচ্চার শরীরে স্কিন ইনফেকশনের কোনো লক্ষণ দেখলে চিকিৎসক দেখাতে দেরি করা ঠিক হবে না, যেমন- আপনার বাচ্চার জ্বর, ফোসকা, র‍্যাশ থেকে পুঁজ/তরলের ক্ষরণ ও ব্যথা থাকলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান।


(ওএস/অ/অক্টোবর ১৭, ২০১৯)