ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রচ্ছদ » মুক্তচিন্তা » বিস্তারিত

৭১'র প্রেতাত্মারা বহু রূপে বহুবর্ণের আত্মপ্রকাশ : রামু নাসির নগর ভোলা একি সুত্রে গাঁথা

২০১৯ অক্টোবর ২২ ১৩:১০:০০
৭১'র প্রেতাত্মারা বহু রূপে বহুবর্ণের আত্মপ্রকাশ : রামু নাসির নগর ভোলা একি সুত্রে গাঁথা

মানিক বৈরাগী


বাংলাদেশ কি ভুলে গেছে ৪৭ও ৭১এ ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক শক্তি কিভাবে ধর্ম কে ব্যবহার করে এই ভারতবর্ষে সাম্প্রদায়িক হাঙ্গামা, সংঘাত, নির্যাতন, লুট চালিয়েছে।

স্বাধীন বাংলাদেশে ৭১এর পরাজিত শক্তি মাওবাদের নামে, বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রীদের ছায়াতলে এমনি রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক সংঘাত সংঘটিত করেছে।

৭৫র পরবর্তী তারা রাষ্ট্রীয় মদদে প্রকাশ্য অপরাধ সংগঠিত করেছে।তখন তারা নিম্নোক্ত পত্রিকা সহ বিভিন্ন স্থানিক, আঞ্চলিক পত্রিকা কে প্রথমে ব্যবহার করেছে।সেই সব কয়েকটি পত্রিকা এখানে উল্লেখ করছি।প্রিয় পাঠক পাঠিকা আপনারা যদি জাতিয় আর্কাইভ গুলোতে এসব খোজনেন অবশ্যই তার প্রমাণ পাবেন।

দৈনিক সংগ্রাম, দৈনিক ইনকিলাব, দৈনিক দিনকাল, দৈনিক মিল্লাত এই পত্রিকা গুলো আশির দশকের শেষ দিক থেকে বিগত জোট সরকার পর্যন্ত ধারাবাহিক ভাবে বাংলাদেশের প্রখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা, সাংস্কৃতিক সংগঠক,নাট্যজন, কবি লেখক, বুদ্ধিজীবী, প্রগতিশীল শিক্ষক মনিষীদের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার নামে কুৎসা রটাতো। সাথে সাথে তৌহিদি জনতা, মুজাহিদি মুসলিম কত নামে তারা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি করতো। হামলে পড়তো হিন্দু পাড়ায়, মন্দিরে। এসব তো আমরা দেখছি।

বর্তমানে তারা ফেইসবুক, ইমেইল, অনলাইন নিউজ পোর্টাল, বিভিন্ন পেইজের নামে ধর্মীয় সংঘাত সৃষ্টি করছে।
আমরা কিন্তু খুব সহজেই ভুলে যাই বলে, হাতের কাছে মুহুর্তে যা আছে তাকেই দোষারোপ করছি। কিন্তু এই সাম্প্রদায়িক সংঘাত, নির্যাতন আমরা ইতিহাস ঘাটলেই দেখতে পাবো ১৯৪৭ পূর্ববর্তী থেকে বৃটিশ সাম্প্রদায়িক বিষবৃক্ষ আমাদের মাঝে রোপন করে গেছে তার রুপ ও আঙ্গিক বদল হয়েছে মাত্র।

সাপের ঝাপির রঙ রুপ আকার পরিবর্তন হয়েছে শুধু,ঝাপির মধ্যে সেই বিষধর সাপ ছিলো আছে।বরং বেড়েছে বহু নামে বহু রুপে।সাপের বিষ ঠিকই বিরাজমান।নির্মুল হয়নি।বরং ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। এই স্বধর্ম বিকৃতি কারি ওহাবি মওদুদি জামাতি সালাফি ফেতনাধারী মোল্লারা ইসলামের নামে নবীজীর নাম ব্যবহার অপর ধর্মের ধর্মাবলম্বী নিরিহ লোকজনের ভিটেমাটি দখল করেছে।করেছে উদবাস্তু। এরা বরাবরই বর্ণচোরা ধর্ম বিদ্ধেষী সাম্প্রদায়িক। এই সামপ্রদায়িক অপশক্তি চিরতরে রুখে দিতে হবে। তারজন্য চাই সাহিত্য সাংস্কৃতিক অসাম্প্রদায়িক বিবেকি জাগরণ। তারজন্য রাষ্ট্র ছাত্র সমাজ রাজনৈতিক দল সমুহকে এগিয়ে আসতে হবে। এগিয়ে আসতে হবে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সকল শক্তিকে।এগিয়ে বাংলাদেশের ক্রিয়াশীল সকল বাম শক্তিকে।

অতীতে আমারা দেখেছি দেলোয়ার হোসাইন সাইদি, হাফেজ্জি হুজুর, মুফতি আমেনি, শায়কুল হাসিদ এসবের তত্তাবধানে কিভাবে ড.আহমদ শরিফ, কবির চৌধুরী, কবি শামসুর রাহমান, হুমায়ুন আজাদ, রামেন্দু মজুমদার, ফেরদৌসী মজুমদার, শহীদ জননী জাহানারা ইমাম, সুফিয়া কামাল, নীলিমা ইব্রাহীম, মুনতাসীর মামুন সহ কত বুদ্ধিজীবী কবি লেখকের বিরুদ্ধে নাস্তিক মুরতাদ নামে কত সভা সমাবেশ হতে।

এতেও ওরা কান্ত হয়নি এরা কাদিয়ানী সম্প্রদায় কে অমুসলিম ঘোষণা করার জন্য কত হাঙ্গামা করেছে। এই সাম্প্রদায়িক অপশক্তি তখন করতো রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক দলের মদদে। বর্তমানে নিজেরা করলে প্রশাসনের ভেতর লুকিয়ে থাকা তাদের পেইড এজেন্টদের মাধ্যমে, মাঝে মাঝে দেখাযায় কোথাও কোথাও সরকার দলিয় এমপি মন্ত্রীরাও ব্যক্তি উদ্যোগে জড়িয়ে পড়েন।

এরা সেই ৪৭থেকে ৭১এর সাম্প্রদায়িক অপশক্তি যারা বারে বারে অপরাধ করেও বিচারের মুখোমুখি হয়নি,বারে বারে পার পেয়ে গেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তির কারনে, ব্যক্তির কারণে। এদের বর্তমান টার্গেট সবসময় আওয়ামীলীগ ও শেখ হাসিনা এরা বর্তমানে দলে দলে অনুপ্রবেশ করেছে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রূপে। এরা আছে রাজনৈতিক ভাবে প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে।

বাংলাদেশ এদের চুড়ান্ত রূপের একটু রুপ দেখতে পায় বিগত জোট সরকারের সময়ে তারা একযোগে ১৭আগস্ট সারাদেশে বোমা হামলা ঘটিয়ে। ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলার মধ্যদিয়ে। রাজশাহীতে বাংলা ভাই, মুফতি হান্নান, শায়ক আব্দুর রহমান সহ কত জঙ্গীর উৎপাতে প্রকাশ্য নির্যাতন।এদের পেছনে ছিলো স্বয়ং তৎকালীন রাষ্ট্র শক্তি।

এরপর তারা বিভিন্ন বৈশ্বিক ও রাষ্ট্রীয় সরকার উত্থান পতনে কৌশল বদলে ঘটিয়েছে কক্সবাজারের রামু পরিকল্পিত ভাবে বৌদ্ধ মন্দির ও বিহারে হামলা, ব্রাম্মণবাড়িয়ার নাসির নগর অতঃপর ভোলা। একি সুত্রে গাঁথা। আওয়ামী লীগ সরকার যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই এই ৪৭ও৭১এর অপরাধীরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রূপে বাংলাদেশে ধর্মপ্রাণ মুসলমান নিয়ে এই অপরাধ সহজেই সংগঠিত করে।

বর্তমান মাসে যখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা দেশে ঘুষ,দুর্নীতি, মাদক, জুয়া বিরোধী অভিযান শুরু করেছে তখনই বুয়েটে ছাত্র হত্যা করে অভিযান কে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার প্রচেষ্টা চালিয়েছে। এতে সফল কাম না হওয়ায় ভোলাতে এই সাম্প্রদায়িক নির্যাতন ও উত্তেজনা উন্মাদনা। এদের নির্মুলে চাই রাষ্ট্রীয় সামাজিক আন্দোলন।

লেখক : নব্বইয়ের নির্যাতিত ছাত্রনেতা ও কবি, কক্সবাজার।