ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রচ্ছদ » মুক্তচিন্তা » বিস্তারিত

এবার ব্যাংক লুটেরাদের পাকরাও করার পালা 

২০১৯ নভেম্বর ০৯ ১৫:৩৮:৩০
এবার ব্যাংক লুটেরাদের পাকরাও করার পালা 

চৌধুরী আবদুল হান্নান


“ব্যাংক পরিচালকরাই চার হাজার কোটি টাকার ঋণ খেলাপি”- বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে সমকাল পত্রিকা (০৫-০৩-২০১৮), তারপরও এ বিষয়ে কোনো উচ্চবাচ্য লক্ষ্য করা যায়নি।

ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যগণ ব্যাংক পরিচালনা করেন কিন্তু তারাই যদি ঋণ খেলাপি হন, তাহলে ব্যাংকের বিপুল পরিমান খেলাপি ঋণ আদায়ে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করবেন কীভাবে?

বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালকেরা ব্যাংকটিতে তার শেয়ার অনুযায়ী ব্যাংকের মালিকও, আর রাষ্ট্রয়ত্ত ব্যাংকের পরিচালকগণ সরকার কর্তৃক মনোনিত এবং সরকারের প্রতিনিধি। তাদের আগমন, নির্গমন সরকার পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত, যেন অতিথি পাখি।

পরিচালকেরা যখন অন্য ব্যাংকের পরিচালকের সাথে যোগসাজশে নিজ নিজ ব্যাংক থেকে টাকা বের করার কাজটা সম্পন্ন করেন, তা ঠেকাবে কে?

বাংলাদেশ ব্যাংক ঠেকাবে?

ঋণ খেলাপি ব্যাংক পরিচালকদের তো চিহ্নিত করেছেই বাংলাদেশ ব্যাংক কিন্তু প্রতিকার তো নেই। অযথা তাদের নখদন্তহীন, নিধিরাম সর্দার আথ্যা দিয়ে কী লাভ?

অন্যদিকে এবার ঘোষিত বাজেটের প্রায় এক পঞ্চামাংসের সমান অর্থ ব্যাংকের ঋণ খেলাপিদের হাতে, মাত্র তিনশত খেলাপি গ্রাহক ১৭ কোটি মানুষকে জিম্মি করে রেখেছে। আর যারা ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপি, সামর্থ থাকা সত্ত্বেও ঋণ পরিশোধ করছে না, আর বেনামি ঋণ, অবলোপনকৃত ঋণের সুবিধাভোগী, তারাই ব্যাংক ব্যবস্থাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। এদের অনেকেই বিদেশে অর্থ পাচারকারী। অপরদিকে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা ব্যাংকের দরজায় কোনঠাসা, পরগাছার দাপটে। বলতে গেলে, সব রকমের আইন বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও, খেলাপি ঋণ আদায় বা ব্যাংক ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করতে প্রায় সকল উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে।

নানা রকম দুষ্কর্মের মাধ্যমে শতশত কোটি অবৈধ টাকা অর্জনের বিরুদ্ধে চলমান শুদ্ধি অভিযান সাধারণ সচেতন মানুষের মনে স্বস্তি এনেছে। আর তাঝাড়া, জনসমর্থন ব্যতিত কোনো বড় অভিযান সফল হয় না।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যুগান্তকারী প্রশংসনীয় পদক্ষেপ যে, নিজ দলের মধ্যে থেকেই এ অভিযান শুরু করলেন। ইতিমধ্যে যারা গ্রেফতার হয়েছে তারা রাঘোব বোয়াল নয়, ছোট বোয়াল, আর তাতেই দুর্নীতির যে ভয়ংকর মাত্রা লক্ষ্য করা গেছে, অনেকেই বলেন, এটা আসলে বড় অসুখের ছোট উপসর্গ। এবার রাষ্ট্রের অর্থ ভান্ডার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে জিম্মি দশা থেকে উদ্ধার করার জন্য দৃষ্টি দিতে হবে।

প্রভাবশালী ঋণ খেলাপি রাঘব বোয়াল, রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত, অর্থনৈতিক সন্ত্রাসীদের পাকরাও করতে অভিযান চালাতে গেলে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সবুজ সংকেত প্রয়োজন হবে। দেশে এমন একটা অবস্থা বিরাজমান যে, প্রতিটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য নিজস্ব আইন, বিধি-বিধান থাকা সত্ত্বেও সকলে তাকিয়ে থাকে একজনের দিকে, শেখ হাসিনার নির্দেশ ছাড়া কোনো কিছু যেন হওয়া মানা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দিলে কাজটার শুভ সূচনা হতে পারে, সব ধরনের সহযোগিতা দিতে হবে, তারা শক্তি পাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাজে হস্তক্ষেপ না করলে, রাজনৈতিক চাপ না থাকলে বাংলাদেশ ব্যাংক সক্ষমতা দেখাতে পারবে, ঠিকই ব্যাংকগুলো ঘুরে দাড়াবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নির্দেশিত হয়ে অন্যান্য প্রতিটি ব্যাংকের প্রাথমিকভাবে ৫ জন খেলাপি গ্রাহক। প্রতিষ্ঠানকে চূড়ান্ত নোটিশ দিয়ে ব্যাংকের টাকা ফেরত পাওয়ার এ মহাযজ্ঞ শুরু করা যায়।

লেখক : সাবেক ব্যাংকার।