ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » মুক্তচিন্তা » বিস্তারিত

স্বস্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উবাচঃ প্রচারিত একটি ফোল্ডার

২০১৯ ডিসেম্বর ২৭ ১৭:০৯:৫০
স্বস্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উবাচঃ প্রচারিত একটি ফোল্ডার

রণেশ মৈত্র


সন্ত্রাসবাদ-জঙ্গীবাদ অধুনা বিশ্বের সর্বাধিক উদ্বেগের বিষয়। গোটা পৃথিবীতে এমন একটি দেশও নেই তা এশিয়ার হোক, আফ্রিকার হোক, ইউরোপের-আমেরিকার বা অষ্ট্রেলিয়ার হোক-সর্বত্রই সমস্যাটি আতংকের বিষয় বলে চিহ্নিত হয়েছে কোথাও কম কোথাও বেশী।


একমাত্র বাংলাদেশই বোধ হয়, অন্তত: তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এ সংক্রান্ত উক্তিতে উদ্বেগ আতকংক তো দূরের কথা, জানা গেল বাংলাদেশে কোন আই এস বা জঙ্গীর অস্তিত্ব নেই।ঐ মতবাদে যারা বিশ^াসী তাদের সবাইকে ইতোমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে ।
যদি স্বরাষ্ট্্রমন্ত্রীর এই বক্তব্য সত্য বলে মেনে নেওয়া যেত, তা অত্যন্ত আনন্দের সংবাদই হতে পারতো।বাংলাদেশের সকল নাগরিকের জন্য কিন্তু বাস্তব লক্ষ্মনগুলি মন্ত্রী মহোদয়ের ঐ উক্তির সপক্ষে সায় দেয়না ।ঐ উক্তির প্রতি জনগন আস্থ্ওা স্থাপন করতে পারছেন না ।
সপ্তাহ খানেক প্রায় হলো গুলশান আর্টিজান মোকদ্দমার রায়দানের দিনের ঐ ঘটনাটি ছোট্ট কিন্তু আদৌ উপেক্ষনীয় নয় ।আত্মতৃপ্তির কোন রকম সুযোগ কি পাওয়া যায় যখন দেখা গেল মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গী রায়ের পর যখন কারাগারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল , তখন দিব্যি আই এস এর লোগো বিশিষ্ট বিশেষ ধরনের টুপি মাথায় দিয়ে প্রিয়জন ভ্যানে উঠেছে । যেহেতু ঐ জঙ্গীরা যখন গ্রেফতার হয় তখন ঐ টুপি তাদের মাথায় ছিলনা , তাই মানতেই হবে জঙ্গীরা হয় জেলখানায় আটক থাকাকালে অথবা রায়ের দিন আদালতে যাবার সময় বা আদালত থেকে কারাগারে ফিরবার সময়ে কেউ তাদেরকে ঐ টুপি সরবরাহ করেছে। অবশ্য তদন্ত কমিটি প্রদত্ত প্রতিবেদনে কারা কতৃপক্ষ এবং পুলিশ – সবাই তাদের জিম্মায় থাকাকালে জঙ্গীরা টুপি পরেছে এমন কথা অস্বীকার করেছে । সে যাই হোক , এ কথা তো মানতেই হবে , কেউ না কেউ , কোন না কোন সময় , কোন না কোন ভাবে ঐ টুপি দুটি (বা আরও কারও কাছে ছিল কিনা জানা যায় নি ) সরবরাহ করেছে ।
যারা সরবরাহ করেছে , মেনে নেওয়া ভাল যে, তারা আই এস এর লোক । তবে তারা সুনির্দিষ্ট ভাবে কারা তা আজও উদঘটিত হয়নি । কিন্তু গোপনে তাদের অস্তিত্ব বাংলাদেশের মাটিতে রয়েছে এবং তারা সক্রিয়ও বটে ।মামলায় যে জঙ্গীটি খালাস পেয়ে গেল তাকেও সন্দেহ করার যথেষ্ট যুক্তি আছে।
এখানে স্মর্তব্য , ২০১৬ সালে যখন হোলি আর্টিজান তান্ডব ও হত্যালীলা সংঘটিত হয়েছিল তৎক্ষনাৎ আই এস বিবৃতি দিয়ে ঘটনার দায় স্বীকার করেছিল । কিন্তু বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তখনও বলেছিলেন , আাই এস নয় বা কোন আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন নয়, দেশীয় কোন বেআইনী ঘোষিত জঙ্গী গ্রুপ যথা জে এম বি বা নব্য জেএম বি জাতীয় কোন সংগঠনভূক্ত জঙ্গীরা এই হামলার জন্য দায়ী।
আরও একটি বিষয় এ ক্ষেত্রে অত্যন্ত প্রামানিক । শুধুমাত্র হোলি আর্টিজানের ঘটনাই নয় , নানা স্থানে মন্দিরের সেবায়েত , গীর্জার পাদরি, কোথাও শিক্ষক , কোথাও বিদেশী নাগরিক , কোথাও মুক্তমনা ব্লগার – এভাবে অতর্কিত কিন্তু একই ধরনের হত্যা তো বাংলাদেশে কম ঘটেনি এবং প্রতিটি ঘটনার পর পরই আই এস তার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে।
স্মরনে আরও আনলে ভাল হয় যে হোলি আর্টিজানের বর্বর ঘটনার কিছু আগে বা পরে সিঙ্গাপুর থেকে বেশ কয়েকজন বাঙালিকে বাংলাদেশে পাঠিয়েদিয়েছিলেন তারা ঐ দেশে আই এস এর সংগঠন গড়ে তুলতে সচেষ্ট ছিল এই অভিযোগে আরও কিছু সংখ্যক বাঙালীর বিরুদ্ধে সিঙ্গাপুর সরকার সেখানকার আাদালতেই আই এস কার্যক্রমে গোপনে লিপ্ত থাকার অভিযোগে মামলা দায়ের করেছিল।

সরকার কেন এব্যাপারে স্পষ্ট করে বলছে না যে জামায়াতে ইসলামী বা ইসলামী ছাত্রশিবির বা হেফাজতে ইসলামও দেশী বিদেশী অর্থায়নে জঙ্গী উৎপাদনে লিপ্ত থাকতে পারে তা দেশবাসীর কাছে স্পষ্ট নয় । জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র সংঘ (যা স্বাধীনোত্তর কালে ইসলামী ছাত্র শিবির হিসেবে পরিচিত হয়)কি ১৯৭১ এ বাংলার মাটিতে কম হত্যালীলা চালিয়েছিল ? তারা কি আজও দেশবাসীর কাছে তাদের ঐ কৃত কর্মের দায় স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করেছে?

আবার লক্ষ্যনীয় , আই এস বা অন্য কোন জঙ্গী গ্রুপই হোক, তারা যে সকল ভয়াবহ ঘটনা একের পর এক ঘটিয়ে চলেছে তার কোন একটিরও নিন্দা বা প্রতিবাদ জানিয়ে এ যাবত কোন বিবৃতি প্রকাশ করেছে জামায়াতে ইসলামী বা ইসলামী ছাত্রশিবির বা হেফাজতে ইসলাম? না, আদৌ করেনি।এতে কি ধরে নেওয়া যায় না যে তারাও এ জঙ্গীদের সহায়ক ও পৃষ্ঠপোষক?

নিবদ্ধটির শিরোনামে একটি ফোল্ডারের কথা উল্লেখ করেছি। ফোল্ডারটি প্রকাশ করেছে কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের ৩৬ নং মিন্টো রোডে অবস্থিততাদের ক্রেন্দীয় কার্যালয় থেকে।আজ (৩ ডিসেম্বর ) সকালে ঐ রঙীন ও ঝকঝকে ছাপা ফোল্ডারটি আমার হাতে এসে পৌছায়। সম্ভবত: সংবাদপত্রের হকারদের মারফত ঐ ফোল্ডার পত্রিকার গ্রাহকদের বাড়ীতে বাড়ীতে পৌছানো হয়েছে।

ফোল্ডারটির ছাপা ঝকঝকে এবং আকর্ষনীয়। ফোল্ডারটির শীর্ষে ক্ষুদ্রাক্ষরে লেখা আছে ‘সন্ত্রাসবাদকে না বলুন’। শিরোনাম হল ‘উগ্রবাদ প্রতিরোধে করনীয়’।এতে বাংলাদেশ পুলিশের সন্ত্রাস দমন এ আন্তর্জাতিক অপরাধ প্রতিরোধ নির্মান প্রকল্প ঘোষনা করেছেন কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ৩৬ , মিন্টো রোডস্থ কার্য্যালয় থেকে ফোল্ডারটি প্রকাশিত ।

পুলিশ বিভাগের কোন প্রেস রিলিজ বা তাদের কোন প্রকাশনার প্রতি কোন প্রকার আকর্ষন ছোটবেলা থেকেই আমার নেই । কারন সেই শিশুকাল থেকেই দেখে আসছি ভাষা আন্দোরনের মত যৌক্তিক ও জনপ্রিয় আন্দোলনকেও পুলিশ নির্মমভাবে গুলি চালিয়েছে , গ্রেপ্তার করেছে, বিনাবিচারে আটক রেখেছে দেশপ্রেমিক আন্দোলনকারীদেরকে বছরের পর বছর , দেখেছি অজ¯্র শান্তিপূর্ণ মিছিলে অযৌক্তিক অভিযোগ তুলে বেপরোয়া লাঠিচার্জ করে অসংখ্য নেতা Ñ কর্মীর মাথা পাটিয়ে দিতে বা গুরুতরভাবে আহত করতে।

শুধুই কি তাই ? পূর্ববাংরার প্রথম জননেতা শেরে বাংলা এ.কে.ফজলুল হক, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে ১৯৫৪ সালে গঠিত মুসলিম লীগ বিরোধী যুক্তফ্রন্ট যখন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ক্ষমতাসীন মুসলিমলীগের নির্বাচনী অভিযানে নামল তখন জনগনের ঐ যুক্তফ্রন্টকে পরাজিত করার অঘোষিত সারা দেশের হাজার হাজার যুক্তফ্রন্ট কর্মীকে নির্বাচনের এক মাস আগে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মিথ্যা অভিযোগ গ্রেফতার করে পূর্ব বাংলার জেলগুলিকে ভরে ফেলতে পুলিশ আদৌ দ্বিধা করলনা ।এমনকি গ্রেফতার কৃতদের অনেককেই হাতকড়া পরিয়ে কোমরে দড়ি বেধে হাটাপথে সশস্ত্র পুলিশ পাহারায় জেল কানায় নিয়ে যেতেও বিন্দুমাত্র পরোয়া তারা করেনি যদিও ঐ নেতা-কর্মীরা প্রায় সকলেই ছিলেন ভাষা সৈনিক।

এ জাতীয় হাজার হাজার পুলিশী নির্যাতন তো বটেই, ১৯৫০ এ সদ্য স্বাধীন পাকিস্তানে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে যুক্তিসঙ্গত কতিপয় দাবীতে অনশনরত কমিউনিষ্ট নেতাকে ইংরেজ সুপারের নির্দেশে ঐ কারাগারের খাপড়া ওয়ার্ডে নির্মমভাবে গুলিবর্ষন করে সাতজন কমিউনিষ্ট নেতাকে হত্যা করলো-অসংখ্য বন্দীকে আহত করলো সম্পূর্ণ বে-আইনীভাবে।

নাচোলের কমিউনিষ্ট নেত্রী কমরেড ইলা মিত্রকে নারকীয় নির্য্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করতে উদ্যত হয়েছিল পুলিশ। হত্যা করতে ব্যর্থ হয়ে তাকে ঐ দীর্ঘ মেয়াদে ঐ রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক রেখেছিল । অত:পর , ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর গঠিত মন্ত্রী সভার মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা এ.কে.ফজলুল হক ইলামিত্রকে চিকিৎসার জন্য মুক্তি দিয়ে ভারতে পাঠান। অত:পর ইলামিত্র আর তার মাতৃভূমিতে আসেন নি তবে পশ্চিম বাংলার নির্বাচনে তিনি কয়েকবার বিধানসভার সদস্য নির্বাচিত হন ।
এ সকল কার্যকলাপ দেখতে দেখতে পুলিশ নিজেই সন্ত্রাসী এমন বিশ্বাস সেই শৈশব থেকেই মনে দানা বেধেছে।এর উপর অনেক পুলিশ কর্মকর্তার দুর্নীতি তো অতীতেও ছিল বর্তমানে ও আছে। তবে মাঝে মধ্যে সৎ পুলিশ কর্মকর্তা পাইনি তা নয় । সৎ কর্মকর্তা বেশ কিছু আছেন বলেই পুলিশ বিভাগ আজও তার অস্তিত্ব বজায় রাখতে পেরেছে ।

যা হোক যে ফোল্ডারটির কথা বলছিলাম সেখানেই ফিরে আসি । এটি আসলেই এ কারণেই যে জঙ্গীবাদের ব্যাপারে যে পুলিশ বিভাগ সজাগ আছে - ফোল্ডারটিতে তার নিদর্শন দেখতে পেয়ে। উগ্রবাদের সংগা দিযেই তারা শুরু করেছেন । সংগাতে বলা হয়েছে এক, সামাজিক, রাজনৈতিক কিংবা ধর্মীয় বিষয়ে চরম বিশ্বাস ধারন করা; দুই অন্যের মতামত ও বিশ্বাসের স্বাধীনতাকে গুরুত্ব না দেওয়া এবং তিন যে কোন উপায়ে নিজের বিশ্বাস ও মতামত প্রতিষ্ঠা করতে চাওয়া।

সহিংস উগ্রবাদকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলা হয়েছে, যে কোন উগ্র মতবাদ প্রতিষ্ঠায় সহিংসতার প্রয়োগকে সমর্থন বা অনুমোদন দেওয়া কিংবা তাকে সঠিক বা যৌক্তিক বিবেচনা করা। এ ছাড়া র‌্যাডিক্যালাইজেশনকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলা হয়েছে যে এটা একটা মানসিক প্রক্রিয়া যা কোন ব্যাক্তি বা গোষ্ঠীকে প্রচলিত বিশ্বাস, ধারণা বা প্রথার বিরুদ্ধে নিজস্ব মতাদর্শ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ক্রমশ সহিংস উগ্রবাদ বা সন্ত্রাসবাদের দিকে নিয়ে যায়।

কোন তরুন তরুণীরা উগ্রবাদে জড়িত হচ্ছে তার নানা কারণ হিসেবে বলা হয়েছে হতাশা, বিষন্নতা, বিচ্ছেদ বনার উপলব্ধি কিংবা কৌতুহল ও বীরত্ব প্রদর্শন; পারিবারিক অশান্তি বা বিচ্ছিন্নতা কিংবা পরিবার ও বন্ধুদের প্রভাব; সামাজিক কারণের সম্পর্কে বলা হয়েছে হঠাৎ পরিবর্তন , পরিচয় সংকট ও প্রতিশোধ স্পৃহা; রাজনৈতিক কারণ বঞ্চনা হিসেবে বলা হয়েছে রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন, আদর্শ প্রতিষ্ঠার সংকল্প। অর্থনৈতিক কারণের মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে, দারিদ্র্য, বেকারত্ব, অর্থনৈতিক বঞ্ঝনা ও শ্রেণী বৈষম্য; ভাবাদর্শগত কারণের মধ্যে আছে, ধর্মের প্রকৃত গানের অভাব ও পারলৌকিক প্রাপ্তির লোভ;আন্তর্জাতিক কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক উগ্রবাদী গোষ্ঠীর আকর্ষণীয় প্রচারনা এবং ইন্টারনেট ও অফলাইনে চিত্তাকর্ষক প্রচারপত্র/ অডিও/ভিডিও এর সহজলভ্যতা।

উগ্রবাদে জড়িত হওয়ার প্রক্রিয়াগুলি প্রসঙ্গে বলা হয়েছে :

এক. হতাশা, বঞ্ঝনা বা পারিবারিক সমস্যায় নাজুক ব্যক্তি, মুক্তির আশায় ধর্মীয় বিষয়ে আগ্রহী হওয়া;

দুই . আশে পাশে বা ইন্টারনেটে ঘাপটি মেরে থাকা উগ্রবাদে রিক্রুটারের সংস্পর্শে আসা

তিন. পুরোনো বন্ধুদের এড়িয়ে নতুন সমমনা বন্ধুদের খুজে নেওয়া এবং তাদের সাথে নিয়মিত শলাপরামর্শ করা;

চার . শর্টকাট উপায়ে পারলৌকিক প্রাপ্তির লোভে বিভোর হয়ে পড়া ;

পাঁচ. যে কোন কর্মকান্ড এমনকি, সহিংসতাকেও নিজ উদ্দেশ্যের বাস্তবায়নে সঠিক বলে মেনে নেওয়া এবং

ছয়. সহিংস উগ্রবাদী কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়া।

সহিংস উগ্রবাদে জড়িত হওয়ার নির্দেশক প্রসঙ্গে বলা হয়েছে ধর্মীয় বিষয়ে গোপন আলোচনা সভায় যোগদান বা আলোচনার করা; সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুরনো ইতিহাস মুছে ফেলা এবং ছদ্মনাম ব্যবহার করে উগ্রবাদী প্রচারনা অনুসরন এবং তা প্রচার করা। পরিবারের সদস্যদের প্রতি নিজের বক্তব্য শুনতে বাধ্য করানোর জন্য হুমকি দেওয়া;ধর্মের জন্য সহিংস কর্মকান্ডে অংশ গ্রহন করার আগ্রহ প্রকাশ করা এবং এর জন্য চেষ্টা অব্যাহত রাখা;অস্ত্র বিস্ফোরক সংগ্রহ ও তৈরীর চেষ্টা করা এবং তথাকথিত শহীদ হয়ে শর্টকাট উপায়ে অলৌকিক প্রাপ্তির আশায় ও ভূয়া পরিচয়পত্র ব্যবহার বাসা ভাড়া নিয়ে আত্মগোপন করা বা বিদেশে চলে যাওয়া ।

উগ্রবাদে রিক্রুটার প্রসঙ্গে বলা হয়েছে , ঘাপটি মেরে থাকে ও গোপনে প্রচারনা চালায়; ব্যক্তির অসহায়ত্ব দুর্বলতার সুযোগে তার প্রতি জঙ্গী সহমর্মিতা প্রকাশ করে নিজ উদ্দেশ্যে বাস্তবায়ন করা ; ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহারের উপর গুরুত্ব আরোপ করা ; শর্টকাট উপায়ে পারলৌকিক প্রাপ্তির লোভ দেখায় ; উগ্রবাদে জড়িত ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর অডিও ভিডিও বা বই এর সন্ধান দেয়া ও সন্ত্রাসী কার্য্যকলাপকে অবশ্য করনীয় বলে প্রচার করা এবং তাদের অনুসরন ও সমমনা দলে যোগ দিতে উৎসাহে প্রদান করে ।

উগ্রবাদে রিক্রুটিং যে মূলত ধর্মের নামেই হচ্ছে স্পষ্ট করে তা না বলা হলেও ইতিহাসটি তেমনই।সুতরাং সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ, ওয়াজ মাহফিল প্রভৃতির প্রতি গোয়েন্দা নজর বাড়ানো এবং জেহাদের নামে সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতা প্রর্চাকারীদের গ্রেফতার ও কঠোর শাস্তি বিধান যে একটি অবশ্য করনীয় দায়িত্ব আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলির তার প্রতিশ্রুতি না থাকলেও পুস্তিকাটি অন্তত: এটি বুঝিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশে জঙ্গীবাদীরা নানা কৌশলে ঠাই করে নিতে তৎপর।স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য ও তারই মন্ত্রনালয় থেকে প্রকাশিত ও প্রচারিত এই ফোল্ডার পাশাপাশি ধরলে মন্ত্রনালয়ের আসল উদ্বেগ সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায়। ফোল্ডারটির ব্যাপক প্রচার প্রয়োজন।

লেখক : সভাপতিমন্ডলীর সদস্য, ঐক্য ন্যাপ, সাংবাদিকতায় একুশে পদকপ্রাপ্ত।