ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » মুক্তচিন্তা » বিস্তারিত

প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাবি কোন পথে?

২০১৯ ডিসেম্বর ২৯ ১৫:৪৮:৩১
প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাবি কোন পথে?

রণেশ মৈত্র


আমি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িনি। আমার পাঠ্যজীবন পাবনা এডওয়ার্ড কলেজেই শেষ হয় বিগত শতকের পঞ্চাশের দশকে। এডওয়ার্ড কলেজ বিপুল ঐতিহ্যবাহী একটি কলেজ হিসেবে স্বীকৃত ছিল অতীতে অবিভক্ত বঙ্গদেশে।

ঐ এডওয়ার্ড কলেজে পড়াকালেই কত যে শুনতাম, মূলত: কলেজের শিক্ষকদের কাছ থেকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবগাঁথা, তার সুনাম ও ঐতিহ্যের কথা। তাই খুব ইচ্ছে হতো এডওয়ার্ড কলেজ থেকে বি.এ পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে মাষ্টার্স পড়বো-পারলে অনার্সও। উল্লেখ্য তখন এডওয়ার্ড কলেজে কি বিজ্ঞান, কি সাহিত্য কলা, কি বাণিজ-কোন বিভাগেই অনার্স পড়ার সুযোগ ছিল না।
কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দূরে থাক, বাড়ীর কাছের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগও পাই নি। সে ব্যাপারে চেষ্টাও করি নি। কারণটা সহজ-সরল। অর্থাৎ আর্থিক। বাবাকে হারাই ১৯৫৪ সালে ইন্টারমিডিয়েট পড়াকালে। টিউশানি করে পড়ালেখা চালাতাম। স্কুল বা কলেজে অবশ্য ট্যুইশন ফি দিতে হতো না। তাঁরাই নিতেন না। তাই কোন বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার বাসনা পরিত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলাম।

তবে হ্যাঁ, রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে বা তার ক্যাম্পাস পর্য্যন্ত ঢুকতে না পারলেও রাজশাহী যেতে হয়েছে বা যাওয়ার সুয়োগ পেয়েছি বহুবার। গন্তব্যস্থল ছিল রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার। সেখানে বিনাবিচারে আটক থাকতে হতো বছরের পর বছর। অপরাধ ছিল পূর্ব পাকিস্তান (আজকের বাংলাদেশ) ছাত্র ইউনিয়নের অন্যতম নেতা হিসেবে ভাষা আন্দোলনের অভিজ্ঞতায় গণতান্ত্রিক আন্দোলনগুলিতে পাবনায় অন্যতম নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করা।

যে কার রাজশাহী থেকে ছাড়া পেতাম রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে সরাসরি চলে রাজশাহী শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত, বহু গৌরবান্বিত ইতিহাসের ধারক ভূবন মোহন পার্কের বিপরীত দিকে একটি দোতলা দালানের উপরতলায় অবস্থিত ছাত্র ইউনিয়ন কার্যালয়ে। সেখানে দলীয় সম্বর্ধনা শেষে ভূবন মোহন পার্কে গণ সম্বর্ধনা। অত:পর পাবনা প্রত্যাবর্তন ট্রেন যোগে।

ট্রেনযোগে বা বাসে চড়ে বন্দী বা মুক্ত মানুষ হিসেবে যতবারই রাজশাহী গিয়েছি-ততবারই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় তার হলগুলি, শহীদ মিনার বিশাল ক্যাম্পাসের অংশ বিশেষের প্রতি আপন মনেই চোখ দুটি নিবন্ধ হতো। মহিহারের সেই অঙ্গনও ছিল নানা দিক থেকে গৌরবমন্ডিত। আরও ভাল লাগতো এ কারণে সে কালের উত্তরবঙ্গের ছাত্ররা ছাত্ররা অর্থাৎ আমরাই আন্দোলন করে ঐ বিশ্ববিদ্যালয়টি চাই”, “উচ্চ শিক্ষার সুযোগ চাই” ইত্যাদি দাবীতে ছিল ঐ আন্দোলনটি। তাই লোভ হলেও সুযোগ ঘটতো না রাজশহী বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঢোকার।

এবাবে শুধুই অনুভব করতাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্তিত্ব। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়? সে তো অনেক দূরে অবস্থিত। তখন যমুনা সেতু হয় নি। তাই পাবনা থেকে ঢাকা যেতে সময় লাগতো প্রায় ২৪ ঘন্টা। যেতাম বাসে প্রথম ঈশ্বরদী পাবনা থেকে বেলা ১১ টার দিকে রওনা হয়ে। অত:পর রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী ট্রেনে ঈশ্বরদী জংশন থেকে ঢাপকার দিতে যাত্রা। সিরাজগঞ্জ ঘাট ষ্টেশনে পৌঁছে ট্রেন থেকে নেমে ও পারে জগন্নাথগঞ্জ ঘাট পর্য্যন্ত যেতে হতো যমুনা নদী দিয়ে বিশাল ষ্টীমারে চড়ে। জগন্নাথগঞ্জ ঘাট ষ্টেশনে ঢাকাগামী ট্রেন অপেক্ষা করতো। সেই ট্রেনে চড়ে সারা রাত জেগে বেলা ৮টা নয়টার দিকে ঢাকায় তখনকার ফুলবাড়িয়া ষ্টেশনে এসে ট্রেন থেকে নামতে হতো। এভাবে ২৪ ঘন্টা না হলেও ২০-২১ ঘন্টা অবশ্যই লেগে যেতো। ধকল কম সহ্য করতে হতো না।

কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতাম। ভর্তি হতে না পারলেও শুধুমাত্র যেতাম তাই নয় তার ক্যাম্পাসে যেতেই হতো বাড়ীর আনন্দ, উৎসাহ ও গর্বের সাথেই। গর্ব এ কারণে যে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সহ-সভাপতি হিসেবে, তার আগে অন্যতম সদস্য হিসেবে ছাত্র সমাজের দাবী-দাওয়া এবং জাতীয় সমস্যাগুলি নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলার নীতিগত ও কৌশল গত কর্মসূচী নির্ধারন করার উৎসাহে কখনও ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কখনও বা মধুর রেস্তোঁরায় বৈঠক করতে। থাকতে হতো সহকর্মীদের সাথে সাধারণত: ফজলুল হক মুসলিম হলে সহকর্মীদের রুমে।
একবার দুবার না-যেতে হয়েছে অনেকবার সম্মানে-গর্বটা এখানেই।

আর তো ছিল সেকে- হোম ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার-যেকানে সারা প্রদেশের প্রবাদ প্রতিম ত্যাগীও নিষ্ঠাবান বিজ্ঞান চেতনায় উদ্বুদ্ধ প্রবীন বামপন্থী নেতাদেরকে বছরের পর বছর বিনাবিচারে আটকে রাখা হতো। তাঁদের সান্নিধ্যও ছিল শিক্ষণীয়।

যা হোক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ব্যক্তিগত জীবনের লম্বা প্রেক্ষাপট বলতে হলো। সেদিনের ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে যেমন হতো পড়াশুনা-তেমনই হতো ছাত্র সমাজের নানাবিধ ন্যায্য দাবী দাওয়া আদায়ের কর্মসূচী নিয়ে। আন্দোলন করেছি পাক-মার্কিন সামরিক চুক্তি এবং সিয়াটো ও সেন্টো চুক্তি বাতিল, পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ণ স্বায়ত্ত শাসন প্রভৃতি বিদেশ নীতি ও বিদেশ সংশ্লিষ্ট কিন্তু দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার দাবী নিয়ে।

তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সমাজ যাঁরা ১৯৪৮ ও ১৯৫২ তে মাতৃভাষার মর্য্যাদা রক্ষার জন্য ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন করেন বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবী আদায় করেছন-তাঁদের অনেকের সাহসী পদচারণা ও কারও কারও আত্মদানের ফলে জাতীয় আন্তর্জাতিক পর্য্যায়ে একটি দুর্লভ মর্য্যাদা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল।

তখন যাঁদেরকে ডাইস চ্যান্সেলর হিসাবে, যাঁদেরকে শিক্ষাক-শিক্ষয়িত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হতো তাঁদেরর শিক্ষাদান এবং বিষয় সমূহের উপর দখল ছিল আশ্চর্য্য ধরণের। ছাত্র বান্ধব ছিলেন স্বদেশ প্রেমিকও তাই তখনকার ছাত্র আন্দোলনকারীরা পেতেন শিক্ষকদের নৈতিক এবং অনেক ক্ষেত্রে বৈষয়িক সহযোগিতাও।

আজ যখন ঢাক তখনকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) এর কথা, তখন এক গৌরবোজ্জ্বাল অতীতের কথাই স্মরণে আসে। ডাকসুতে নির্বাচিত হতেন কখনও জনপ্রিয় ছাত্র নেতারা-কখনও বা জনপ্রিয় ছাত্রলীগ নেতারা। ডাকসুর নেতারা ছাত্র আন্দোলনে বিশেষ মর্য্যাদার অবস্থান পেয়ে যেতেন। আর দলমত নির্বিশেষে সকলের অকুণ্ঠ সমর্থন পেতেন অবিতর্কিত এক মর্য্যাদাকর এক বিশেষ অবস্থান।

শুধুমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের ভোটে নির্বাচিত হলেও সারা দেশের অপরাপর সংসদ ও জেলা সমূহের এবং কেন্দ্রীয় নানা ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সমবায় টিম গঠন করে সারা দেশ সফর করে বেড়িয়েছেন ডাকসু নেতৃবৃন্দ। এভাবে ডাকসুর ভি.পি.জি.এস’রা হয়ে দাঁড়াতেন দেশের তরুণ নেতৃত্বেরই শুধু নন-ভবিষ্যতের জাতীয় নেতৃত্বের প্রতিচ্ছবি।

সেই ডাকসুর নির্বাচন স্থগিত করে রাখা হয়েছিল প্রায় দুটি যুগ। এই দুই যুগ ডাকসু নির্বাচন স্থগিতের কারণ হিসেবে মোটামুটি ধারণা দেওয়া হতো সন্ত্রাসমুক্ত শিক্ষাঙ্গন গড়ার আর কোন বিকল্প নেই ডাকসু নির্বাচন স্থগিত রাখা ছাড়া। দেশের প্রকৃত গণতান্তিক শক্তি সমূহ ভিন্নমত প্রকাশ করতেন। তাঁদের বক্তব্য ছিলো সন্ত্রাস মুক্ত শিক্ষাঙ্গন গড়তে হলে তার বিরুদ্ধে সংগটিত ছাত্র সমাজকে নিয়ে লড়তে হবে। আর সেই লড়াই এ নেতৃত্ব দিতে পারেন শুধুমাত্র তাঁদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই। আর এই প্রক্রিয়া পরিচালনার মূল শক্তি আদর্শনিষ্ঠা ছাত্র সংগঠন যা আমরা পঞ্চাশ-ষাটের দশকে দেখেছি।

প্রকৃষ্ট উদাহরণ ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাসে আছে। আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসেই। তখন গভর্নর মোনায়েম খানের যুগ। ছাত্র সমাজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে নানা ইস্যুতে মুসলিম লীগ বিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলে তাঁরা গদীর নিরাপত্তা অনিশ্চিত করে তুলছিল দেশে আতংকিত মোনায়েম খান অর্থের বিনিময়ে গড়ে তুললেন ছাত্র ফেডারেশন নামক এক সন্ত্রাসী চক্র অস্ত্র সজ্জিত। এই সংগঠনের উপর দায়িত্ব বর্তেছিল ছাত্র ইউনিয়ন ছাত্রলীগ পরিচালিত আন্দোলনগুলি সান্তভাবে প্রতিরোধ করার বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা ভীতির রাজত্ব গড়ে তোলা।

আসলেই ছাত্র ফেডারেশন যৌক্তি বহু আন্দোলনের পিঠে ছুরিকাঘাত করছিল প্রগতিকামী ছাত্র নেতাদের জীবনের নিরাপত্তা অনিশ্চিত করে তুলছিল। এমন কি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হয়েও তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিমনা শিক্ষকদের উপরও হামলা চলছিল। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ছাত্র সংগঠন, সাধারণ ছাত্র সমাজ ও শিক্ষকেরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিরন্ত লড়াই চালিয়ে ছাত্র ফেডারেশন নামক গুন্ডাবাহিনীকে বিশ^বিদ্যালয় এবং তার আবাসিক ছাত্রগুলি হল থেকে তাড়িয়ে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শান্তির পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হন।

এই ইতিহাস প্রমাণ করে যে আদর্শনিষ্ট ছাত্র সংগঠন, ডাকসু এবং হলগুলিতে নির্বাচিত সংসদের প্রয়োজন। বর্তমানে কি সরকারে, কি রাজনৈতিক দলগুলির নেতৃত্বে সাবেক ছাত্র নেতারাই রয়েছেন এবং দেশ বা রাষ্ট্র পরিচালনায়ও ভূমিকা রাখছেন।

কিন্তু এমন অভিজ্ঞতার পরেও দীর্ঘকাল যাবত শিক্ষাঙ্গনসমূহে ছাত্র সংগঠন সমূহের অস্তিত্ব নিরুৎসাহিত করা হচ্ছিল ডাকসু নির্বাচন ও স্থগিত রাখা হয়েছিল। পরিণতিতে কি বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে, কি রাজনৈতিক এক অস্বাভাবিক অগণতান্ত্রিক পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে এবং ঘটেছে সন্ত্রাসবাদের উত্থান।

এমনই এক মুহুর্তে একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন উৎসবে ভাষণ দিতে গিয়ে ডাকসু নির্বাচন হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন। অত:পর ডাকসু সহ পূর্বের মত সকল শিক্ষাঙ্গনে ও ছাত্রাবাসে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবী ক্রমন্বয়ে জোরদার হতে থাকে। এক পর্র্য্যায়ে এসে ডাকসুর নির্বাচন অনুষ্ঠিতও হলো। নির্বাচনে ছাত্রলীগ নিজস্ব ব্যানারে, ছাত্র ইউনিয়ন এবং অপর বামছাত্র সংগঠন সমূহ ঐক্যবদ্ধভাবে এবং সাধারণ ছাত্র সমাজ নামে নূরের নেতৃত্বে অংশগ্রহণ করে। নির্বাচনী ফলাফলে জি.এস. সহ সকল আসনে ছাত্রলীগ প্রার্থীরা বিজয়ী হলেও ভি.পি’র মত সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদটি বিরাট সংখ্যক ভোটের ব্যবধানে জিতে নিয়েছেন সাধারণ ছাত্র সমাজ এর নূরু যিনি কি রাজনৈতিক কি ছাত্র সংগঠনে সম্পূর্ণ অপরচিত একটি নাম। তার আদর্শিক চিন্তাধারা সম্পর্কেও কেউ অবহিত ছিলেন না আজও নন।

দেখা গেল, অতীতের আদর্শিক সংগঠন ছাত্রলীগ জি.এস. সহ সবগুলি আসনে জেতার পরও ভি.পি নূরকে সহ্য করতে রাজী নয়। পদে পদে বাধা দেওয়া থেকে শুরু করে এমন কি সন্ত্রাসী হামলা পর্য্যন্ত করতে ছাত্রলীগ প্রস্তুত।

কিন্তু আমরা সবাই জানি, ছাত্র লীগের প্রধান উপদেষ্টা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বয়ং। তিনি বারংবার শুদ্ধি অভিযান চালালেও এবং কোন কোন পদ থেকে ছাত্রলীগের কোন কোন কেন্দ্রীয় নেতকে তাঁর পদ থেকে অপসারণ করালেও ডাকসুতে নির্বাচিত ছাত্রলীগ নেতারা সন্ত্রাসপন্থী পদক্ষেপ নিতে আদৌ নিবৃত্ত হচ্ছে না।

সম্প্রতি নূরু ও তার সঙ্গী সমর্থক সহকর্মীদের উপর যে ভয়াবহ সন্ত্রাসী তা-ব ঘটালো চাত্রলীগ ও ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’ নামে বেনামী ছাত্রলীগরা তাতে নূরু সহ কারও কারও জীবন এখনও পূরোপূরি আশংকামুক্ত নয়। অনেকেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আজ প্রায় এক সম্পাতহ হলো। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি জানামাত্র আদেশ দিলেন নূরুর উপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে সরকার। অত:পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করলেন।

কিন্তু মূল সমস্যা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বয়ং ভাইস চ্যান্সেলারকে নিয়ে। অভিযোগ বহু মহলের যে ভাই চ্যান্সেলার স্বয়ং সশস্ত্র ছাত্রলীগারদের উপদেষ্টাতুল্য কাজ করছেন এবং প্রশাসন বা রাষ্ট্রে সর্বোচ্চ মহল থেকে তাঁর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় ঐ সন্ত্রাসী বাহিনীর ছাত্র লীগের নেতৃত্বে থেকে এমন ঘটনাবলী ঘটাতে সাহস পাচ্ছে। এবারই শুধু নয় নূর ও তার সমর্থকদের উপর ছাত্রলীগ এ যাবত নয় বার সশস্ত্র আক্রমণ পরিচালনা করেছে কিন্তু কোন বিচার হচ্ছে না। বিচারের বানী নীরবে নিভৃতে কাঁদে যদিও ব্যাপক ছাত্রসমাজ, অপর সকল ছাত্র সমাজ, শিক্ষকম-লী এবং অভিভাবক সমাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরেদর নিরাপত্তার দাবীতে আন্দোলন, সমাবেশ, মিছিল ও মানববন্ধন করে চলেছেন।

তাই আজকের ভাবনা, এখনও কি ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়কে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলে অভিহিত করা যাবে?
অথবা প্রশ্ন জাগে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আজ কোন পথে?

লেখক : সভাপতিমন্ডলীর সদস্য, ঐক্য ন্যাপ, সাংবাদিকতায় একুশে পদকপ্রাপ্ত।