ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রচ্ছদ » দেশের খবর » বিস্তারিত

খুলনা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের গতি ফিরছে

২০২০ জানুয়ারি ১৯ ১৭:৪৭:৩১
খুলনা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের গতি ফিরছে

খুলনা প্রতিনিধি: খুলনায় ৩৩০ মেগাওয়াট ডুয়েল-ফুয়েল কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের নির্মাণ কাজে গতি ফিরেছে। এক দফা সময় বৃদ্ধির পর প্রকল্পের কাজে গতি এসেছে। এর আগে নানা কারণে প্রকল্পের কাজে ধীরগতি চলছিল। সে কারণে প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে খুলনা বিদ্যুৎকেন্দ্রের অভ্যন্তরে নির্মাণাধীন এই প্রকল্পের ২০ দশমিক ৩৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি গ্যাস এবং জ্বালানি তেল দুটোতেই চলবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে খুলনা বিদ্যুৎ কেন্দ্র পুনরুজ্জীবিত হবে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, প্রকল্পের নির্মাণ কাজ চলছে পুরোদমে। কোথাও পাইলিংয়ের কাজ চলছে। আবার কোথাও পাইলিংয়ের কাজ শেষে ফাউন্ডেশনের কাজ চলছে। কোথাও কোথাও ফাউন্ডেশনের কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্প এলাকায় ৩টি ফুয়েল ট্যাংকের বেইজমেন্টের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সাবস্টেশনের পাইলিংয়ের কাজ শেষ, এখন পাইলক্যাপ বসানোর কাজ চলছে।

ওয়ার্কশপ ও ওয়াটার হাউজ এবং কুলিং টাওয়ারের পাইলিং কাজ শেষ হয়েছে। রিভার্স অসমোছিস (আরও) প্লান্টের পাইলিং শেষে ফাউন্ডেশনের কাজ চলছে। ২টি ওয়াটার ট্যাংকের বেইজমেন্টের কাজ শেষ। এছাড়া কেমিক্যাল ল্যাবরেটরির ফাউন্ডেশন শেষ। প্রকল্প এলাকায় নির্মাণ হবে ইনটেক ওয়াটার পাম্পের হাউজ ট্যাংক এবং গ্যাসের রেগুলেটিং এ্যান্ড মিটারিং স্টেশন।

প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইসিবিএল’র প্রকল্প সমন্বয়ক মোঃ তাহের জানান, প্রকল্পের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। নকশা অনুযায়ী কাজ চলছে কিনা, মালামাল ঠিকমত আসছে কিনা এবং কাজের গুণগত ঠিকমতো আছে কিনা তা তদারকি করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ সন্তোষজনক বলে তিনি জানান।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৬ সালের ৩ আগস্ট খুলনায় একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০১৬ সালের ১৭ নভেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পিডিবির চুক্তি হয়। ২০১৮ সালের ১০ ডিসেম্বর চায়না এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে পিডিবির ঋণ চুক্তি হয়। রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টি চুক্তি হয় চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি। আর চুক্তি কার্যকর হয় ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল। ফলে প্রকল্পের নির্মাণ কাজে ধীরগতি দেখা দেয়। ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট জমিতে থাকা স্থাপনা ভাঙার কাজ শুরু করে। প্রকল্প এলাকায় পাইল টেস্টের জন্য বোরিং শুরু হয় ২০১৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর। যা শেষ হয় ৮ অক্টোবর। আর পাইল টেস্ট শুরু হয় ৭ নভেম্বর। পাইল টেস্ট শেষ হয় ২০১৯ সালের ৬ জানুয়ারি। আর একই বছরের ২৭ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে পাইল বোরিংয়ের কাজ শুরু হয়।

এ প্রকল্পটির নাম ‘খুলনা ৩৩০ মেগাওয়াট ডুয়েল-ফুয়েল কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প’। যা গ্যাস বা ডিজেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম হবে। গ্যাসে চললে এটি থেকে ৩৫৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে। এ প্লান্ট স্থাপনের কাজ করছে চীনের ‘কোম্পানি কনসোর্টিয়াম অব হারবিনং ইলেকট্রিক ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড এবং জিয়ানশু ইটার্ন কোম্পানি লিমিটেড’।

এদিকে ২০১৯ সালের ১৮ জুন প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয় গত জুনে। যা ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে ৬৬৫ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। আগে ব্যয় ধরা ছিল ৩ হাজার ২৫৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৯১৯ কোটি ২৫ লাখ টাকায়। মোট ব্যয়ের মধ্যে বৈদেশিক সহায়তা ২ হাজার ৩৭০ কোটি ৪১ লাখ টাকা, জিওবি ১ হাজার ৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। বাকি ৫৪৫ কোটি ২০ লাখ টাকা দেবে পিডিবি।

খুলনা ৩৩০ মেগাওয়াট ডুয়েল-ফুয়েল কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মোঃ জাহিদ হোসেন জানান, গত বছরের ২৭ আগস্ট খুলনার গোয়ালখালিতে প্রকল্প এলাকায় পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়। এখানে ২৪ একর জায়গা জুড়ে দু’টি ভাগে কাজ চলছে। একটি প্লান্ট নির্মাণ, অপরটি আবাসিক ও দপ্তর নির্মাণ। প্লান্টের জন্য ১৭ দশমিক ০৪ শতাংশ এবং আবাসিকের জন্য ৭ একর জমিতে নির্মাণ কাজ চলছে। প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ২০ দশমিক ৩৬ শতাংশ। আর আর্থিক অগ্রগতি ১৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ। প্রকল্প এলাকায় ১ হাজার ১৬৫টি পাইলিং করা হবে। যার মধ্যে ৮৫৬টি পাইলিং কাজ সম্পন্ন হয়েছে। টার্গেট অনুযায়ী কাজ চলছে।

তিনি জানান, প্রথমে আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুল ভবন নির্মাণ করেছি। তিন তলা একটি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বিদ্যালয়ের ক্লাস শুরু হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে খুলনা বিদ্যুৎকেন্দ্র পুনরুজ্জীবিত হবে।

প্রসঙ্গত, নগরীর গোয়ালখালি এলাকায় খুলনা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে ১১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ইউনিট স্থায়ীভাবে বন্ধ রয়েছে। ইতোপূর্বে ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ইউনিট বন্ধের পর সব স্থাপনা অপসারণ করা হয়েছে।

(ওএস/পিএস/জানুয়ারি ১৯, ২০২০)