ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রচ্ছদ » মুক্তচিন্তা » বিস্তারিত

বর্তমান সরকারের একুশে পদক ও স্বাধীনতা পদক নৈড়াজ্য থেকে কবে মুক্তি পাই?

২০২০ ফেব্রুয়ারি ২২ ১৫:১৯:০১
বর্তমান সরকারের একুশে পদক ও স্বাধীনতা পদক নৈড়াজ্য থেকে কবে মুক্তি পাই?

মানিক বৈরাগী


"বাঙালির শুদ্ধ নাম শেখ মুজিবুর রহমান "এই অমর পঙতির স্রষ্টা কবে স্বাধীনতা পদক পাবে পাঞ্জেরি" ২০ ফেব্রুয়াির ২০২০অনলাইন পোর্টাল গুলোর মাধ্যমে জানলাম এবারের স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্তদের নাম। নামের তালিকা দেখলাম তাদের প্রচারিত খবরে। আমি তন্নতন্ন করে একটি নাম খোঁজ করছি প্রতিটি শব্দে বাক্যে। পেলাম না। সাহিত্য ও মুক্তিযুদ্ধের সাহিত্যে যাদের নাম দেখলাম, দেখে বড়ই হতাশ হলাম মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পুরুষ্কার কমিটির বিবেচনা দেখে।

আমি ব্যক্তিগত ভাবে এইবার আশাবাদী ছিলাম ষাট দশকের শিক্ষা আন্দোলনের অন্যতম ছাত্রনেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা। যিনি চট্টগ্রামে যদি ছাত্র যুব ও সংস্কৃতি, লেখক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষকদের সংগঠিত না করতেন তাহলে আজকে যারা চট্টগ্রামের বড়ো বড়ো বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ মুক্তিযোদ্ধা দাবিদার এসবই তার অবদান। সেই মহৎ মহান বীর মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষাবিদ, কারা নির্যাতিত, সামরিক সরকার কতৃক নিপিড়ীত কবির নামটি অন্তত দেখবো খুব আশায় ছিলাম। কিন্তু পুরুস্কার দুর্বৃত্তায়ন পুরুষ্কার ব্যবস্থাপনার কারণে এবার তার নামটি এলো না।

সদ্য স্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধু যখন ক্ষমতায় তখনো কবি শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠিত কবি।তখন এই সময়ের কতো রথি-মহারথিদের তার পেছন ছাড়েননি। জাতির পিতার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার পরও নিজের আখের গুছায়নি। চাইলে তিনি তখনই ক্ষমতাকে ব্যবহার করে এই ঢাকা শহরে কবিতা ব্যবসা, মুক্তিযুদ্ধ ব্যবসা করে অঢেল সম্পদের মালিক হতে পারতেন। তিনি হননি।

এরশাদ ক্ষমতায় আসার এরশাদের বিরুদ্ধে কবিতার যে আন্দোলন সেই আন্দোলনের অনন্য প্রতিকৃত, জাতিয় কবিতা পরিষদের স্রষ্টা কবি মোহাম্মদ রফিক।

তো কথা হচ্ছে কবি মোহাম্মদ রফিক কি নাদানের মতো বক্তৃতা, বিবৃতি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুরুষ্কার চেয়ে হাক ডাক করবে নাকি?

পুরুষ্কার কমিটিতে যারা আছেন তারা কি কবি মোহাম্মদ রফিককে চিনে না? সে কে কি কেন এসব চিল্লাই চিল্লাই প্রেস ক্লাবের সামনে দাঁড়াবে না-কি?

প্রশ্ন হচ্ছে কবি মোহাম্মদ রফিক এর সাহিত্য লড়াই সংগ্রাম মুক্তিযুদ্ধ, ষাটের শিক্ষা আন্দোলন, এরশাদ বিরোধী আন্দোলন, জাতিয় কবিতা পরিষদ গঠন, যুদ্ধাপরাধী ও গোলাম আজম বিরোধী ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটি গঠন করাই কি তার অপরাধ।

কেউ কি বলতে পারবেন নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য যে সরকার আসে সেই সরকারের জন্য লিখে দিতে সুন্দর শ্লোগান, সরকার প্রধান কবিতা, বা ঢাকা শহরে কয়েকটি প্লটের আবেদন। দেখাতে পারবেন কেউ?

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে বাঙালির স্বপ্নদ্রষ্টা সে বিষয়টি ও প্রথম আঁচ করতে পেরেছিলেন কবি মোহাম্মদ রফিক। কবি সম্পাদক হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ড.মোহাম্মদ হান্নানের ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাসেই তো উল্লেখ আছে কবি মোহাম্মদ বঙ্গবন্ধু কে নিয়ে প্রথম কবিতা লিখে লিফলেট আকারে প্রকাশ করার কারনে গ্রেফতার হন। গ্রেফতার তাকে রাজশাহী কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।প্রিয় পাঠক ও সমালোচকেরা এ লেখাটি পাঠস্মৃতি থেকে লেখা, প্রয়োজনে উল্লেখিত বই গুলোতে আপনারা যাচাই বাছাই করতে পারেন।

বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রথম ধাপে যে ক'জন কবি প্রথম কবিতা লিখে প্রতিবাদ করে কবিতা লেখেন তার মধ্যে রফিক অন্যতম। তিনি লিখলেন "বাঙালির শুদ্ধনাম শেখ মুজিবুর রহমান " এ কবিতাটি কবি সম্পাদক বেবি মওদুদ সম্পাদিত সংকলনে আছে। এবং বেবি মওদুদই প্রথম বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা কবিতার সংকলক ও সম্পাদক। কবি রফিকের এ কবিতার লাইনের আদলে অকৃতদার কবি বীর মুক্তিযোদ্ধা ত্রিদিব দস্তিদার লেখেন "বাঙালির অপর নাম শেখ মুজিবুর রহমান "।

আমরা যারা এরশাদ বিরোধী আন্দোলন ও বেগম খালেদা জিয়া যখন ১৫ আগস্টে জন্মদিন পালন করে এই লাইন দুটি দেয়ালে দেয়ালে কতো চিকা মেরেছি, শ্লোগানে শ্লোগানে কন্ঠে ধারণ করে জঙ্গি মিছিল করেছি।

পঁচাত্তরের পর খন্দকার মোহাম্মদ ইলিয়াসের নেতৃত্বে মুজিব হত্যার বিরুদ্ধে প্রথম মিছিল সংগঠিত হয় ও কমিটি গঠন হয় সেই মিছিলের অন্যান্য উদ্যোগতার মধ্যেও কবি রফিকের ভূমিকা কে কেউ কি অস্বীকার করতে পারবে।

ঠিক একি ভাবে বর্তমান মুক্তিযুদ্ধের সরকার দাবিদার তাদের পুরুষ্কার নৈরাজ্যে সব সময় অবহেলা অবজ্ঞা তুচ্ছ জ্ঞান করেছে প্রেম ও দ্রোহের কবি ত্রিদিব দস্তিদার কে।

যার কবিতার একটি লাইন " ভালোবাসতে বাসতে ফতুর করে দিবো"।এ পর্যন্ত এ কবিকে এখনো পর্যন্ত বর্তমান সরকার মরনোত্তর কোন সম্মাননা, পদকে সম্মানিত করা হয় নি।

আমার প্রশ্ন হচ্ছে আমলা ও কতিপয় লেজুড় ধান্দাবাজ লোকদারা গঠিত কমিটি আর কতো অপকর্মে লিপ্ত থাকলে দেশ জাতি স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধের মুজিব প্রেমি মানুষ অবজ্ঞা অবহেলা অসম্মান করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর তনয়া দেশরত্ন শেখ হাসিনার মানুষ গুলো কে হতাশার অন্তরালে ঠেলে শেখ হাসিনার সোনার বাংলার সাংস্কৃতিক বলয় ধ্বংস করে কান্ত হবেন? এসবও কি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেখতে হবে, নির্দেশ দিতে হবে?

মূলত এসব কারনে বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা কে শ্রদ্ধা ভালোবাসালেও চরম হতাশ।আসুন না এই মুজিব বর্ষে অন্তত ভালো কাজ টুকু করি। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু। আমেন।

লেখক :কবি ও নব্বইয়ের নির্যাতিত প্রগতিশীল ছাত্রনেতা, কক্সবাজার।