ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » সম্পাদকীয় » বিস্তারিত

বাংলাদেশ গিলে খাবে ডাইনিরা, তাই কী হতে দেওয়া যায়!

২০২০ ফেব্রুয়ারি ২৬ ০০:০৩:২৪
বাংলাদেশ গিলে খাবে ডাইনিরা, তাই কী হতে দেওয়া যায়!

প্রবীর সিকদার


এতো ক্ষোভ এতো হতাশার পরও আমার ভরসা এখনো শেখ হাসিনা ও আওয়ামীলীগ! যখন ক্ষোভ ও হতাশার মাত্রাটা বাড়ে, তখন মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকালেই দেখি আরও অন্ধকার! ক্ষোভ ও হতাশাকে তখন শক্তিতে পরিণত করে আবার আশার আলো খুঁজে বেড়াই শেখ হাসিনা ও আওয়ামীলীগের ভেতরেই!

আমার এই অবস্থান কিংবা পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষায় আবার ঘুরে দাঁড়ানোর অবলম্বন হিসেবে শেখ হাসিনা ও আওয়ামীলীগকে আঁকড়ে ধরার প্রয়াসের এই ধারায় আমার বন্ধুদের অনেকেই ঠিক ঠিক আশাবাদী হতে পারছেন না! যারা এই আশাবাদী না হওয়ার যন্ত্রণা পুষে বেড়াচ্ছেন তারা কেউ শত্রু নয়; তারাও ভালোবাসেন বঙ্গবন্ধু আওয়ামীলীগ ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে! তাদের এই আশাবাদী না হওয়ার যন্ত্রণা বড় গভীর! আমি এদের অনেককেই আবার আশাবাদী হতে আবেদন করেছি, অনেককে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য উপযুক্ত শব্দ বাক্য পাচ্ছি না! সবার এক কথা, দেশের মানুষ অন্ধভাবে শেখ হাসিনাকে শুধু সমর্থন দেয়নি, শেখ হাসিনার জন্য দুই হাত তুলে সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়াও করেছেন! সময়টা কম নয়, ১০ বছর পার করে ১৫ বছরের পথে এগিয়েছে অনেকটাই! তারপরও শেখ হাসিনাকে কেন শক্তিশালী মনে হচ্ছে না, সেই বিষয়টি বড় হতাশার। টানা দীর্ঘ সময় আওয়ামীলীগ ক্ষমতায়, অথচ সারাদেশে দলটি রয়েছে ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে অবস্থায়! দেশে এমন অনেক কিছুই হচ্ছে, যা বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামীলীগের আদর্শের সাথে যায় না! দলের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুকন্যা, তারপরও দল লাগামহীন, ত্যাগী নেতা কর্মী সমর্থককে হটিয়ে দলের স্টিয়ারিং হাইব্রিডদের হাতে; এই যন্ত্রণা কী ভুলে যাওয়া সম্ভব! দেশজুড়ে উন্নয়নের মহোৎসব চলছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। অথচ এই উন্নয়নের অন্তরালে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা নয় ছয় হচ্ছে। লুটেরারা বীরদর্পে লুটপাট চালিয়েই যাচ্ছে; যেন বাংলাদেশটি শুধুই তাদের লুটপাটের কারখানা! শেখ হাসিনা সেই লোপাটের বিরুদ্ধে গর্জে উঠছেন, মানুষ আশাবাদী হয়ে উঠছে; কিন্তু শেখ হাসিনার হাত সম্রাট কিংবা পাপিয়ার উপরে আর উঠতে পারছে না! মানুষ আবার হতাশ হয়ে দুমড়েমুচড়ে পড়ছে! আওয়ামীলীগের প্রাণভোমরা যে সাধারণ মানুষ, তারা কিছু বুঝেই উঠতে পারছেন না, শেখ হাসিনার সংকট কোথায়!

বঙ্গবন্ধু আওয়ামীলীগ ও শেখ হাসিনাকে বড় বেশি ভালোবাসি বাংলাদেশকে গভীরভাবে ভালোবাসি বলেই! যারা রাজনীতির সাথে আছেন কিংবা যারা সরকার পরিচালনায় ভূমিকা রাখছেন কিংবা যারা লুটেপুটে সাবাড় করছেন সব, তাদের অনেকেরই দেশের বাইরে বাড়ি সম্পদ রয়েছে; তাদের আর এই বাংলাদেশ না হলেও চলবে! কিন্তু আমরা যারা সাধারণ মানুষ, ভালোবাসি বঙ্গবন্ধু আওয়ামীলীগ শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশকে, তাদের তো আর অভাগা এই ভূখণ্ড ছাড়া আর কোনও ঠিকানা নেই! সেই আমজনতা আমরা কোথায় থাকবো, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে কোথায় রেখে যাবো, এই প্রশ্ন তো শুধু আহত করে না, বিপর্যস্ত করে দেয় অন্তরাত্মাকে! সেই অন্তরাত্মার বিপর্যয় দশা কাটাতে আমাদের ঘুরে দাঁড়ানো ছাড়া আর পথ কোথায়! আমরা হতাশ হয়ে ঘরে ঢুকে গেলে, আমাদের সন্তানরা কোথায় দাঁড়াবে, বাসের অযোগ্য এই লুটেরাকবলিত বাংলাদেশে? অবশ্যই না! ঘুরে দাঁড়াবো আমরাই; এমনও তো হতে পারে শেখ হাসিনা আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর অপেক্ষাতেই সময় পার করছেন! আমরা ঘুরে না দাঁড়ালে যে বঙ্গবন্ধুর পুরো বাংলাদেশটিই পণ্ড হয়ে যাবে!

স্বপ্ন ভাঙার যন্ত্রণায় কাতর আমার বন্ধু স্বজন সহযোদ্ধা, সকলের কাছে একটি বহুল প্রচলিত পুরনো গল্পের অবতারণা করেই আজকের এই হতাশাকে ক্ষোভ-শক্তিকে রূপান্তরের আকাঙ্ক্ষার বয়ান শেষ করবো।

এক গ্রামে একটি মাত্র সন্তান নিয়ে দুই মায়ের রশি টানাটানি। এক মা বলছেন, এই সন্তান আমার; আর এক মা বলছেন, সন্তান আমার। এটা নিয়ে অনেক দরবার শালিস হয়েছে, বিবাদের কোনও সুরাহা হয়নি। তৃতীয় একটি পক্ষের কাছে সন্তান রয়েছে; কোনও মায়ের কোলেই ওই সন্তানটিকে দেওয়া যাচ্ছে না। একদিন ওই গ্রামে একজন দরবেশ এলেন। তাকে দেখে গ্রামের মানুষের খুব ভক্তি হল। গ্রামবাসীরা ওই বাচ্চাটিকে নিয়ে ওই দরবেশের কাছে গেলেন। ডাকা হল ওই বাচ্চার দাবিদার দুই মাকেও। সবার মুখে সবকিছু শুনলেন দরবেশ। তারপর দরবেশ গ্রামবাসীকে একটি ধারালো রামদা আনতে বললেন। ধারালো রামদা আনা হলে দরবেশ বললেন, দুইজনই যখন এই বাচ্চার দাবিদার, তাই রামদা দিয়ে বাচ্চাটিকে লম্বালম্বিভাবে কেটে দুই মাকে দুই টুকরো দিয়ে দেওয়া হোক। মুহূর্তে এক মা বললেন, তাই করা হোক! আরেক মা কান্নাকাটি করে বললেন, ওই সন্তান কাটবেন না, সন্তান আমার নয়, ওরই; ওকেই দিয়ে দিন। উপস্থিত সবাই বিস্মিত হলেন, এতো লড়াই করার পর এই মা কেন সন্তানের দাবি পরিত্যাগ করছেন! কিছু সময় পর দরবার নির্দেশ দিলেন, যে মা সন্তানটিকে কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছে সে তার আসল মা নয়। আসল মা এই জনই, যে সন্তানের দাবি পরিত্যাগ করে সন্তানকে বেঁচে থাকার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তারপর দরবেশ বললেন, মা কখনোই সন্তানের অমঙ্গল চাইতে পারেন না এবং তিনি প্রকৃত মায়ের কোলেই সন্তানকে তুলে দিলেন; হাফ ছেড়ে বাঁচলো সবাই!

আমার বন্ধু স্বজন সহযোদ্ধা, আমাদের স্বপ্ন তো সুখি সুন্দর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ! সেই স্বপ্ন তো আমাদের কাছে সন্তানের মতোই মতোই! সেই সন্তান কেটে কেটে খাচ্ছে লুটেরারা! ওই সন্তানকে বাঁচাবো তো আমরাই; আমরাই যে ওই সন্তানের প্রকৃত বাবা মা! আজ যারা লুটেপুটে খাচ্ছে তারা প্রকৃত বাবা মা নয়, তারা তো ডাইনি; তাই তারা লুটপাট চালিয়ে দেশ খুনের মহোৎসবে মেতে উঠেছে! সন্তানতুল্য সুখি সুন্দর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব তো আমাদেরকেই নিতে হবে! নইলে তো ডাইনিরা সব গিলে খাবে!

[পুনশ্চ : আমার এই লেখাটি বঙ্গবন্ধুর 'কালো মানিক' খ্যাত নোয়াখালীর ভিপি মোহাম্মদ উল্লাহকে উৎসর্গ করলাম]