ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » জাতীয় » বিস্তারিত

বিষে ঢাকার আগে কেবল দিল্লি, শিক্ষা হতে পারে চীন

২০২০ ফেব্রুয়ারি ২৬ ১৮:২০:১০
বিষে ঢাকার আগে কেবল দিল্লি, শিক্ষা হতে পারে চীন

নিউজ ডেস্ক : অতীতের কয়েক বছরে চীনের বেশ কয়েকটি শহরের বাতাসে দূষণের মাত্রা সীমা ছাড়িয়েছিল। তবে চীনা কর্তৃপক্ষ বেইজিংসহ বেশ কয়েকটি শহরের বাতাসে দূষণের লাগাম টেনে ধরেছে।

কয়েক বছর আগেও যেসব শহরে বিষাক্ত ধোঁয়াশার উপস্থিতি ছিল সহ্যসীমার বাইরে তার মধ্যে অন্যতম ছিল বেইজিং। তিন বছর আগেও দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় বেইজিংয়ের অবস্থান যেখানে ছিল ৮৪, এখন সেখানে তাদের অবস্থান ১৯৯। শহরের ধোঁয়াশাও কমিয়ে এনেছে তারা। আইকিউ এয়ার ভিজ্যুয়াল প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড এয়ার কোয়ালিটি রিপোর্ট ২০১৯ থেকে এ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এ তালিকায় পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত বায়ুর রাজধানীর খেতাব জিতেছে দিল্লি। আর দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে জাদুর শহর খ্যাত ঢাকা। দূষণের মাত্রা যে পৃথিবীর এ অঞ্চলেই বেশি তার একটা প্রমাণ পাওয়া যায় অন্য আরেকটি তথ্য থেকে। তা হলো- পৃথিবীর সবেচেয়ে বেশি দূষিত শহরগুলোর দুই-তৃতীয়াংশই ভারতের।

বায়ু দূষণ ঠেকাতে একদিকে যেমন সফলতা দেখিয়েছে চীন, অন্যদিকে ভারত সরকারের তরফ থেকে কিছু চেষ্টার কথা বলা হলেও তার ফল খুব একটা দৃশ্যমান নয়। কারণ, ৫ বছর আগেও নয়াদিল্লির বাতাসের যে মান ছিল আজ সে মান আরও নিচে নেমেছে। অর্থাৎ ভালো তো হয়ইনি, উল্টো আরও খারাপ হয়েছে। পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহরের তালিকায় দিল্লির অবস্থান এখন পঞ্চম। তবে পৃথিবীর বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোর মধ্যে দিল্লির বাতাসই সবচেয়ে বিষাক্ত। গাজিয়াবাদ নামে যে শহরটি সবচেয়ে বিষাক্ত বাতাসের শহরের খেতাব জিতেছে সেটা থেকেও দিল্লির দূরত্ব খুবই সামান্য।

ভারত, চীনসহ এশিয়ার অন্যান্য শহরগুলোতে বাতাসের মান খারাপ হওয়ার জন্য যেসব বিষয়কে দায়ী করা হয় তার মধ্যে রয়েছে- ঘনবসতিপূর্ণ শহর, যানবাহনের ধোঁয়া, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, ফসল পোড়ানো এবং বিভিন্ন ধরনের কারাখানা থেকে নিঃসৃত বিষাক্ত ধোঁয়া। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী বায়ু দূষণের কারণে বছরে ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয় আর বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী দূষিত বায়ুর কারণে বছরে ৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের ক্ষতির মুখে পড়ে বিশ্বঅর্থনীতি।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ ও করোনা ভাইরাসের কারণে বর্তমানে চীনের উৎপাদন শিল্পের গতি স্লথ। তবে বায়ুদূষণ ঠেকাতে এরআগে থেকেই তাদের কার্যকর ভূমিকা নিতে দেখা গেছে। বড় বড় শহরগুলো থেকে দেশটি তাদের কারাখানা সরিয়ে নিতে শুরু করে। সেন্টার ফর রিসার্চ অন অ্যানার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার সম্প্রতি দেখেছে বেইজিং ও সাংহাই শহরে বাতাসের মানে উন্নতি হয়েছে। তবে দেশটির অন্যান্য কিছু শহরের মান খারাপ হওয়ার ইঙ্গিত রয়েছে তাদের প্রতিবেদনে।

ERsPtjKWAAEr6LM.jpg


ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে ভারতের অবস্থায় বর্ণনা করতে গিয়ে বলা হয়েছে, ভারতে সম্পূর্ণ বিপরীত এক অবস্থা বিরাজ করছে। ভারতের উত্তরাঞ্চলের বেশিরভাগ এলাকাতেই বায়ুর মান ভালো না। রাজনীতিবিদরা পরিবেশের চেয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নকেই বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন এবং দূষণের দায় নিয়েও ঠেলাঠেলির অভ্যাস রয়েছে।

এয়ার ভিজ্যুয়ালের এয়ার কোয়ালিটি বিভাগের পরিচালক ইয়ান বোকুইলদ বলছেন, চীনে, তারা যখন কিছু করবে বলে, সেটা তারা করে ফেলে। আর ভারতে বায়ু দূষণের বিরুদ্ধে এ যুদ্ধটা কেবল শুরু হচ্ছে। জনগণকে আরও চাপ দিতে হবে সরকারকে।

দূষণ ঠেকাতে ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকারের বেশ কিছু পদক্ষেপ অবশ্য বেশ প্রশংসিত হয়েছে সর্বমহলে। তবে যে পদক্ষেপগুলো নেয়া হয়েছে সেগুলো অনেক ক্ষেত্রেই পর্যাপ্ত হচ্ছে না। যেমন: কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্রমবর্ধমান ব্যবহার, অনিয়ন্ত্রিত নির্মাণ কাজ এবং লাখ নতুন নতুন কার এবং মোটরসাইকেল প্রতিদিন যে পরিমাণ ধোঁয়া ছাড়ছে সেসব ঠেকাতে খুব একটা কার্যকর হচ্ছে না মোদি সরকারের নেয়া পদক্ষেপগুলো।

দূষণের ক্ষেত্রগুলোর দিকে তাকালে চীন, ভারত এবং বাংলাদেশে বেশ মিল পাওয়া যাবে। ফলে চীনার যেভাবে বায়ুদষূণের লাগাম টেনে ধরেছে, ঢাকার অবস্থা আরও খারাপ হওয়ার আগে তাদের থেকে শিক্ষা নেয়া যেতে পারে। যেভাবে, দ্রুততার সঙ্গে চীনার বিপদ আঁচ করে দূষণের লাগাম টেনে ধরেছে তা ঢাকাসহ বাকি শহরগুলোর জন্য শিক্ষণীয় হতে পারে। সূত্র : ব্লুমবার্গ।

(ওএস/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২০)