ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » শিল্প-সাহিত্য » বিস্তারিত

দুঃখ কষ্টে ঘেরা জীবন

২০২০ মার্চ ০৬ ১৫:৪১:৪০
দুঃখ কষ্টে ঘেরা জীবন

ফিরোজ খান


দুঃখ ও কষ্টবিহীন মানব জীবন শুধু কল্পনা মাত্র। অন্য কথায় দুঃখ-কষ্ট মানব জীবনের অন্যতম ও অবিচ্ছেদ্য অংশ।পৃথিবীতে বড় ধরনের কোনো সাফল্য লাভের জন্য কষ্ট-সহিষ্ণুতা ও পরিশ্রম অপরিহার্য। বিনা পরিশ্রমে যেমন পাহাড়ের চূড়ায় উপনীত হতে পারেন না পর্বতারোহী তেমনি কষ্ট করা বা পরিশ্রম ছাড়া জীবনের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যগুলো অর্জন করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। অনেক মানুষ ব্যাপক দুঃখ-কষ্ট বা প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হন বুদ্ধিদীপ্ত সংগ্রামের মাধ্যমে। আবার অনেকে সামান্য দুঃখ-কষ্ট নিয়ে ভেঙ্গে পড়েন অল্প সময়ের মধ্যে।

সংকট মোকাবেলার অন্যতম এবং মোক্ষম পন্থা হল,সংকটের প্রকৃতি ও নানা দিক সম্পর্কে খুব ভালভাবে জ্ঞান অর্জন করা। যেমন,দুজন প্রতিদ্বন্দ্বী খেলোয়াড় প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হওয়ার জন্য পরস্পরের ইতিবাচক ও নেতিবাচক বা দূর্বল দিকগুলো সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করেন।

সংকট মোকাবেলার জন্য এর মূল কারণ বা মূল চালিকা শক্তিগুলো সম্পর্কে ধারণা রাখাও আমাদের সকলের জন্য খুবই জরুরি।যেমন,দাঁতে ব্যাথা দেখা দিলে এর প্রতিকারের সবচেয়ে ভাল উপায় হল ব্যাথার মূল কারণ উদঘাটন করে ওই কারণ দূর করার চেষ্টা করা। প্রথমে প্রতিরোধের প্রাথমিক ব্যবস্থা অনুযায়ী দাঁতে লেগে থাকা ময়লা দূর করতে হবে এবং ময়লা জমে থাকার ফলে সৃষ্ট গর্তগুলো ভরাট করতে হবে। কিন্তু দাঁতের ক্ষয় রোগ যদি স্নায়ু পর্যন্ত পৌঁছে যায় তাহলে ব্যথা দূর করার জন্য ক্ষয়কারী চালিকাশক্তিগুলোকে প্রতিহত করার পাশাপাশি দাঁতের সাথে স্নায়ুর সংযোগও ছিন্ন করতে হবে, আর তা না করলে দাঁত নষ্ট হবার পর মাড়িও নষ্ট হতে শুরু করবে।

কিছু দুঃখ-বেদনা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভর করে। যেমন,যারা টাকা-পয়সা খুব ভালবাসেন তারা কিছু টাকা হারালে খুবই দুঃখিত হয়ে পড়েন। অথচ অন্য এক ব্যক্তি ওই অর্থের সমপরিমাণ অর্থ হারানোর কারণে কম দুঃখিত হন। কিংবা কোনো কোনো মানুষ খুব অল্প টাকা-পয়সা বা সম্পদে তুষ্ট থাকেন,আবার অন্য অনেক মানুষ ওই পরিমান অর্থের দ্বিগুণ অর্থ খর-পোষ ও বিনোদনের জন্য ব্যায় করা সত্ত্বেও জীবন সম্পর্কে সুখী নন। তাই অপেক্ষাকৃত বেশি দুঃখ পাওয়ার পেছনের মনস্তাত্বিক কারণ দূর করা হলে দুঃখের মাত্রা কমানো বা পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব।

দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মানুষ সমস্যা ও বিপদগুলোকে সম্ভাবনায় পরিণত করেন এবং সেগুলো হয়ে পড়ে তার সাফল্যের সিড়ি। অন্যদের সমস্যার দিকে দৃষ্টি দিয়ে তা থেকে শিক্ষা নিলে সমস্যা মোকাবেলা করা সহজ হয়ে পড়ে। সব সমস্যা বা বিপদ দূর করা কখনও সম্ভব নয়,কিন্তু সমস্যার মোকাবেলায় দৃঢ়তা সমস্যার মন্দ প্রভাব বা ক্ষতি থেকে নিরাপদ রাখে।অন্যদের সমস্যার দিকে দৃষ্টি দিলে মনে এ সান্তনা জন্ম নেয় যে সমস্যা কেবল কোনো এক ব্যক্তির জন্য সৃষ্টি হয়নি,বিশ্বের বহু মানুষই সমস্যায় আক্রান্ত। উদাহরণ সরূপ বলা যেতে পারে আমাদের নবী হযরত আলী (আঃ)বলা কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা এই সামান্য লেখার মাঝে যুক্ত করা যেতে পারে। হযরত আলী (আঃ) কোনো এক ব্যক্তির মৃত্যুতে ওই গোত্রের লোকদের সান্তনা দিয়ে বলেছেন,"মৃত্যু কেবল তোমাদেরকে দিয়ে শুরু হয়নি এবং কেবল তোমাদেরকে দিয়েই শেষ হবে না।" দুঃখ ও বিপদের মোকাবেলায় নবী-রাসূলদের ধৈর্য ও অবিচলতা সব যুগের মানুষের জন্যই আদর্শ। কষ্ট ও সুখ এবং পরাজয় ও সাফল্য পরস্পর হাত ধরে চলে পালাক্রমে।

এ প্রসঙ্গে হযরত আলী (আঃ)আরো বলেছেন,"মানুষের দিন দু'টি। একদিন সে লাভবান হয়,অন্যদিন সে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। লাভের দিনে অহংকারী হয়ো না,আর ক্ষতির দিনে ধৈর্য ধরবে।"আমরা আমাদের নবী হযরত আলী (আঃ)গুরুত্বপূর্ণ কথাগুলো যদি সঠিকভাবে মেনে নিয়ে জীবনের কঠিন সময়কে মোকাবেলা করতে পারি তাহলে আমাদের ছোট্ট জীবনের মধ্যে যতটুকু দুঃখ কষ্ট মিলেমিশে থাকে তাকে সহজে মোকাবেলা করতে সক্ষম হতে পারবো তাই জীবনের মাঝে যতটুকু দুঃখ কষ্ট মিলেমিশে আছে বা থাকে তার জন্য কখনও আমরা হতাশায় না পরে তা দূর করতে চেষ্টা করতে হবে কেননা দুঃখ কষ্ট ও আমাদের জীবনের একটি নেয়ামত স্বরূপ।

(ওএস/এসপি/মার্চ ০৬, ২০২০)