ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রচ্ছদ » মুক্তচিন্তা » বিস্তারিত

মানুষের জন্য রূপনগর আবাসিক প্রকল্প তাই শিয়ালের বস্তি উচ্ছেদের  কৌশল আগুন

২০২০ মার্চ ১২ ১৯:৪২:৪১
মানুষের জন্য রূপনগর আবাসিক প্রকল্প তাই শিয়ালের বস্তি উচ্ছেদের  কৌশল আগুন

মানিক বৈরাগী


মুজিবাদর্শের মিছিলের অনেক সারথি প্রায় বিভিন্ন ইস্যুতে আমাকে মেসেঞ্জারে চিরকুট পাঠায়।
আমি ওসব পড়ে, যা প্রতিবাদ ও নিন্দাযোগ্য তা নিয়ে নিন্দা ও প্রতিবাদ লিখি।তারমানে এই নয় আমি শুধু প্রতিবাদ লিখি ।প্রেম বিরহও তো লিখি ভুল বানানে ভুল বাক্যে।

বেশ কিছুদিন ধরে আমি রাজনৈতিক কোন কলামই লিখিনি "আয়েশা "আপারটি ছাড়া। এটা লিখেছি বিবেকের তাড়নায়। আয়েশা আপার খবর টি যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয় দেশ তখন পাপিয়া কান্ডে তোলপাড় চলছে।
আয়েশা আপা কে নিয়ে যখন লিখছি তখন প্রতিটি শব্দের সাথে আমার অশ্রুফোটা ঝরেছে।আজও চকরিয়া থেকে বেশ ক'জন মিছিলের সারথি মাতামুহুরি ব্রীজে ঠিকাদার ও সহযোগী ঠিকাদারের সহয়তায় নির্মাণ দুর্নীতি নিয়ে একটি কলাম লিখতে বেশ অনুরোধ করেছে।
আমি তাদের ইনবক্সে কোন জবাব দি নাই।যে দেশে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কঠোর হুশিয়ারি সত্ত্বেও এমন হয়, সেদেশে আমি আর ক'জনের দুষমন হবো?এখন কখন কে কোন পথে নেতা হচ্ছে আওয়ামীলীগ হচ্ছে বুঝা মুশকিল। সেখানে বাসাবন্দী থেকে এসব প্রতিবাদ করে আমার ব্যক্তিগত কি ফায়দা বলেন?
যে রাজনৈতিক দল ও প্রশাসন ব্যবস্থাপনা এখনো উপনিবেশিকতার জালে আবদ্ধ, সেখানে শুধু ডিজিটাল ডিজিটাল বলে গালগল্প করে আর মানুষ ভুলানো যাবে না,দমানো যায় যাবে।
আজ আমি খুব ভারাক্রান্ত মননিয়ে এ কথা ক'টি লিখছি।বিএনপির সময়ে আমরা যখন ফেরারি আসামি ছিলাম তখন আমাদের আশ্রয়স্থল ছিলো মসজিদ, মন্দির,দরগা ও কবরস্থানের পাশাপাশি নিরিহ ভূমিহীন মানুষের ঠিকানা বস্তি।এমন বস্তির নারী পুরুষ শিশুদের সাথে আমার নিশ্চিন্ত সময় কেটেছে তাদের ভালোবাসা মায়া মমতায়। তো গতকালের বস্তির আগুনের হল্কা আগ্নেয়গিরির আগুনকেও হার মানিয়েছে।আজ এ বস্তি নিয়ে ক'কলম না লিখে পারছিনা।
বাংলাদেশে বস্তি উচ্ছেদ, পোড়ানোর ইতিহাস দুই যুগের অধিক।
এ বাংলাদেশে পাকিস্তানের সময়ে ও বস্তি ছিলো, এখনো আছে। ২৫মার্চের কালো রাত্রে পাকিস্তানিরা প্রথম আগুন লাগিয়ে ছিলো বস্তিতে।কারণ হিসাবে তারা চিহ্নিত করেছে আওয়ামীলীগের ও বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবের সভা সমাবেশে বস্তির মানুষেরাই বেশি অংশগ্রহণ করতো। তাই বস্তি পুড়িয়ে দিতে হবে।
এই বস্তি উচ্ছেদ পুড়ানো নিয়ে উভয় বাংলায় উচুমানের নিম্নমানের বহু সিনেমা ও ডকুমেন্টারি নির্মিত হয়েছে। বস্তি উচ্ছেদ নিয়ে আর নতুন করে কিছুই লেখার কিছু নাই।তখনকার সময়ে বস্তি উচ্ছেদের সময় সরকার ও প্রশাসন কে আড়াল রাখতো এবং ঘটনার মধ্যখানে পুলিশ প্রশাসন আসতো।
গতকালের ১১মার্চ মিরপুরের শিয়ালবাড়ি বস্তিতে সরকার আবাসন প্রকল্প করবে, কিন্তু বস্তিউচ্ছেদে বাংলাদেশ সংবিধানের বিভিন্ন ধারা উপধারা বিধি ও নিষেধ অর্থাৎ বিধিনিষেধ আছে। তো স্বাধীন দেশের স্বাধীন সংবিধান মানলে তো বস্তিউচ্ছেদ আগামী দশ বছরেও সম্ভব নয়।
তো সহজ পদ্ধতি হচ্ছে আগুন লাগানো। আগুন লাগিয়ে বস্তি উচ্ছেদ সহজ পদ্ধতি, এতে রাষ্ট্রের কোষাগার বাঁচলো,সহজেই ওখানে রূপনগর আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন হলো।
আর বস্তিতে তো মানুষ থাকেনা। যারা থাকে ওরা মানুষ প্রাণী।ওরা খুব ক্ষতিকর প্রাণী, ওরা মিছিলে ভাড়া খাটে,সভা সমাবেশে ভাড়া খাটে লোক জোগান দেয়।বস্তিতে যতো মাদকের হাটবাজার, বিভিন্ন অপরাধীরা থাকে সাথে থাকে বেশ্যা ও বেশ্যার দালাল ওখানে কোন ভালো মানুষ থাকেনা থাকতে পারেনা।
আর ওরা সবসময় অপরাজনীতির হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার হয়।ওরা সব সময় বিরোধী দলের মিছিল মিটিং ভাড়াইট্টা হিসাবে ভাড়া যায় ফলে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটায়।আরও একটা বড় বিষয় হলো ওরা প্রচুর মানব প্রাণী জন্মদেয়।প্রতিবছর তাদের সন্তান বাড়ে,ফলে দেশে এ জাতিয় প্রাণীর সংখ্যা বেড়ে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচির ব্যাঘাত ঘটায় সাথে টার্গেট পূরণ হয়না।
মুজিব বর্ষে রাজধানীবাসি একটি সুন্দর নগরী উপহার দিতে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আবাসিক ফ্ল্যাট প্রকল্পের অধীনে এ প্রকল্পটি জরুরি ভিত্তিতে খালি করা প্রয়োজন। টেন্ডার ও জিকে শামিম মার্কা টেন্ডারবাজের স্বার্থে কমিশনখোর নেতা ও ইঞ্জিনিয়ার কর্মকর্তা কর্মচারীদের ঘোষের সুবিধার্থে বস্তিটি পুড়িয়ে খালি করা আব্যশক এমনি বলছে বিদুষকেরা।
পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ভালো মানুষের আবাসিক চাহিদা পূরণের জন্য রূপনগর এলাকায় শিয়াল তাড়ানো খুব প্রয়োজনে রূপকথার রূপনগর আবাসিক প্রকল্প।
কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস কে কারা এই শিয়ালের আস্থানায় কে কারা আগুন লাগালো।এটা খুব নির্মম কি বলেন।এ নিয়ে একটি পরিকল্পিত উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠনেরও সংবাদ ব্রিফিংএ মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।
প্রিয় পাঠক এসব কথা আমরা আর কতোকাল দেখবো। আমরা আর কতোকাল আমলাতান্ত্রিক চালাকিতে আর কতোদিন কাটাবো। আজ যে অবুঝ শিশুটির বই পুড়ে গেলো,আগুনের হলকায় হারিয়ে গেলো যে শিশুটির পিতামাতা পরবর্তীতে এসব শিশুরা তো আর ভালো মানুষ হবে না, তাদের এ রাষ্ট্রব্যবস্থাপনা বানিয়ে দিয়েছে মানুষ প্রাণী।বস্তির শিশু তাদের পরিচয়।
আমি আর লিখতে পারছিনা দুচোখ অশ্রু ঝরে শ্রাবণের মতো। অথচ আমিও একদিন লুকিয়ে ঠাঁই নিয়েছিলাম এ জাতিয় বস্তিতে।বাংলাদেশের বাংলা ভাষার এক বিখ্যাত কবি তাঁর বিশাল জীবন এ রকম বস্তিতেই কাটিয়েছেন।
আমি এ রকম অব্যবস্থাপনার বিনাশ চাই। ওরাও মানুষ শুধু আপনারা নন।

লেখক
কবি ও নব্বইয়ের নির্যাতিত প্রগতিশীল ছাত্রনেতা
কক্সবাজার।