ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রচ্ছদ » সম্পাদকীয় » বিস্তারিত

স্বাস্থ্যখাতে লুটপাটের অসমাপ্ত একটি বয়ান!

২০২০ মার্চ ১৯ ১১:৩২:০৫
স্বাস্থ্যখাতে লুটপাটের অসমাপ্ত একটি বয়ান!

প্রবীর সিকদার


আমি একটি সরকারি হাসপাতালের প্রধান ব্যক্তি। আমার হাসপাতালে কোন কোন মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি কিংবা মেডিক্যাল সামগ্রী লাগবে সেটা নিয়ে আমার ভেবে দেখার অবকাশ নেই! কেননা আমাকে সেটা ভাবার সুযোগই দেওয়া হয় না! স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কিংবা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বড় কোনো কেউকেটা আমাকে ফোনে জানিয়ে দেন, অমুক কোম্পানির একজন প্রতিনিধি তোমার কাছে যাবে, তোমার হাসপাতালের স্বার্থেই তুমি তাকে সহযোগিতা করবে। ওই কেউকেটার ফোন রাখতে না রাখতেই এক কোম্পানির সেই প্রতিনিধি হাজির! আমি তার খাতির যত্ন শেষ করে হাসপাতালের জন্য প্রয়োজনীয় মেডিক্যাল সামগ্রীর কথা তুলতেই তিনি তার ব্যাগ থেকে একটি চিঠি বের করে আমার চোখের সামনে ধরেন। আমি তো সেই চিঠি দেখে হতবাক! আমার হাসপাতালের প্যাডে পুরো একটি চিঠি, যাতে মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি ও মেডিক্যাল সামগ্রীর নাম রয়েছে; নিচে রয়েছে আমার নির্ভুল নাম পদবী, আছে আমার স্বাক্ষরের জায়গাও! এখন আমি শুধু স্বাক্ষর করলেই হয়ে যায়! আমি আমার বিস্ময়ের ঘোর কাটিয়ে বললাম, এই তালিকার অনেক কিছুই আমার লাগবে না; আবার প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই তালিকায় নেই! আমি নতুন করে আর একটি চাহিদা পত্র লিখে দেই। এই কথা শুনে তার চোখেমুখে কালো মেঘের ছায়া দেখতে পেলাম! উনি হটাত ল্যাট্রিনে যাওয়ার কথা বলে উঠে গেলেন। উনার উঠে যাওয়ার দুই তিন মিনিটের মধ্যে ঢাকার সেউ বড় কেউকেটার ফোন চলে এলো! তিনি কর্কশ সুরে স্পষ্ট করেই বলে দিলেন, আদার ব্যাপারির জাহাজের খবর নেওয়ার দরকার নেই। তুমি ওই চিঠিতে সই-স্বাক্ষর ও সীলমোহর লাগিয়ে ওকে তাড়াতাড়ি বিদায় করে দাও। তার এক দেড় মিনিটের মধ্যেই হাজির সেই বিশেষ প্রতিনিধি! আমি আর কথা না বাড়িয়ে স্বাক্ষর করে সীলমোহর লাগিয়ে তাকে বিদায় করে দিলাম!

তারপর একদিন বড় বড় বাক্সে হাসপাতালে হাজির সেই মেডিক্যাল সামগ্রী! সেসব দেখে আমার চোখ আরেকদফা ছানাবড়া হয়ে গেল! নিম্ন মানের সব মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি ও মেডিক্যাল সামগ্রী; এক লাখ টাকার পন্যের দাম এক কোটি টাকা! আমি সেই যন্ত্রপাতি ও সামগ্রী গ্রহণে মৃদু আপত্তি জানাতেই চলে এলো ঢাকার সেউ বড় কেউকেটার ফোন! কোনও ভূমিকা না নিয়েই তিনি সরাসরি বলে দিলেন, কোনো সময় ক্ষেপণ না করে আমি যেন ওই পণ্যগুলো অফিসিয়ালি রিসিভ করে রাখি! আমি অসহায় হয়ে পড়লাম! অবশেষে আমাকে সেটাই করতে হলো!

সেই মেডিক্যাল সামগ্রী ও মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি এখন আমার চোখের ঘুম কেড়ে নিয়েছে! এসব নিয়ে যদি কখনো তদন্ত হয়, তখন হয়তো ঢাকার সেই বড় কেউকেটা কিংবা অমুক কোম্পানির কেউ ফাঁসবে না! ফেঁসে যাবো আমি! সব স্বাক্ষর যে আমারই!