ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » সম্পাদকীয় » বিস্তারিত

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মনোরম পলক যশোর থেকে ঢাকায় ফিরে আসুক বাবাকে নিয়েই

২০২০ মে ০৪ ০০:৫৪:৪১
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মনোরম পলক যশোর থেকে ঢাকায় ফিরে আসুক বাবাকে নিয়েই

প্রবীর সিকদার


হাঁ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, লেখা সংযুক্ত এই ছবিতে আপনি যাকে মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করছেন, তিনিই সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল, আপনার স্নেহের কাজল! আমি অন্তত অনুভব ও বিশ্বাস করি যে, আপনার স্নেহের হাত যার মাথায় পড়ে, সেই মাথা কখনোই আদর্শ বিচ্যুতির ধারায় নিজেকে টেনে নিয়ে যায় না!

টানা ৫৩ দিন এই কাজল নিখোঁজ ছিলেন! আপনিই অনুভব করতে পারেন, কাজলের স্ত্রী সন্তানেরা কী উদ্বেগ উৎকণ্ঠা নিয়ে এই দীর্ঘ ৫৩ দিনের প্রতিটি সেকেন্ড কিভাবে পার করেছেন! রবিবার ৩ মে আন্তর্জাতিক প্রেস ফ্রিডম ডে'র দিনে বেনাপোল সীমান্তে উদ্ধার হয় নিখোঁজ কাজল! বিজিবি অবশ্য বলেছে, তিনি ভারত থেকে আমাদের দেশে অবৈধ অনুপ্রবেশ করেছেন! বিজিবি অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলা দিয়ে কাজলকে বেনাপোল পোর্ট থানায় পাঠায়। বেনাপোল পোর্ট থানা পুলিশ ওই অভিযোগেই তাকে যশোরের আদালতে নিয়ে যায়! এরই মধ্যে খবর রটে যায়, বিজিবির মামলায় নির্ঘাত জামিনে মুক্তি পাবেন সাংবাদিক কাজল! হটাত করে পাল্টে যায়, পুলিশের আচরণও! হয়তো তাদের কাছে আসতে শুরু করে রহস্যের টেলিফোন! পরে পুলিশ ৫৪ ধারায় কাজলের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেন, সেখানে শুধু উল্লেখ করা হয়, কাজলের বিরুদ্ধে ঢাকায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ধারায় তিনটি মামলা থাকায় ৫৪ ধারায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হোক! কিন্তু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলার কোনও কাগজপত্র পুলিশ দেয়নি কিংবা দিতে পারেনি!

যশোরের আদালত অনুপ্রবেশের মামলায় জামিন মঞ্জুর করলেও ৫৪ ধারার মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে সাংবাদিক কাজলকে যশোর কারাগারে পাঠিয়ে দেয়! বাবা বেঁচে আছেন, তাকে বেনাপোলে উদ্ধার করা হয়েছে, এ খবর পেয়ে ছেলে মনোরম পলক পথে পথে কতো দুর্ভোগ মাড়িয়ে ঢাকা থেকে ছুটে গিয়েছিল যশোরে, সেই ছেলেটি রবিবার সন্ধ্যায় চোখে জল নিয়ে বাবাকে জেলগেটে পৌঁছে দেয়! তারপর ওই শহরেরই একটি হোটেলে ওঠে। কেন যেন ওর মধ্যে একটি আশাবাদ কাজ করছে, সাংবাদিক প্রবীর সিকদারকেও একবার আদালত শুধু কারাগারেই পাঠায়নি, রিমান্ডও মঞ্জুর করেছিল! ঠিক তারপরের দিন ওই আদালতই তাকে জামিন দেয়! ওই ছেলেটির বিশ্বাস, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্নেহের সূত্র ধরেই সাংবাদিক প্রবীর সিকদার তখন জামিন পেয়েছিলেন। কিছু সময় আগেও ফোনে কথা হয় মনোরম পলকের সাথে আমার। ও অনেকটা আবেগপ্রবণ হয়েই আমাকে বলল, 'কাকা! আমি বাবাকে না নিয়ে ঢাকা ফিরছি না! কেন যেন আমার মনে হচ্ছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আজ ও কাল এমন কিছু করবেনই, যার প্রেক্ষিতে আমার বাবার জামিন হবে যশোরেই! তিনি আপনার জন্য যা করেছেন, সেটা তিনি আমার বাবার জন্য করবেন না, সেটা আমি বিশ্বাস করি না!'

পলকের সাথে ফোনে কথা বলার সময় আমি অনুভব করছিলাম, বাচ্চা ছেলেটি কাঁদছিল! আমিও চোখের জল ধরে রাখতে পারিনি; একদিন আমার ছেলে সুপ্রিয়ও বাবার মুক্তির জন্য পলকের মতোই আপনার দিকে তাকিয়ে, হ্যা প্রধানমন্ত্রী আপনার মুখের দিকে তাকিয়েই কেঁদেছিল!

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, রবিবার ছিল আন্তর্জাতিক প্রেস ফ্রিডম ডে! সেই সাথে দেশজুড়ে চলছে ভয়াবহ করোনা আতঙ্ক। এই সময়ে একজন সাংবাদিক, যার মাথায় পড়েছিল আপনার স্নেহের হাত, সে জেলে যেতে পারে না, জেলে থাকতে পারে না! এই সময়ে সাংবাদিক কাজল জেলে থাকলে আমিও তো লজ্জায় নিষ্প্রভ হয়ে যাবো! সবাই বলবে, এই সময়ে তোমার আপা সাংবাদিক কাজলের দিকে একটুও তাকাবেন না! অবুঝ পলকের মতোই আমারও বিশ্বাস, আপনি আজ ও কাল এমন কিছু করবেন, যার প্রেক্ষিতে সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলের ছেলে মনোরম পলক একা নয়, বাবাকে নিয়েই সে যশোর থেকে ঢাকায় ফিরবে।