ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রচ্ছদ » শিক্ষা » বিস্তারিত

করোনায় পিছিয়ে গেছে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তক তৈরির কাজ

২০২০ মে ০৯ ১৪:০৪:৪৪
করোনায় পিছিয়ে গেছে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তক তৈরির কাজ

স্টাফ রিপোর্টার : করোনাভাইরাসে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে দেশে চলছে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি। বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সককিছু। এর প্রভাব পড়েছে দেশের সব খাতে।

শিক্ষার্থীদের জন্য আগামী শিক্ষাবর্ষের (২০২১) পাঠ্যবই ছাপার কাজও স্থগিত করে দিয়েছে এই করোনাভাইরাস। বই মুদ্রণের দরপত্র আহ্বান, কাগজ কেনাসহ সব কাজই আটকে গেছে বর্তমান পরিস্থিতিতে। পিছিয়ে দেয়া হয়েছে প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবই মুদ্রণের দরপত্র প্রক্রিয়া। কাগজ কেনার দরপত্র এরই মধ্যে পেছানো হয়েছে চার দফায়। বছরের চার মাস কেটে গেলেও পাঠ্যবই মুদ্রণের প্রাথমিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ায় যথাসময়ে ৩৫ কোটি পাঠ্যপুস্তক শিক্ষার্থীদের হাতে না পৌঁছানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

এ পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সব দরপত্র প্রক্রিয়া ঈদুল ফিতরের পরে সম্পন্ন করার কথা ভাবছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগামী শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে সারাদেশের প্রায় সাড়ে চার কোটি শিক্ষার্থীর মাঝে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য ৩৫ কোটি পাঠ্যবই ছাপানোর উদ্যোগ নিয়েছে এনসিটিবি। তবে মুদ্রণের দরপত্র প্রক্রিয়া শুরুর আগেই দেশজুড়ে করোনা সংক্রমণের কারণে অন্যসব সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতোই এনসিটিবিও ২৬ মার্চ থেকে বন্ধ। এতে পিছিয়ে গেছে ২০২১ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবই মুদ্রণের সব কার্যক্রম।

মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের (প্রিন্টিং প্রেস) নীতিনির্ধারকরা জানান, এনসিটিবি বন্ধ থাকায় তারা বিপাকে পড়েছেন। ২০২০ শিক্ষাবর্ষে পাঠ্যবই ছাপানোর বিল তারা এখনও পাননি। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের বিলই বাকি রয়েছে। জুন মাস আসন্ন, এর মধ্যে বিল না পেলে অর্থবছরও শেষ হয়ে যাবে। এতে তারা আরও বিপদে পড়বেন বলে আশঙ্কা করছেন।

করোনার কারণে চাপে পড়ার কথা স্বীকার করেছেন এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহাও। তিনি জানান, প্রাথমিক স্তরের দরপত্র প্রক্রিয়া করা সম্ভব হয়েছে। অন্যান্য স্তরের পাঠ্যবইয়ের দরপত্রও আহ্বানে বার বার তারিখ বাড়ালেও করোনা পরিস্থিতির কারণে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি।

এনসিটিবির চেয়ারম্যান বলেন, ঈদের পর দরপত্র প্রক্রিয়া করতে পারলেও যথাসময়ের মধ্যে আগামী শিক্ষাবর্ষের বই শিশুদের হাতে তুলে দেয়া সম্ভব হবে। কারণ এখনও আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আছি।

এনসিটিবি সূত্র জানায়, প্রতি বছর মে মাসের মধ্যে পরবর্তী শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবই মুদ্রণের দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ করা হয়। জুন মাসে কার্যাদেশ দেয়া হয়। জুলাই ও আগস্ট মাসে প্রেসগুলোতে পাঠ্যবই ছাপানো শুরু হয়। এবার করোনার কারণে সব কাজ পিছিয়ে গেছে। প্রাথমিকের বইয়ের দরপত্র আহ্বান করেও তা পেছাতে হয়েছে। মাধ্যমিক, কারিগরি, দাখিল, ভোকেশনাল, আদিবাসী ও ব্রেইল বইয়ের দরপত্র এখনও প্রস্তুত করাই সম্ভব হয়নি।

এনসিটিবির অন্য একটি সূত্র জানায়, দরপত্র তো দূরের কথা, পাঠ্যবইয়ের এস্টিমেটই (হিসাব) এখনও প্রস্তুত হয়নি।

এনসিটিবির সদস্য (পাঠ্যপুস্তুক) অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম বলেন, করোনার কারণে আমাদের সব কাজ পিছিয়ে যাচ্ছে। প্রাথমিক স্তরের বইয়ের দরপত্র খোলার তারিখ ১১ মে থাকলেও তা পিছিয়ে ৮ জুন করা হয়েছে। মাধ্যমিকের সব বইয়ের দরপত্র ঈদের পরে করা হবে। কাগজ কেনার দরপত্র পিছিয়ে ২ জুন নির্ধারণ করা হয়েছে।

এনসিটিবি থেকে জানা গেছে, কাগজ কেনার দরপত্র এ নিয়ে চার দফা পিছিয়েছে। সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে এনসিটিবি এরই মধ্যে কর্ণফুলী পেপার (কেপিএম) থেকে এক হাজার টন কাগজ কিনেছে। বাকি ১৫ হাজার টন কাগজ কেনার দরপত্র খোলা হবে ২ জুন।

এ বিষয়ে এনসিটিবির বিতরণ নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক জিয়াউল হক বলেন, পাঠ্যপুস্তুকের এস্টিমেট করা হয়নি, কথাটি সত্য নয়। বইয়ের চাহিদাপত্র মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) থেকে আমরা পেয়েছি। সংখ্যাও চূড়ান্ত করা হয়েছে। আগামী শিক্ষাবর্ষে আমরা প্রায় ৩৫ কোটি পাঠ্যবই ছাপাব।

তিনি বলেন, গতবারের চেয়ে এবার বই কমবে। কারণ আমরা কিছু পদক্ষেপ নেয়ার কারণে বইয়ের অপচয় কমেছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায় থেকে বইয়ের বাড়তি চাহিদা দেয়ার প্রবণতাও হ্রাস পেয়েছে। এতে আমাদের হিসাবে প্রায় ৫৪ থেকে ৫০ লাখ বই কমে যাবে।

সূত্র জানায়, আগামী বছরের ষষ্ঠ শ্রেণির সব বই বদলে যাবে। নতুন শিক্ষাক্রমে এসব বই লেখা হচ্ছে। তাই মাধ্যমিক স্তরের ষষ্ঠ শ্রেণির বইয়ের জন্য এবার পৃথক দরপত্র আহ্বান করতে হবে। এ ছাড়া নবম-দশম শ্রেণির দু’টি বই ‘বাংলা রচনা সম্ভার’ এবং ‘বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি’ মিলিয়ে একটি বই মুদ্রণ করা হবে। এতে কভার পেজের আর্ট কার্ডসহ কাগজের সাশ্রয় হবে বলে এনসিটিবি মনে করছে।

বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক চেয়ারম্যান তোফায়েল খান বলেন, ঈদের পরে দরপত্র আহ্বান থেকে সব কাজ শুরু করা হলেও ডিসেম্বরের ১৫ তারিখের মধ্যে ৩৫ কোটি পাঠ্যবই ছাপানো সম্ভব বলে মনে করি। তবে এই কার্যক্রম যদি আরও পিছিয়ে যায়, তাহলে অবশ্যই সমস্যা হবে।

(ওএস/এসপি/মে ০৯, ২০২০)