ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » দেশের বাইরে » বিস্তারিত

লন্ডন ভিত্তিক বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল-এস থেকে মাহি ফেরদৌস জলিলের স্থায়ী অপসারণ দাবি

২০২০ মে ১৬ ১১:৩৬:৩৯
লন্ডন ভিত্তিক বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল-এস থেকে মাহি ফেরদৌস জলিলের স্থায়ী অপসারণ দাবি

উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ ডেস্ক : লন্ডন ভিত্তিক বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল-এস থেকে মাহি ফেরদৌস জলিলকে অপসারণের দাবি জানিয়েছে আ্যলায়েন্স আ্যগেইনস্ট রেইসিজম আ্যন্ড রেলিজিয়াস হেইট্রেড। গত বৃহস্পতিবার সংগঠনটির আহবায়ক পুস্পিতা গুপ্ত সংগঠনের পক্ষে অভিযোগ আকারের এক বিবৃতিতে এমন দাবি করেন। তিনি বিবৃতিতে উল্লেখ করেন, গত ১২ মে মাহি ফেরদৌসের অপসারণ দাবি সম্বলিত অনুরূপ একটি অভিযোগ পত্র চ্যানেল এস কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, আগামী ২০ মে বিকেল ৪ টার মধ্যে চ্যানেল এস থেকে মাহি ফেরদৌস জলিলকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা না হলে, তারা পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

আ্যলায়েন্স আ্যগেইনস্ট রেইসিজম আ্যন্ড রেলিজিয়াস হেইট্রেডের আহবায়ক পুস্পিতা গুপ্ত স্বাক্ষরিত বৃহস্পতিবারের অভিযোগ পত্রটি আমরা আজ হুবহু তুলে ধরছি :

'চ্যানেল এস-এ COVID-19 শিরোনামে সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানে, উপস্থাপক এবং চ্যানেলের প্রতিষ্ঠাতা,জনাব মাহি ফেরদৌস জলিলের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সম্পর্কে করা ঘৃণ্য, সাম্প্রদায়িক ও অসম্মানজনক মন্তব্যের বিরুদ্ধে আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাবে তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছি। COVID-19 মহামারী বিষয়ক সরাসরি সম্প্রচারিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে জনাব জলিল এই মন্তব্য করেন, যা চ্যানেল এস-এ গত ৩’রা মে ২০২০ এ দুপুর ১২ ঘটিকায় (স্কাই – ৭৭৭) সম্প্রচারিত হয়।

অত্যন্ত দুঃখের সাথে আমাদের জানাতে হচ্ছে যে, বাজারে পানের আকাশচুম্বী মূল্যবৃদ্ধির প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে, জনাব জলিল সেইসব অসাধু ব্যবসায়ীদের এই আচরণকে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানসিকতার সাথে তুলনা করেন। আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে শুধু হিন্দুত্ববাদ নয়, পৃথিবীর কোন ধর্মেই অসাধুতাকে সমর্থন কিংবা প্রশ্রয় দেয়া হয়েছে এরকম কোন প্রমাণ পাওয়া যায়না।

এটা স্পষ্টতই দৃশ্যমান যে, জনাব জলিল হিন্দু ধর্মকেই আলাদা করে উদ্দেশ্য করেছেন, সুতরাং আমরা বিশ্বাস করি যে উনার মন্তব্যের উদ্দেশ্য স্পষ্টতই ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানো। গণমাধ্যমে এ ধরনের আপত্তিকর বক্তব্য পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে থাকা হাজারো বাংলাদেশী এবং বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের বিমূঢ় করে দিয়েছে।

বিলেতের বাংলাদেশী সম্প্রদায়ের তীব্র প্রতিক্রিয়া এবং দুজন ব্রিটিশ সাংসদ, রুশনারা আলি (বেথনাল গ্রিন ও বো) এবং আপসানা বেগম (পপলার ও লাইমহাউজ), এবং টাওয়ার হ্যামলেটস এর কার্যনির্বাহী মেয়র জন বিগস এর একাত্মতা পোষণ করে বিবৃতি প্রদান এর ধারাবাহিকতায় জনাব জলিল নি:শর্ত ক্ষমাপ্রার্থনা করেন এবং আমরা এই জন্য তাকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা আরো ধন্যবাদ জানাচ্ছি চ্যানেল এস কে, তাদের ক্ষমাপ্রার্থনা চেয়ে দেয়া বিবৃতির জন্য। বহু-জাতি, বহু-ধর্ম ও বহু সংস্কৃতি ভিত্তিক সমাজ গড়ার চ্যানেল এস এর অঙ্গীকারকে আমরা স্বাগত জানাই।

একইভাবে, ক্ষমাপ্রার্থনাকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি আমরা (আ্যলায়েন্স আ্যেগেইন্সট রেসিজিম আ্যন্ড রেলিজিয়াস হেইট্রেড) এও বিশ্বাস করি যে, বিলেতে বাংলাদেশী সম্প্রদায়ের মুখপত্র হিসেবে চ্যানেল এস এর প্রতি সবার আস্থা পুনঃস্থাপন করতে কতৃপক্ষকে আরো কাজ করে যেতে হবে হবে। যা ঘটেছে তার দায়িত্ব নিয়ে সমাজে যাতে ধর্মীয় ঘৃনা ছড়ানো এবং সাম্প্রদায়িক সৌহার্দ্য নষ্ট না হয় সেই লক্ষ্যে চ্যানেল এসকে আরো সক্রিয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

চ্যানেল এস এর প্রতি আমাদের দাবীসমূহঃ

১) অবিলম্বে জনাব মাহি ফেরদৌস জলিলকে চ্যানেল এস এর সবরকম টেলিভিশন সম্প্রচার থেকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে। তাকে কোন প্রকারেই চ্যানেল এস এর অনুষ্ঠানে সঞ্চালক, অতিথি কিংবা অন্য কোন ভাবে উপস্থিতির অনুমোদন দেয়া যাবে না।

২) জনাব জলিল যদি চ্যানেল এস এর কোন দায়িত্বশীল পদে নিয়োজিত থাকেন, অনতিবিলম্বে তাকে সকল প্রকার দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করতে হবে।

৩) আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনা থেকে আমরা জানতে পারি চ্যানেল এস নিশ্চিত করছে এবং নিশ্চয়তা দিচ্ছে যে চ্যানেল এস প্রতিষ্ঠান হিসেবে কোন ঘৃণা কিংবা নেতিবাচক পূর্ব ধারণাকে প্রশ্রয় দেয় না। কিন্তু প্রকাশিত বিবৃতিতে আমরা লক্ষ্য করি ভবিষ্যতে একই ধরনের ঘটনার পুণরাবৃত্তি রোধে প্রতিষ্ঠানটি কী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, এ ব্যাপারে চ্যানেল এস নিশ্চুপ। বিশেষত: এই ঘটনার বিশালতার কারণেই এটি গুরুত্বপূর্ণ। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা চ্যানেল এস এর কাছে বিভিন্ন ধাপ সম্বলিত একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার দাবী জানাই যাতে চ্যানেল এস তার বহু জাতি, বহু ধর্ম ও বহু সংস্কৃতি বিষয়ক অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে পারে।

বিগত ১৬ বছর ধরে বিলেতে বসবাসরত বাংলাদেশী সমাজের সেবা প্রদানে চ্যানেল এস এর অবদানকে আমরা শ্রদ্ধা করি এবং আমরা এও আশা করি আগামীতেও চ্যানেল এস এর এই ধারা অব্যাহত থাকবে।

এর ধারাবাহিকতায়, আমরা গত ১২ই মে ২০২০, মঙ্গলবার চ্যানেল এস কতৃপক্ষের কাছে আমাদের অভিযোগপত্র দায়ের করেছি এবং উপরোক্ত দাবীসমূহ আগামী ২০শে মে ২০২০, বুধবার দুপুর ৪ ঘটিকার মধ্যে কার্যকর না করা হলে, কোন প্রকার অগ্রিম ঘোষণা না দিয়েই আমরা যথাযথ পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবো।'

(ওএস/পিএস/১৬ মে, ২০২০)