ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রচ্ছদ » মুক্তিযুদ্ধ » বিস্তারিত

২০ মে, ১৯৭১

সিলেটের নালুয়া চা বাগানে পাক বর্বররা ব্যাপক হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়

২০২০ মে ২০ ১১:৫১:৩২
সিলেটের নালুয়া চা বাগানে পাক বর্বররা ব্যাপক হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়

উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ ডেস্ক :স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচএম কামরুজ্জামান, ইউএনআই-এর সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, আমরা ধর্মের বিরুদ্ধে নই, দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্দ করছি। আমাদের স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে বেঁচে থাকার আইনগত অধিকার ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ইসলামের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম নয়। আমরা ইসলামসহ সকল ধর্মের মূর‌্যবোধ ও শিক্ষাকে রক্ষা ও সংরক্ষণ করবো। আমরা শোষনমুক্ত, সুষম ও শ্রেনীহীন সমাজ ব্যবস্থা কায়েমে বদ্ধপরিকর, যেখানে ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে মানুষ মানুষে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। যাঁরা বাংলাদেশকে নিজেদের মাতৃভূমি হিসেবে স্বীকার করেন এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে, তাঁরা যে ধর্মবলম্বীই হোন না কেন তাঁরা আমাদের ভাই। যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে দখলদার বাহিনীর সহযোগিতা করেছে, তারা যে ধর্মের হোক, আমাদের শত্রু বাংলাদেশের শত্রু।

পাক বাহিনীর দুই কোম্পানি সৈন্য কুশিয়ারা অতিক্রম করে সিলেটের সুতারকান্দি ও বড়গ্রাম আক্রমণ করে। ক্যাপ্টেন রবের নেতৃত্বে মুক্কিযোদ্ধারা পাকসেনাদের পাল্টা আক্রমন চালায়। এ যুদ্ধ ‘সুতারকান্দি যুদ্ধ’ নামে পরিচিত। এ যুদ্ধে ৩৯ জন পাকসেনা নিহত হয়। অপরদিকে, দুজন মুক্তিযোদ্ধা পাকসেনাদের হাতে ধরা পড়েন।

কুষ্টিয়ার বল্লভপুর মিশনারী গির্জা লুট করে ঘাঁটিতে ফেরার সময় পাকসেনাদের ওপর মুক্তিবাহিনী আক্রমণ চালায়। প্রায় এক ঘন্টা স্থায়ী এ যুদ্ধে ২৭ জন পাকসেনা নিহত ও ৫-৬ জন আহত হয়। মুক্তিবাহিনী এ অভিযানে একটি জিপ ও কিছু অস্ত্র উদ্ধার করে ।

সিলেটের নালুয়া চা বাগানে পাক বর্বররা ব্যাপক হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এতে ২০ জন নিরীহ চা শ্রমিক নিহত হয়।

সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ি নদীর পারে পাকবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ হয়।

পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের সাথে পূর্ব পাকিস্তানের উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। তাঁরা পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক আক্রমণের ব্যাপারে ঐক্যমত্যে পৌঁছেন। তাঁরা বলেন, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমনের জন্য সেনা অভিযানের প্রয়োজন অপরিহার্য।

ঢাকায় সামরিক কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেন, নগরীর বিভিন্ন এলাকায় হাত-বোমা নিক্ষেপের সাথে জড়িত দশজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সন্ত্রাস সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ভবিষ্যতে যারা একাজ করবে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হবে।

সামরিক কর্তৃপক্ষের এক ঘোষণায় মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করার জন্য স্থানীয় দালালদের পুরস্কৃত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সিদ্ধান্তে ঘোষণা করা হয়, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সম্পর্কে যারা তথ্য প্রদান করবে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।

পূর্বাঞ্চলের সামরিক শাসন স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিকে আরও তৎপর করার জন্যে ২০ নং সামরিক আদেশ জারি করে। এত ক্ষতিগ্রস্ত দালালদের অর্থ সহায়তা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়।

এ্যাডভোকেট আফতাবউদ্দিন আহমদ ও প্রাদেশিক পরিষদের সাবেক ডেপুটি স্পিকার এ্যাডভোকেট আসগর হোসেনকে আহ্বায়ক করে যথাক্রমে মানিকগঞ্জ মহকুমা শান্তি কমিটি ও ধামরাই থানা শান্তি কমিটি গঠিত হয়।

তথ্যসূত্র: মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর

(ওএস/এএস/মে ২০, ২০২০)