ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » দেশের খবর » বিস্তারিত

প্রধানমন্ত্রীর নগদ উপহার : গৌরীপুরে ধনাঢ্য ও একই পরিবারের একাধিক নাম তালিকায়

২০২০ মে ২২ ১৭:২৬:৫৫
প্রধানমন্ত্রীর নগদ উপহার : গৌরীপুরে ধনাঢ্য ও একই পরিবারের একাধিক নাম তালিকায়

গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি : ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার মাওহা ইউনিয়নে করোনা দুর্যোগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নগদ উপহার তালিকায় দূর্নীতি, অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ তালিকায় ধনাঢ্য ব্যাক্তি যার বিশাল সম্পদ ও পাকা বাড়ি আছে এমন ব্যক্তির নাম রয়েছে। রয়েছে দাদী, মা-বাবা-নাতী এবং ৩পুত্রসহ বাবা এমন একই পরিবারের একাধিক সদস্যের নাম। প্রতিবন্ধী ভাতা প্রাপ্ত, ভিজিডি ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে নাম রয়েছে এমন ব্যাক্তিরও এ তালিকায় নাম দেয়া হয়েছে। এছাড়া ওয়ার্ডভিত্তিক বিভাজনে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।

এসব অনিয়মের অভিযোগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগপত্র দায়ের করেছেন ভুটিয়ারকোনা আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম মোহাম্মদ।

মাওহা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. কবীর উদ্দিন জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রিকশাচালক, ভ্যানচালক, দিনমজুর, নির্মাণ শ্রমিক, কৃষি শ্রমিক, দোকান-কর্মচারীসহ নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য এ উপহার দিয়েছেন। কিন্তু এ তালিকায় লাখপতি আর শত শত মন ধান পায় এমন কৃষকের নামও রয়েছে। তালিকা প্রণয়নে চরম অনিয়ম, দূর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি হয়েছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার মাওহা ইউনিয়নে ৫৩০ জন করোনা ভাইরাসের কারণে কর্মহীন ও দুস্থ আড়াই হাজার টাকা করে প্রধানমন্ত্রীর উপহার পাবেন। সে অনুযায়ী ৯টি ওয়ার্ডের প্রত্যেক ওয়ার্ডে প্রায় ৫৯ জন তালিকাভুক্ত হওয়ার কথা। কিন্তু ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডে ২৩০ জনকে তালিকাভূক্ত করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে উক্ত ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য এখলাস উদ্দিন খোদা নেওয়াজ জানান, আমি তালিকার বিষয়ে কিছুই জানি না, কতজন এ ওয়ার্ডে তালিকাভূক্ত হয়েছে তাও বলতে পারব না। চেয়ারম্যান বলতে পারবেন।

১নং ওয়ার্ডের ধারাকান্দি গ্রামের মৃত গফুর আলীর পুত্র মো. মজিবুর রহমান (তালিকায় ক্রমিক নং ২৪০), মজিবুর রহমানের স্ত্রী মোছা. মনোয়ারা (২৪১), তার দু’ভাই সাইফুল মিয়া (২৪২), বাবুল মিয়া (২৪৫), তার মা ফুলবানুর (৩৫৭) নাম তালিকায় রয়েছে। একই গ্রামের মৃত হাছেন আলীর স্ত্রী মোছাঃ রাজু(৩৫৩), তাঁর ছেলে মো. হারুণ(৩৫৯), হারুণের পুত্র মো. জিলফত(৩৫৪) ও মো. সুজন মিয়া(২৩৯) নাম রয়েছে। মো. জিলফত(৩৫৪) এর নামে খাদ্যবান্ধব কর্মসূছীর কার্ড রয়েছে। ওই গ্রামের মৃত আনফর আলীর পুত্র মো. আব্দুল জলিল (২৪৪), তার ভাই মো. আরশাদ আলী (২৫০) আর আরশাদ আলীর স্ত্রী মোছা. রিপার নামে প্রতিমাসে ৩০ কেজি চালের ভিজিডি কার্ড রয়েছে। একই পরিবারের একাধিক সদস্যসহ বিভিন্নসুবিধাভোগীদের নাম তালিকাভূক্তের এমন অনিয়মের অভিযোগ আরও রয়েছে।

এই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য এন্ট্রাস মিয়া বলেন, গ্রামের দরিদ্র মানুষের আইডি কার্ডের ফটোকপি এনেছি, কারা পেয়েছে সেই তালিকা সম্পর্কে আমার কিছুই জানা নেই।

অপরদিকে দীর্ঘদিনের প্রবাসী আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী পাকা ভবনের মালিক বাঢ়া গ্রামের মো. মফিজ উদ্দিনের পুত্র আব্দুল্লাহ আল মামুনের নাম রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর উপহার নগদ তালিকায়। তিনি বলেন, বিদেশে ছিলাম, এখন ঢাকায় কাজ করছি। আপনাদের বিবেক দিলে দিবেন, না দিলে অভিযোগ নেই। এমন আরও সম্পদশালীদের নামও নগদের তালিকায় দেখে এলাকাবাসী বিস্মিত।

অভিযোগকারী গোলাম মোহাম্মদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী উপহার নগদ টাকার জন্য তালিকা প্রণয়নে একটি কমিটি হওয়ার কথা, সেটা হয়নি। তালিকায় ব্যাপক অনিয়ম-দূর্নীতি হওয়ায় প্রতিকার চেয়েছি।

অভিযোগ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সেঁজুতি ধর বলেন, কোনো অনিয়ম-দূর্নীতি হলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ সব অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে মাওহা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রমিজ উদ্দিন স্বপনের মোবাইলে কল দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

(এস/এসপি/মে ২২, ২০২০)