ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রচ্ছদ » মুক্তচিন্তা » বিস্তারিত

আওয়ামী লীগের আশীর্বাদ না অভিশাপ ? 

২০২০ অক্টোবর ১৩ ১৪:১৮:১০
আওয়ামী লীগের আশীর্বাদ না অভিশাপ ? 

আবীর আহাদ


গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধের মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গতাজ তাজউদ্দিন আহমেদ ও বঙ্গবন্ধু-কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ধারাবাহিক নেতৃত্বের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আজ একটানা বহু বছর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত । আওয়ামী লীগের সাথে এদেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অঙ্গীকার, অর্থনৈতিক-সাংস্কৃতিক মুক্তি, বাঙালির জাত্যাভিমান, জাতীয় মর্যাদা ও গর্ব তথা গণমানুষের আশা-আকাঙ্খা জড়িত ।

মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ এদেশের বৃহত্তম সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ, বিশেষ করে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাণপ্রিয় রাজনৈতিক দল । সেই আওয়ামী লীগ, যে দলটির নেত্রী-নেতা-কর্মীরা দল ও দেশ পরিচালনায় দীর্ঘ সংগ্রাম ও অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ । কিন্তু আজ বাস্তব দৃষ্টিতে বিচার-বিশ্লেষণ করলে, অতি পরিতাপের সাথে বলতে হয়, এতো অভিজ্ঞতা অর্জন করার পরেও দল ও দেশ পরিচালনা করতে তারা, বলা চলে, সীমাহীন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছেন !

আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব মনে হয় বুঝতেই পারছেন না, দল ও রাষ্ট্র পরিচালনায় কাকে কাকে কোথায় কোথায় বসাতে হয় ! আজ তাদেরকে আত্মসমালোচনা ও আত্মশুদ্ধি করতে হবে যে, তাদের দলে ও সরকারে যাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ পদ-পদবী দেয়া হয়েছে, তারা কারা, কী তাদের পরিচয়, কী তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড, তারা কে কোথায় বসে কী করছে ? দল ও সরকার এমন কী দেউলিয়ায় হাবুডুবু খাচ্ছে যে, এতো লক্ষ-কোটি নিবেদিতপ্রাণ ত্যাগী সৎ মেধাবী ও জাতীয় ক্ষেত্রে নানান অবদান রাখা আদর্শবান নেতা-কর্মী ও শুভানুধ্যায়ী থাকতে দলে ও সরকারে আওয়ামী আদর্শ ও চরিত্রবিরোধী লোকদের জামাই আদরে স্থান দিতে হবে ?

আজ তৃণমূল পর্যায়ে দলটি প্রায় পুরোপুরি চলে গেছে তার এমপি-লীগের হাতে, যেখানে সরবে ঠাঁই পেয়েছে বিএনপি, জামায়াত, ছাত্রদল, শিবির, ফ্রিডমপার্টি, রাজাকার সন্তানসহ সমাজের অপরাধীরা ! আর প্রকৃত আওয়ামী লীগের কর্মী ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তানরা তাদের কনুইয়ের গুঁতোয় দল থেকে ছিটকে পড়েছে । এ-অপকর্ম করতে এমপিদের বাধেনি, কারণ তারা অনেকেই ছিলেন ব্যবসায়ী, কালো টাকার মালিক, বা অন্য দল থেকে এসে বিপুল অর্থের বিনিময়ে মনোনয়ন লাভ করে এমপি হয়েছে । তারা আওয়ামী লীগ বা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কোনো ধার ধারে না । তারা এ দলে অর্থের বিনিময়ে এসে যেকোনো ভাবেই হোক অর্থ কামাই করে চলেছে ।

আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক 'নৌকো'কে উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন পর্যায়ে দিয়ে দেয়ার ফলে ঐসব এমপিরা আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের বাদ দিয়ে বিশাল এক মনোনয়ন বাণিজ্য ফেঁদে ভিন্ন দল বা অর্থওলাদের কাছে নৌকো প্রতীক বিক্রি করে দিয়েছে । ফলে তৃণমূলে আওয়ামী লীগ বলতে আছে এমপিদের বশংবদ সমর্থক ও দালালচক্র ! তাদের পদভারে আওয়ামী লীগের আসল নেতা-কর্মীরা মাটির সাথে মিশে গেছে । এভাবে সারা দেশে, বলা চলে, আওয়ামী লীগ আজ সর্বস্তরের অপরাধীচক্রের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে-----ফলশ্রুতিতে সৎ মেধাবী ও ত্যাগী লোকদের পক্ষে দলটির রাজনীতি করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে ।

দেশের মধ্যে আজকে যে সর্বগ্রাসী দুর্নীতি ও লুটপাটের হোলিখেলা চলছে, তার সঙ্গে যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত----তারা কারা ? হাতেগণা দু'চারজন দলীয় পুরনো ব্যক্তি ছাড়া, বাইরে থেকে, অর্থাত্ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধীরা দলে ও সরকারে স্থান করে-নেয়া লোকজনই এসব দুর্নীতি ও লুটপাটের সাথে জড়িত । সুইস ব্যাংক ও পানামাতে যেসব বাংলাদেশী লুটেরাদের বিপুল অর্থ গচ্ছিত রয়েছে বলে বিভিন্ন সময় দেশেবিদেশী মিডিয়ায় যাদের নাম ছাপা হয়েছে, তারা সবাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী----মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কারো নাম পাওয়া যায়নি । এসব অর্থ পাচারকারীরা অধিকাংশই এখন বর্তমান আওয়ামী লীগের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত । এসব দেখে ও বুঝে এতোদিনেও কি আওয়ামী নেতৃত্ব বুঝতে পারছেন না যে, ঐসব দুর্নীতিবাজ লুটেরা মাফিয়া তথা অপরাধী চক্র আওয়ামী লীগের জন্য আশীর্বাদ, না অভিশাপ ? এসব দুর্নীতিবাজ ও লুটেরাগোষ্ঠী কি দল ও রাষ্ট্রের চেয়েও অধিক শক্তিশালী যে, তাদেরকে দল ও সরকারের সাথে জড়িয়ে রাখতেই হবে ? এসব দুর্নীতিবাজ লুটেরা মাফিয়া ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির সাথে আওয়ামী লীগের এমন কী রাখী বন্ধন বাঁধা যে, তাদেরকে নিয়ে পথ চলতে হবে ? জানি এসব প্রশ্নের জবাব কোনো দিনই পাওয়া যাবে না । কেনো পাওয়া যাবে না, তাও সহজে অনুমেয় ।

এসব বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বকে এখনি আত্মসমালোচনা ও আত্মশুদ্ধি করতে হবে । অন্যথায় আজ যে চাকচিক্যময়তা ও ক্ষমতার অন্ধত্বে তারা আবিষ্ট হয়ে আছেন, সবকিছুই রঙিন দেখছেন, কখন যে তা বালির বাঁধের মতো ধসে পড়বে-----সবকিছুই ফিকে হয়ে যাবে-----তা তারা ঘূর্ণাক্ষরেও টের পাবেন না ।

লেখক :মুক্তিযোদ্ধা লেখক গবেষক।