ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রচ্ছদ » মুক্তচিন্তা » বিস্তারিত

‘শঙ্খচুরি খুলে, সিঁদুর মুছে প্রাণে বাঁচালেন নারীরা’

২০২০ নভেম্বর ১২ ১৩:১১:১২
‘শঙ্খচুরি খুলে, সিঁদুর মুছে প্রাণে বাঁচালেন নারীরা’

রণেশ মৈত্র


নিবন্ধটির শিরোনাম ইনভারটেড কমার মধ্যে। অর্থাৎ আমার রচিত নয়। দেখেছি বিগত ৪ নভেম্বরের দৈনিক ভোরের কাগজের প্রথম পৃষ্ঠায়। এটাই আজকের বাংলাদেশের চেহারা। তাই মনে হলো এটাই হবে নিবন্ধটির সঠিক শিরোনাম। তাই বেছে নিলাম শিরোনামটিকে যন্ত্রণাবিদ্ধ হৃদয়ে।

জন্মেছি ১৯৩৩ সালে। দেখেছি ইংরেজ শাসিত ভারত। অত:পর ২৩ বছর ধরে দেখলাম অনাকাংখিত দেশ পাকিস্তানকে। ইংরেজ শাসিত ভারত ১৪ বছর ধরে দেখলাম। তাই মোটমাট ৩৭ বছর থেকেছি পরাধীনতা-আধা-পরাধীনতার নিগঢ়ে শৃংখলিত হয়ে। সকল ঝড়, তুফান, সাইক্লোন মাথার উপর দিয়ে গিয়েছে। ঘর-বাড়ী ভেঙ্গেছে-মানুষ অসহায় হয়ে খোলা আকাশের নীচে বাস করেছে-তাও দেখেছি। কিন্তু সেগুলি তো মানব সৃষ্ট কোন দুর্যোগ ছিল না-ছিল প্রাকৃতিক দুর্যোগ।

মানবসৃষ্ট মুরাদনগর জাতীয় দুর্যোগ ঐ ৩৭ বছরে আদৌ দেখি নি-তা নয়। অবশ্যই দেখেছি ১৯৭১ এর শত্রু সেনা পাকিস্তানী বাহিনীর বর্বরতাকালে। তখন যে দুর্যোগ নেমেছিল তা-সমগ্র বাঙালির জীবনে। সে দুর্যোগ ঠেকাতে সমগ্র জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে ২৩ বছর ধরে আইনী পথে। আর নয় মাস ধরে বাঙালি জাতি করেছে একাত্তরে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ-তারা পরাজিত করেছিল পাকিস্তানী বর্বর সেনা বাহিনীকে।

বাঙালি একাত্তরে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত করেছিল পাকিস্তানী বর্বর সেনাবাহিনীকেই শুধু নয় বরং তার চাইতে অনেক বেশি করে পরাজিত করেছিল। সকল ধর্মান্ধ, বর্বর, সন্ত্রাশ, মানুষের জীবনে দুর্যোগ-দুর্ভোগ সৃষ্টিকারী সকল প্রকার ঘৃণ্য, অমানবিক আদর্শকে। বিজয়ী করে স্বাধীনতা এনেছিল শুধু তাই না। বিজয়ী করেছিল অসাম্প্রদায়িকতা ধর্মনিরপেক্ষতাকে শান্তি, কল্যাণ, সম-অধিকার ও শুভ চিন্তাকে।

আজ ঐ বিজয়গুলি সবই যেন অন্তর্হিত, বিস্মৃত অতীতের বিষয়ে পরিণত। আজকের চিত্র কি? চিত্রটি ফুটে উঠেছে ৪ ও ৫ নভেম্বরের “ভোরের কাগজ” এ যথার্থভাবে নিখুঁতভাবে। সেজন্যে ভোরের কাগজের কুমিল্লা ও মুরাদনগর প্রতিনিধি অভিজিত ভট্টাচার্য্য ও এম, ফিরোজ মিয়া এবং নিউজ ডেস্ককে অভিনন্দন।

ঐ খবরে লেখা হয়েছেঃ

কোরবানপুর বাজার পেরিয়ে ডানদিকের রাস্তা ধরে খানিকটা এগিয়েই দেখা গেল একটি বাড়ীর সামনে জনাকয়েক পুলিশ বসে আছেন। তাদের পাশ কাটিয়ে ভেতরে ঢুকতেই একে একে বীভৎসতার চিহ্ন আসতে লাগল। সুবম্য অট্টালিকার বাইরের দেয়ালে সাদা রং এর উপর আগুনের কালো ধোঁয়ার ছাপ এখনও লেগে আছে। ভেতরে প্রত্যেকটা কক্ষ ভাঙ্গাচোরা। পাশে থাকা টিনের চালার ঘরটি আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। পোড়া থেকে বাদ যায় নি খাবারের থালা চায়ের কাপ প্লেটসহ অন্যান্য তৈজসপত্র। পুড়ে গেছে কালী মন্দির, মনসা মন্দির। চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অজস্র পোড়া জিনিষ। এসবের পাশে মানুষের আহাজারি ও আর্তনাদ। সবার একই কথা, মৃত্যুর মুখ থেকে তাঁরা ফিরে এসেছেন।

সেদিন কী ঘটেছিল মুরাদনগরের বাঙ্গরা থানার ৪ নং পূর্ব ধৈল ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান বনকুমার শিবের বাড়ী সহ আশপাশের অন্যান্য হিন্দুদের বাড়ীতে-এমন প্রশ্নের উত্তর খোঁজার মাঝেই সামনে এসে দাঁড়ান গৃহবধূ সান্তনা রানী সিংহ। কান্নাচাপা কণ্ঠে বলেন, জানেন, সেদিন নিজের জীবন বাঁচাতে হাত থেকে শঙ্খের চুরি (শাঁখা) খুলে ফেলেছি। কপাল থেকে সিঁদগুর মুছে দিয়েছি। পার্শ্ববর্তী মুসলমান বাড়ীতে গিয়ে ১৩ বছরের মেয়ে এবং ৮ বছরের ছেলেকে নিয়ে প্রাণ ... বাঁচিয়েছি। ওখানেও ওরা গিয়েছিল। বলেছি আমরা ‘মুসলমান’। প্রাণে বাঁচলেও নিজের ঘরকে বাঁচাতে পারি নি। ওরা নিমেষের ম ধ্যে আমাদের পেট্রোল ও গান পাউডার দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুনের লেলিহান শিখায় ঘর পোড়ার পাশাপাশি আমার বিয়েতে বাপের দেওয়া সোনার গহনা পুড়ে ছাই হয়ে যায়। প্রয়োজনের জন্য ঘরে রাখা ২০ হাজার টাকাও পুড়ে গেছে। এতে শুধু ছাই হওয়া নয়, বাপের বাড়ীর স্মৃতিটুকুও শেষ এটুকু বলেই কান্না আর চেপে রাখতে পারলেন না।

ঘটনার কারণ হিসেবে ভূক্তভোগীরা বলেছেন, ফ্রান্সের ঐ ঘটনার পর দিনকয়েক আগে ফেসবুকে প্যারিস থেকে একজন ষ্ট্যাটাস দেন। ঐ ষ্ট্যাটাসে ‘সহমত’ জানিয়ে এখানকার শংকর দেবনাথের ঐ লেখাকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন ধরে পূর্ব ধৈল ইউনিয়নের এই পাড়াটি উত্তপ্ত ছিল। পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যেতে পারে চেয়ারম্যান বনকুমার শিব পুলিশের হাতে তুলে দেন শংকর দেবনাথকে। এরপর গত শুক্রবার স্থানীয় কোবরানপুর বাজারে এলাকার তিন চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করে এলাকাবাসী। এসময় চেয়ারম্যানরা ঘটনার বিচারের আস্বাস দিলে জনতা শান্ত হয়। কিন্তু শনিকবার থেকে আবার বিষয়টি ঘোঁট পাকাতে থাকে। পরে শনিবারেই সাব্যস্ত হয় রবিবারে সালিশ বিচার বসবে।

মুরাদনগর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো: রফিকের নেতৃত্বে বিচার শুরু হয়। বিচারের এক পর্য্যায়ে উপস্থিত জনতা দুভাগ হয়ে যান। এক ভাগ বলেন, শংকরকে যখন পুলিশ ধরেছে তখন দেশের প্রচলিত আইনেই বিচার হবে। আর এক পক্ষ বলতে শুরু করে ইসলাম অবমাননার দায়ে অভিযুক্ত শংকরকে বাঁচাতে ইচ্ছে করেই পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন চেয়ারম্যান বনকুমার শিব। শংকরকে তৌহিদী জনতার হাতে তুলে দিতে হবে। ইসলাম অবমাননার বিচার তৌহিদী জনতাই করবে। এ অবস্থায় বিচারসভা পর হয়ে যায়। এর পর চেয়ারম্যান বনকুমার শিব চলে যান স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের সভায়।

এদিকে বিচার না মানা অংশটি এলাকায় মাইকিং করে রবিবার বেলা তিনটায় আবার মিটিং ডাকে। এ ছাড়া পাশ্ববর্তী এলাকা থেকেও লোকজন জড়ো করা হয়। এর পরই ‘নারায়ে তকবির-আল্লা হো আকবর’ শ্লোগান দিয়ে উত্তেজিত জনতা প্রথমে শংকর দেবনাথের বাড়ীতে চড়াও হয়। নিমেষেই সে বাড়ীটি তছনছ করা হয়। সেখান থেকে বেরিয়ে স্থানীয় কালী মন্দির, মনসা মন্দির ও পরে মুরাদনগরের ৪ নং পূর্বধৈল ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান বনকুমার শিবের বাড়ীতে ভাঙচুর, লুটপাট ও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। চেয়ারম্যানের বাড়ীতে আগুন দেওয়ার সময় আক্রমনকারীরা শ্লোগান দিচ্ছিল, “চেয়ারম্যানের চামড়া-তুলে নেব আমরা”। উল্লেখ্য, হামলার সময় চেয়ারম্যান বাড়ীতে ছিলেন না। পরে জীবন বাঁচাতে আত্মগোপনে চলে যান তিনি।

গত মঙ্গলবার আক্রান্ত হওয়া ঐসব বাড়ীঘর সরেজ মিন ঘুরে সাংবাদিকেরা দেখেছেন বাসিন্দাদের চোখেমুখে এখন ও আতংক। কেউ কথা বলছেন না। শুধু শূণ্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। গত দিনদিন ধরে তাদের বাড়ীতে রান্না হচ্ছেন। এর ওর বাড়ী থেকে খাবার পাঠাচ্ছে। সঙ্গে কাপড়ও। কারণ পরনের কাপড় ছাড়া সব কিছুই জ্বালিয়ে দিয়েছে দৃস্কৃতিকারীরা।

কেন এমনটা ঘটলো? এমন প্রশ্নের উত্তরে ক্ষতিগ্রস্ত সন্দীপ কুমার শিব বলেন, হামলার কারণ এখনও বোঝা যাচ্ছে না। শুধু ইসলাম অবমাননার অভিযোগে এমন ঘটনা ঘটেছে, নাকি এর পেছনে অন্য কিছু লুকিয়ে আছে তা বের করতে হয়তো সময় লাগবে তবে এ ঘটনায় আমার সব শেষ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, গত ১২ বছরে শ্রীমঙ্গল, কমলগহ্জ, ভানুগাছ থেকে তিন লাখ টাকার আসবাবপত্র কিনেছি, টিনের বেড়া দিয়ে ঘর তুলেছি-আগুনে তার সবই পুড়ে গেছে।
ঘরে আগুন দেওয়ার সময় আপনি কোথায় ছিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে চোখের জল মুছে তিনি বলেন, আমি ঐ কোনায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। ওরা আমাকে চিনতে পারে নি। প্রথ্যেকের বয়স ১৭/১৮ হবে এবং তারা অন্য এলাকার। আমারই সামনে আমারই ঘর, আসবাবপত্র, খাবারের থালা, কাপ-প্লেট সব পুড়ে ছাই হয়ে গেল। কথায় যোগ দিয়ে স্তানীয় পল্লী চিকিৎসক রতন বলেন, ওরা ওই সময় এত উগ্র ছিল যে ভয়ে আমাদের প্রাণ যায় যায় অবস্থা।

এই কথোপকথনের সময় ওই বাড়ীতে আসেন ৭৭ বছরের বৃদ্ধ হাজি আবদুল রউফ। এসেই তিনি হাঁউ মাউ করে কাঁদতে সুরু করেন। এক পর্য্যায়ে কান্না থামিয়ে তিনি বলেন, ঘটনার পর তিন দিন পার হয়ে গেল বাবা কিন্তু কিভাবে ঘটলো তা বলতে পারব না। বলেই ফের কান্না সুরু করেন ওই বৃদ্ধ।

ঘুরে ঘুরে সাংবাদিকেরা দেখেছেন, চেয়ারম্যান বনকুমার শিব এবং তাঁর কাকাতো ভাইদের ঘর আগুনে পোড়ালেও পার্শ্ববর্তী ঘর অক্ষত ছিল। পাশের ঘর অক্ষত কেন জানতে চাইলে যাটোধ কল্পনা রানী দেবী বলেন, মুসলমানের ঘর পরিচয় দিয়ে ঘরটি রক্ষা করা গেছে। কারণ হামলা হবে টের পেয়ে বাড়ীর ছেলেমেয়েদেরকে অন্য বাড়ীতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ঐ গ্রামে তিন শতাধিক হিন্দু পরিবার বাস করেন। সবাই নিরাপত্তাহীন। রীতা দেবনাথা নামে আর এক নারী বলেন, ঘটনা ঘটেছে রবিবার দুপুর আড়াইটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্য্যন্ত। এর দুদিন আগে লক্ষ্মীপুজা ছিল। প্রায় হাজার দেড় হাজার লোক পূজায় আমাদের বাড়ী এসেছে। নাড়– খেয়েছে। যারা নাড়ু খেয়েছে তাদের অধিকাংশ হামলার দিনেও উপস্থিত ছিল।

চেয়ারম্যান বন কুমার শিবের বাড়ীটি দোতলা। গত সোমবার তার ভাতিজার বিয়ের আর্শীবাদ হওয়ার কথা ছিল। এ উপলক্ষ্যে চেয়ারম্যানের বাড়ীতে লক্ষ্মীপূজার দিন থেকেই আত্মীয়স্বজন জড়ো হয়েছিলেন। দুদিন ধরে বাড়ীতে বিয়ের আনন্দ। রবিবার দুপুর আড়াইটার দিকে তারা সবাই খেতে বসবেন। ঐ সময়ই “তৌহিদী জনতার” মিছিল চেয়ারম্যানের বাড়ীর দিকে যাত্রা সুরু করে। খবরটি জেনেই খাবার বন্ধ। সব মহিলা ও শিশুকে দোতলায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আক্রমণকারীরা দোতলায় উঠবে প্রতিবেশী শফিকুল ইসলাম ফাঁকফোঁকড় দিয়ে দোতলায় উঠে যান। সেখানে তিনি সব হিন্দু মহিলাকে হাত থেকে শঁখা খুলে ফেলতে বলেন। কপালের সিঁদুর মুছে দেন। আক্রমণকারীরা উপরে উঠে মহিলাদের মারতে চাইলে শফিকুল ইসলাম বলেন, ওরা মুসলমান। চেয়ারম্যানের কাছে কাজে এসেছিল। ওদের তোমরা মেরো না। তখন আক্রমণকারীরা মহিলাদেরকে মারল না বটে, তবে তাদের গায়ে থাকা সোনার গহনাপত্র নিয়ে যায়।

এ সময় তারা প্রত্যেকটি কক্ষ ভাংচুর করে। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় চলে যাওয়র সময় পাশের একচালা টিনের ঘরেও হামলা চালায়। সেখানে চেয়ারম্যান বনকুমার শিব একটি পরিবারকে আশ্রয় দিয়েছেন-গত তিন বছর ধরে তারা ঐ বাড়িতে আশ্রিত। পৈত্রিক জমি বিক্রীর সাতলাখ টাকাও ছিল তাদের কাছে। রেখেছিলেন ঘরের ভিতরে একটি ড্রয়ারের মধ্যে। আগামী শীতে নিজস্ব জমিতে তাদের ঘর তোলার কথা ছিল। আগুনে তাদের সাত লাখ টাকই পুড়ে গেছে। সব হারিয়ে ঐ বাড়িতে আশ্রয় নেওয়া গোপনে দেবনাথ বলেন, বাবা, আমার নামটা একটু লেখ। যদি কোন সাহায্য পাই। আমার তো কিছুই না।

পরদিন ৫ নভেম্বরের ভোরের কাগজের ফলো-আপ খবর পরিবেশন করেন ঐ দুজন সাংবাদিক। “মুরাদনগর তা-বে অংশনেয় ১০ গ্রামের লোক” শিরোনামে প্রকাশিত ঐ খবরে লিখা হয়ঃ

নেতাকর্মীদর কেমন যেন গা ছাড়া ভাব। তবে আক্রান্তদের মনোবল চাঙ্গা করতে আসবেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার। তাঁর সঙ্গে থাকবেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব বলে জানা গেছে।

আক্রান্ত হিন্দুদের অনেকেই গত বুধবার বলেছেন, হামলায় পার্শ্ববর্তী ১০ গ্রামের লোকজন অংশ নিয়েছে। গ্রামগুলো হচ্ছে মুরাদনগরের ডালপাড়, জানঘর, হীরাপুর, খোশঘর, এলখলি, ফুলঘর, বাড়েস্বর, কসবা, পা-ুঘর এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া এসব এলাকার লোকজনকে রবিবার সকাল থেকেই কোরবানপুর বাজারের পাশের একটি এতিমখানায় এনে রাখা হয়। এদিন দুপুররে ঐ এতিমখানায় ভাল খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন ছিল। এরপর এরা মিছিল নিয়ে বের হয়। এই মিছিলে যোগ দেয় আগে থেকে চলতে থাকা জামায়াতে ইসলামীর লোকজন। এরপরই পাল্টে যায় পরিস্থিতি।

আগের রাতে মুরাদনগরের কোরবানপুর বাজার লাগোয়া বাড়ীতে গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী আবদুল আবিদ এলাকাবাসীদের নিয়ে মিটিং করেন। পরদিন রবিবার দুপুরে কাউসার নামে একজন মাইকিং করে জমায়েতের ডাক দেয়। সেই জমায়েত থেকে মিছিল নিয়ে পূর্বধইর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বনকুমার শিবের বাড়ীসহ স্থানীয় হিন্দুদের বাড়ীঘরে হামলা চালানো হয়।

ঘটনার পরে থেকে আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্য্যায়ের কোন নেতাও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন নি বলে জানা যায়। কোরবানপুরের বাসিন্দারা জানান, আক্রমণকারীরা ঈস্খথমেই হামলা চালায় শংকর মাষ্টারের বাড়ীতে। সেখানে আগুন দেওয়ার পর পরই গ্রামবাসী ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়। যদিও “তৌহিদী জনতা”র বাধার মুখে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে যেতে পারে নি। হামলার খবর পেয়ে তিন গাড়ী পুলিমও আসে। কিন্তু তা-বলীলা দেখে বাজারের এক কোনায় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন পুলিশ সদস্যরা।

এখন দেখা যাচ্ছে, এই মুরাদনগরই আজকের বাংয়লাদেশের প্রকৃত প্রতিচ্ছবি। জামায়াতের ষড়যন্ত্রে, বিএনপির মদদে ঘটনাটি গ্রামবাসীর একাংশ এবং আরও ১০ গ্রামের দুবৃর্ত্তরা ঘটিয়েও থাকেন আওয়ামী লীগ নীরব কেন? তাদেরও মদদ ছিল এমনটি মনে করা কি ঘটনাক্রম পর্য্যালোচনায় অস্বাভাবিক বলে আদৌ মনে হবে। ঘটনার দিন তারা যান নি যান নি তার পরদিনও। সুতরাং ধারণাটা উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। আর ঐ হিন্দুরা দেশত্যাগী হলে তো তাদের লাভ। বাড়ীঘর জমিজমা দিব্যি দখল করে নেওয়া যাবে।

আর পুলিশ?পুলিশও কি চুপচাপ দাঁড়িয়ে মজা দেখলেন? দুর্বৃত্তদেরকে প্রতিরোধ না করে, গ্রেফতার না করে সন্ত্রাসীদের মত হিন্দুবাড়ী পোড়ানোরও লুটপাট না থামিয়ে “ছওয়াবের” ভাগীদার হলেন?

এ দেশে থাকতে হলে কি বিবাহিত হিন্দু মহিলাদের শাঁখা সিঁদুর খুলে ফেলে দিতে হবে। হিন্দুদেরও অঙ্গচ্ছেদ করতে হবে? এর অর্থ, মুসলমান হও। থাকলো কি নিজ নিজ ধর্মপালনের স্বাধীনতা?

সর্বশেষ খবরে জানা গেল, ঐ গ্রামের হিন্দুরা নিরাপত্তাবোধ এবং প্রাণে বাঁচার নিশ্চয়তার অভাবে দলে বলে গ্রাম ছেড়ে কুমিল্লা শহরে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁরা বাড়ীতে ফিরতে পারলো কি আদৌ? গ্রামে যদি ফিরিয়ে আনাও হয় বাড়ীঘর পুন: নির্মাণ ও রুজি রোজগারের ব্যবস্থা ফিরবে?
মুরাদনগরই আসল বাংলাদেশ।

লেখক : সভাপতি মন্ডলীর সদস্য, ঐক্য ন্যাপ।