ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » মুক্তচিন্তা » বিস্তারিত

১ ডিসেম্বরকে 'মুক্তিযোদ্ধা দিবস' ঘোষণা করুন

২০২০ নভেম্বর ২৬ ১২:০০:৩০
১ ডিসেম্বরকে 'মুক্তিযোদ্ধা দিবস' ঘোষণা করুন

আবীর আহাদ


১৯৭১ সনের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণার দিন থেকে মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের দীর্ঘ ন'টি মাসের প্রতিটি দিনই ছিলো মুক্তিযোদ্ধাদের দিবস । তারপরও মুক্তিযোদ্ধাদের সীমাহীন শৌর্য ত্যাগ ও বীরত্বের মহিমাকে একটি প্রতীকী সত্তায় নির্ধারণ করার লক্ষ্যে বছরের তিনশত পঁয়ষট্টি দিনের মধ্যে একটি দিনকে তাঁদের নামে একটি 'দিবস' হিশেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হলে তাঁদের মর্যাদা বৃদ্ধি পায় বলে গোটা বাঙালি জাতিও মনে করে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস । মনে রাখতে হবে, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা বৃদ্ধি পেলে মুক্তিযুদ্ধ সমৃদ্ধ হয়; সর্বোপরি বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আরো বেশি মহিমান্বিত হন ।

সেই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আজ থেকে বেশ ক'টি বছর পূর্ব থেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিভিন্ন রাজনৈতিক, মুক্তিযোদ্ধা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহ স্ব-উদ্যোগে যথাযথ মর্যাদার সাথে ১লা ডিসেম্বরকে 'মুক্তিযোদ্ধা দিবস' হিশেবে পালন করে আসছে । এ-উদ্যোগটির পশ্চাতে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী আওয়ামী লীগের প্রচ্ছন্ন সমর্থনও ছিলো এবং এখনো আছে বলে আমরা জানি । বিশেষ করে আওয়ামী লীগের তৎকালীন প্রভাবশালী নেতা, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক প্রয়াত জাতীয় নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা জননেতা আবদুর রাজ্জাক, জাতীয় নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা তোফায়েল আহমেদ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কমরেড রাশেদ খান মেনন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডারসহ আমরা অনেক নেতৃস্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ১লা ডিসেম্বরকে মুক্তিযোদ্ধা দিবস ঘোষণা দিয়ে বহু পূর্ব থেকে মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ, মতবিনিময় সভা ও আলোচনা সভা করে আসছি । এরই ধারাবাহিকতায় অনেক সরকারের আসা-যাওয়ার পর আজ আওয়ামী লীগ তো একনাগাড়ে বহু বছর রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রয়েছে, কিন্তু এখনো পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা দিবসটিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হচ্ছে না----এটা সত্যি বড়ো বেদনার কথা ! বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে একটি দিবস ঘোষণা করা হলে যে আওয়ামী লীগের মর্যাদা বাড়ে, এ সরল হিশেবটি যারা বুঝতে পারেন না, তাদের জন্য আসলে করুণাই করতে হয় । মুক্তিযুদ্ধের নামে রাজনীতি করবেন, মুক্তিযুদ্ধের নামে রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত আছেন, মুক্তিযুদ্ধের রূপকার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সীমাহীন শৌর্য ত্যাগ রক্ত ও বীরত্বে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে জীবনে যিনি যা স্বপ্নেও কল্পনা করেননি তাই হয়েছেন হচ্ছেন ও হতে থাকবেন----অথচ সেই বীরদের অবদানের স্বীকৃতি দিতে কুণ্ঠাবোধ করবেন----এটা কোন ধরনের অকৃতজ্ঞতা ?

আমরা আশা করবো, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চলমান জন্মশতবার্ষিকীর মধ্যেই এখন থেকে বঙ্গবন্ধুর মানসসন্তান হিশেবে মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করে রাষ্ট্রীয়ভাবে ১লা ডিসেম্বরকে 'মুক্তিযোদ্ধা দিবস' ঘোষণা করে একটি ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করবেন ।

লেখক :চেয়ারম্যান, একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।