ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » দেশের খবর » বিস্তারিত

মৌলভীবাজার হাসপাতালে কার্ডিওলজি পদ শুণ্য, মাসে শতাধিক হৃদরোগী রেফার্ড হয় বিভিন্ন হাসপাতালে!

২০২০ নভেম্বর ২৮ ১৭:৩৮:১৪
মৌলভীবাজার হাসপাতালে কার্ডিওলজি পদ শুণ্য, মাসে শতাধিক হৃদরোগী রেফার্ড হয় বিভিন্ন হাসপাতালে!

মো.আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার : দেশে হৃদরোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে আর এযাত্রায় পিছিয়ে নেই মৌলভীবাজারও। মৌলভীবাজার সদর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন গড়ে ৩ থেকে ৪জন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছেন। এই হাসপাতালে দীর্ঘদিন যাবত ঝুলে আছে কার্ডিওলজি বিভাগের শূণ্য পদের পদায়ন। শুধুমাত্র জরুরী চিকিৎসা পেয়ে কোন রকম হাসপাতাল ত্যাগ করছেন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এখানে আসা রোগীরা। তবে এখানে হৃদরোগের চিকিৎসক সঙ্কটের কারনে প্রতিদিন আক্রান্তরা সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল,রাগিব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল,নর্থসাউথ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ সিলেটের সরকারি-বেসরকারী অন্যান্য হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে ভর্তি হচ্ছেন। অনেকে আবার অবস্থা আশঙ্কা জনক হলে ভর্তি হচ্ছেন রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন বিশেষায়িত হাসপাতালে। তবে অনেক সময় হাসপাতাল থেকে রেফার্ড হওয়া রোগীরা অন্য হাসপাতালে পৌঁছার পূর্বেই রাস্তায় গাড়িতেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন।মৌলভীবাজার সদর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিন ৩-থেকে ৪ জন হৃদরোগে আক্রান্ত রোগী ভর্তি হলে প্রতি মাসে এর সংখ্যা দাঁড়ায় শতাধিকের উপরে।

গত ২৩ নভেম্বর রাত ৮টার দিকে হটাৎ করে শরীরে শ্বাষকষ্ট বেড়ে গেলে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালে জরুরী চিকিৎসা নিতে ভর্তি হন মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ১২নং গিয়াসনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তিনি হাসপাতালের জরুরী বিভাগে গেলে তার শরীর প্রচুর পরিমান ঘেমে যায়। পরবর্তীতে ইসিজি পরীক্ষা করানো হলে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি ধরা পড়ে। এর কিছুক্ষণ পর রাত ৯টা ২০ মিনিটের দিকে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ও চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফার ছেলে গোলাম মোশাররফ টিটু জানান, তার বাবাকে হাসপাতালে নেওয়ার সময় শরীরে প্রচুর পরিমানে ঘাম শুরু হলে ধারণা করেন তিনি হার্ডএ্যটাক করেছেন। তিনি জানান, এখানে নুন্যতম চিতিৎসা নেই, হাসপাতালে জরুরী বিভাগে নিয়ে গেলেও চিকিৎসা অবহেলাসহ পাওয়া যায়নি চিকিৎসক। অক্সিজেন সিলিন্ডার থাকলেও ছিলনা তাতে গ্যাস, এমন পরিস্থিতিতে অনেকটা বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয় আমার বাবার।

বিএমএ মৌলভীবাজার জেলা শাখার সাবেক সভাপতি ডা: এম,এ আহাদ বলেন, যেভাবে হৃদরোগীর সংখ্যা বাড়ছে তাতে কনসালটেন্ট হিসেবে নতুন করে পদায়ন করা না হলে এই সঙ্কট আরো বাড়বে, কারন মফস্বলে এতো রোগীর চাপ কিভাবে সামলাবে কর্তৃপক্ষ প্রশ্ন রাখেন তিনি।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৪ সালের ৮ জানুয়ারি ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল হিসেবে এর কার্য্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে ২০০৬ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ১০০ শয্যায় উন্নীত হওয়ার পর হাসপাতালের নতুন ভবনের কাজ শুরু হলে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে নতুন ভবনের কাজ সমাপ্ত হলে ১০০ শয্যা হতে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। এর পর ২০১২ সালে পহেলা ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের নতুন ভবন উদ্বোধন করেন। এরপর থেকে ২৫০ শয্যা হাসপাতালের কার্য্যক্রম সম্পূর্ণ রূপে চালু করা হয়। ২৫০ শয্যা হাসপাতাল হিসেবে উন্নীত করা হলেও সে অনুপাতে চিকিৎসা সেবার মান বাড়েনি বলে অনেকের ধারণা। তবে জনবল সঙ্কট সব সময় হাসপাতালের সেবা কার্যক্রমকে ব্যাহত করে আসছে। বর্তমানে হাসপাতালে সর্বমোট ৩৩ জন চিকিৎসক কর্মরত থাকলেও চাহিদা রয়েছে ৫৩ জনের। এক্ষেত্রে বিভিন্ন বিভাগে প্রায় ১৯টি শূণ্য পদ রয়েছে। যার ফলে চিকিৎসা কাজ দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা: আহমেদ ফয়সল জামান জানান, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে যারা আসেন তাদেরকে আমাদের মেডিসিন বিভাগসহ যারা সিনিয়র কনসালটেন্ট হিসেবে আছেন তারাই ইসিজিসহ জরুরী চিকিৎসা দিয়ে তাদেরকে রেফার্ড করা হয় সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

তিনি বলেন, হৃদরোগের চিকিৎসার জন্য ইতিমধ্যে ২জন কার্ডিওলজি বিভাগের চিকিৎসকের বিষয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে সেই সাথে হৃদরোগে আক্রান্তদেও জন্য চিকিৎসকের পাশাপাশি জনবলসহ এবং সিসিউর চাহিদা পত্রও পাঠিয়েছি। তিনি বলেন,সারা দেশের হাসপাতালগুলোতে আইসিউ,সিসিউ চালুর ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে।

এদিকে গত ১৪ নভেম্বর মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতাল পরিদর্শনে আসেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোঃ মুহিবুর রহমান। এদিন সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত হাসপাতালের তত্তাবধায়ক ও আবাসিক মেডিকেল অফিসারসহ বিভিন্ন বিভাগে কর্মরত চিকিৎসকদের সাথেও বৈঠকে মিলিত হন তিনি।

জানা যায়, এই বৈঠকে হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্তদের জন্য ২জন কার্ডিওলজি চিকিৎসক, সিসিউ এবং জনবল ও চিকিৎসক সঙ্কটসহ নানা বিষয় তুলে ধরেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

মৌলভীবাজর ২৫০শয্যা হাসপাতালের তত্তাবধায়ক ডা: পার্থ সারথি পাল কাননগো বলেন, কার্ডিওলজি বিভাগের পদটি সারা দেশেই খালি রয়েছে,আগামী ডিসেম্বরের দিকে কার্ডিওলজি বিভাগে কনসালটেন্টের শুণ্য পদ পুরণ হবার সম্ভাবনা রয়েছে। আশা করছি শূণ্য পদ পূরণ হলে এই সঙ্কট কিছুটা দূর হবে।

তিনি বলেন, কনসালটেন্ট হিসেবে নতুন পদায়নকৃতরা করোনার কারনে এতদিন কর্মস্থলে যোগ দিতে বিলম্ব হয়েছে।

(একে/এসপি/নভেম্বর ২৮, ২০২০)