ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রচ্ছদ » রাজনীতি » বিস্তারিত

করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় লেজেগোবরে অবস্থা

২০২১ জানুয়ারি ২২ ১৫:৪৭:৪৬
করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় লেজেগোবরে অবস্থা

স্টাফ রিপোর্টার : ‘সরকার শুরু থেকেই কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলা নিয়ে লেজেগোবরে অবস্থা করে ফেলেছে’ মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের আতঙ্ক ও ভীতির সুযোগে ত্রাণ বিতরণের নামে সারাদেশে দুর্নীতি ও লুটপাট, ক্ষমতাসীন দলের প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ সহযোগিতায় কোভিড-টেস্টের ভুয়া সনদপত্র কেলেঙ্কারি, করোনা চিকিৎসার নামে ভুয়া হাসপাতাল চালু, মাস্ক, পিপিই সরঞ্জাম, স্যানিটাইজার খরিদ-টেন্ডার নিয়ে দুর্নীতির মহোৎসব- এতসব অপকর্ম করে জনগণের কাছে এই সরকারের কোনো বিশ্বাসযোগ্যতা নেই।

তিনি বলেন, এরপর করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ভারত থেকে টিকা আমদানি ও ক্রয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অন্যতম এক উপদেষ্টার মালিকানাধীন বেক্সিমকোর অতিমাত্রায় তৎপরতা, চুক্তি, বেক্সিমকোর তৎপরতার সঙ্গে সরকারের রহস্যজনক আর্থিক লেনদেনের যোগসাজশ- সবমিলিয়ে টিকা সম্পর্কেও জনমনে নানা প্রশ্নের উদ্রেক করেছে।

শুক্রবার (২২ জানুয়ারি) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রিজভী আহমেদ।

রিজভী বলেন, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম রয়টার্স তার প্রতিবেদনে বলেছে, ‘ভারত করোনাভাইরাস ট্রায়ালের জন্য বাংলাদেশে পাঠিয়েছে’ অর্থাৎ বাংলাদেশের মানুষের ওপর এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে ভারত যদি দেখে এটা নিরাপদ তখন তারা ভারতের জনগণকে এই ভ্যাকসিন দেবে। উল্লেখ্য যে, ভারত নিজেরা এর পরীক্ষা শুরু করবে আগামী মার্চ থেকে। ওই টিকার তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল শেষ না হওয়া সত্ত্বেও ভারত সরকারের ছাড়পত্র পাওয়ায় বহু বিশেষজ্ঞ বিস্মিত। সুতরাং আমরা কী বিপজ্জনক গিনিপিগে পরিণত হয়েছি ভারতের টিকা পরীক্ষার।

তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতিতেই বৃহস্পতিবার ভারত সরকারের সৌজন্যে বাংলাদেশে ২০ লাখ ডোজ টিকা পাঠানো হয়েছে। এ নিয়েও জনমনে রয়েছে গভীর সন্দেহ-সংশয়। ভারতে টিকাগ্রহণের পর চারদিনে মারা গেছে তিনজন। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ছয়শ। এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির চিকিৎসকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিতর্কিত কোভ্যাক্সিন টিকা নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন দেশটির চিকিৎসকদের বড় অংশ। তারা বলেছেন, ‘কোভ্যাক্সিন নিয়ে আমরা সন্দিহান ও সংশয়ী।’ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে নানা ধরনের খবর প্রকাশিত হওয়ায় এনিয়ে ঘোরতর রহস্য তৈরি হয়েছে।

বিএনপির এ মুখপাত্র আরও বলেন, উপহারের নামে ২০ লাখ ডোজ টিকা দেয়ার পরও মানুষের মনে সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টির আরেকটি কারণ হচ্ছে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সিরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে ভারত সরকার যে দামে ‘কোভিশিল্ড’ কিনছে তার চেয়ে এক ডলার বেশি দামে তারা বিক্রি করছে বাংলাদেশের কাছে। কেনার সময় প্রতিটি টিকায় বাংলাদেশকে এক ডলার করে বেশি দিতে হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে শত শত কোটি টাকা অতিরিক্ত মুনাফা নেয়ার পর প্রথমে বাংলাদেশ চায় অগ্রিম নগদ টাকায় কেনা টিকার সরবরাহ। সেটি সরবরাহ না করে তড়িঘড়ি করে ঢাকঢোল পিটিয়ে বিনাপয়সায় ২০ লাখ ডোজ দিয়ে কী বোঝাতে চাইলেন। ধরা যাক তিন হাজার টাকা মূল্যের জিনিস পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে ক্রয় করার পর দোকানি ১০০ টাকা উপহার দিল, সেটাকে আমরা কী বলব? উপহাস ছাড়া কি আর কিছু বলা যাবে।

তিনি বলেন, সরকার আগে জনগণকে টিকা দিতে চায়। এতে করে গণমানুষের মনে সন্দেহ ঢুকেছে। বাংলাদেশের প্রচলিত রেওয়াজ হচ্ছে, যখন কোনো সরকারি সুযোগ-সুবিধা এবং সেবা দেয়া হয় শুরুতেই তা ক্ষমতাসীন ও সরকার সমর্থক প্রভাবশালী লোকজন ভোগ করে থাকে। ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী, এমপি, নেতা, প্রশাসনের উচ্চপর্যায়োর কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ী শ্রেণির উচ্চপর্যায়ের লোকজন সকল সরকারি সুযোগ-সুবিধা ও সেবা সর্বপ্রথম ভোগ করে থাকে। কিন্তু করোনার টিকার বেলায় ভিন্ন ব্যবস্থার কথা সরকারি দলের মন্ত্রীদের মুখে শোনা যাচ্ছে। তারা যখন বলেন, করোনার টিকা সরকারি মন্ত্রী-এমপিরা আগে পাবেন এমন ব্যবস্থা করা হয়নি তখন দেশের মানুষ কনফিউজড হয়ে পড়ে। সরকারের প্রতি আস্থার অভাবের কারণেই মানুষ চিন্তিত হয়ে পড়ে। বিশেষ করে কোনো কোনো মন্ত্রী যখন বলেন, বিএনপি চাইলে করোনার টিকা তাদের সবার আগে দেয়া হবে, তখন এই টিকার প্রতি মানুষ গভীর ষড়যন্ত্র খুঁজে পায়।

রিজভী বলেন, উপহার পাওয়া টিকা যদি ‘কোভিশিল্ড’ হয় তাহলে সেই টিকা সর্বপ্রথম রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রিপরিষদ নিতে পারেন। নিতে পারেন উচ্চপর্যায়ের আমলা ও ক্ষমতাসীন ব্যক্তিরা। তাহলে মানুষের মনে সংশয় নিরসন হবে।

(ওএস/এসপি/জানুয়ারি ২২, ২০২১)