ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রচ্ছদ » ফিচার » বিস্তারিত

ই-কমার্সে এমএলএম সিস্টেম! দ্বিধা-দ্বন্দ্বের নিরসন হওয়া জরুরী

২০২১ জানুয়ারি ২৩ ১৪:০২:২৭
ই-কমার্সে এমএলএম সিস্টেম! দ্বিধা-দ্বন্দ্বের নিরসন হওয়া জরুরী

ওয়াজেদুর রহমান কনক : ই-কমার্স আর এমএলএম কোম্পানীকে গুলিয়ে ফেললে, এমএলএম কোম্পানীর কোন ক্ষতি নাই, ক্ষতিটা আসলেই যা হওয়ার ই-কমার্সেরই হবে । এমএলএম কোম্পানী গুলো সেটাই চাইছে কিভাবে ই-কমার্স আর এমএলএ সিস্টেমকে এক করে তাদের ‘বসে খাওয়ার’ বন্দোবস্তটা পাকাপোক্ত করে নেওয়া যায় । এমএলএম কোম্পানী গুলোর বসে বসে খাওয়ার মনোবৃত্তি থাকায় প্রকৃতপক্ষে এখন পর্যন্ত কোন কোম্পানী শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে পারেনি । এমএলএম সিক্টেম এদেশে দাঁড়াতে পারবে কি পারবে না-এই ভবিষ্যতবাণী করার আমাদের কারো পক্ষে সম্ভব নয় । এখন সরকার যদি এমএলএম সিস্টেমকে স্বীকৃতি দেয়, সেখানেতো কারো কিছু করার নাই; আর যদি সরকার স্বীকৃতি না দেওয়ার পরও কেউ এটাকে সিস্টেমে আনতে চায়-তখন তো কিছু না কিছু বলার, কিছু না কিছু করার অধিকার একজন নাগরিক হিসেবে আমাদের সকলেরই আছে ।

এখন প্রশ্ন হলো এমএলএম কোম্পানী ব্যবসা করলে ই-কমার্সের ক্ষতিটা কিভাবে হয় । এটার উত্তরটা আসলে গুরুগম্ভীর কিছু নয়, আলটিমেটলি সব কিছু মানুষের জন্যই । যেমন রাজনীতিবিদরা বলছে জনগণের কথা আর মিডিয়া বলছে তাদের দর্শকদের কথা । ওই ঘুড়ে-ফিরে মানুষজনের কাছেই সব কিছু ফিরে যাবে । এমএলএম সম্পর্কে মানুষের ধারণা মোটেও সুখকর নয় । ‘সুখকর’ নয় শুধু তাই নয়, এই এমএলএম সিক্টেমে প্রতারণার শিকার হওয়া মানুষের সংখ্যা নেহাত-ই কম নয় ! এদিক থেকে ই-কমার্স কিন্তু একটা স্বচ্ছ ভাবমূর্তী নিয়েই আছে, এখন পর্যন্ত ই-কমার্সের বিষয়ে মানুষের মধ্যে কোন বিরুপ মনোভাব তৈরি হয়নি । প্রশ্নটা এখানেই শংকাটা এখানেই, যেভাবে এমএলএম কোম্পানীর এই মহাপ্রতারক বাহিনী মাঠে নেমেছে, তারা শেষ পর্যন্ত না ই-কমার্সকে গিলে খেয়ে ফেলে !

বুধবার (১৩ জানুয়ারি)রাতে নীলফামারীর সৈয়দপুরে আমার বাজার নামের একটি কোম্পানীর অফিসের ৫ কর্মীকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনার পর জেলার অপর ৫ উপজেলায় আমার বাজারের সকল কর্মীরা গা-ঢাকা দিয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর বেড়িয়েছে । সৈয়দপুরে আটককৃতরা হলেন, আব্দুল কাদের (৩৫), জালাল উদ্দিন (২৯), ওয়াহেদুজ্জামান (১৭), ইয়াছিন বাপ্পী (১৮) ও মিজান আরফিন (১৮)। বৃহস্পতিবার(১৪ জানুয়ারী) দুপুরে আদালতের মাধ্যমে তাদের জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়। এদের আটকের সময় ওই অফিসে প্রায় ১৫-১৬ জন গ্রাহক এই কোম্পানীটির বিষয়ে প্রতারণার অভিযোগ করেছে ।

দেশীয় শিল্পস্বার্থ সংরক্ষণে বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের ভূমিকা এবং শুল্ক সহায়তা বিষয়ে মতবিনিময় ও সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক’ একটি সেমিনার গত ৯ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়েছে । নীলফামারী চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এই সেমিনারে প্রশ্নত্তোর পর্বে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত সচিব বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের বাণিজ্যনীতির সদস্য শাহ মোঃ আবু রায়হান আলবেরুণী এমএলএম ব্যবসার বিষয়ে বলেন, ‘এ ধরণের ব্যবসা এখন আর হচ্ছে না । ২০১২ সালে বাণিজ্য প্রতিযোগিতা আইন করা হয়েছে । এ আইন ২০১৬ সাল থেকে বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের অধীনে একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করা হয়েছে । কিন্তু এর পরেও যারা এমএলএম ব্যবসা করছে, তাদের বিষয়ে তদন্ত কার্যক্রম চলছে । ভোক্তা অধিকার চালু করা হয়েছে । ভোক্তা অধিকার দপ্তরেও এ বিষয়ে কাজ চলছে । ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের গোয়েন্দা বিভাগ কমার্স এন্ড ইন্টেলিজেন্স তারাও সরকারকে এ ধরণের ব্যবসা যাতে না হয় সুপারিশ করে থাকে । ই-কমার্স প্লাটফর্ম এই কমিশনের অধীনে রয়েছে । একজন জয়েন্ট সেক্রেটারি এটি নিয়ন্ত্রণ করেন ।’ এমএলএম ব্যবসায় সংযুক্ত না হওয়ার আহবান জানান ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের অতিরিক্ত সচিব ও বাণিজ্যনীতির সদস্য শাহ মোঃ আবু রায়হান আলবেরুণী ।

বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনার চেয়ারম্যান বলেন, দেশীয় শিল্পের স্বার্থ সংরক্ষণের মৌলিক দায়িত্ব নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও আমাদের মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার মাধ্যমে পরবর্তীতে কমিশন বহুপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বাণিজ্য সংক্রান্ত চুক্তি এবং শুল্ক সম্পৃক্ত বিষয়গুলোর উপর পর্যালোচনা পূর্বক সরকারকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করে আসছে। তিনি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে অত্যন্ত কঠিন ও তীব্র প্রতিযোগিতামূলক উল্লেখ করে অসাধু বাণিজ্য প্রতিকারের মাধ্যমে দেশীয় শিল্পের স্বার্থ রক্ষার্থে ডাম্পিং বিরোধী শুল্ক, কাউন্টারভেইলিং শুল্ক এবং সেইফগার্ড মেজারসর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় বলে উল্লেখ করেন ।

ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ইক্যাব-এর ৬ষ্ঠ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক সমন্বিত কর্ম পরিকল্পনা তৈরি ই-কর্মাস খাত আরো গতিশীল করার আহ্বান জানিয়েছেন । তিনি বলেন, ভবিষ্যতে ই-কমার্সই হবে অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। আগামী ৫ বছরে এখাতে ৫ লাখের বেশি কর্মসংস্থান হবে বলেও জানান আইসিটি প্রতিমন্ত্রী ।

পলক বলেন, করোনা মহামারীর এই দু:সময়ে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হার ৫ দশমিক ২ ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে সরকার। ই-কমার্স খাতে উদ্যোক্তাদের ভ্যান্সার ক্যাপিটাল হিসেবে ১০ লক্ষ থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।

দেশে বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১১ কোটি ছাড়িয়েছে উল্লেখ করে জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, এই সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে করোনাকালীন ১৬ হাজার কোটি টাকা অনলাইনে লেনদেন করা সম্ভব হয়েছে।

তিনি বলেন, ইন্টারনেটের প্রসারের ফলে শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছে গেছে ই-কমার্স। করোনাকালীন দেশের ১৭ কোটি মানুষকে ঔষধসহ নিত্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্য পৌঁছে দিয়েছে বলেই সচল রয়েছে দেশের অর্থনীতির চাকা।

(কে/এসপি/জানুয়ারি ২৩, ২০২১)