ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রচ্ছদ » ফিচার » বিস্তারিত

সরিষার গ্রামে মধু চাষ

২০২১ জানুয়ারি ২৪ ১৬:১৬:৪৩
সরিষার গ্রামে মধু চাষ

রাণীশংকৈল প্রতিনিধি : গ্রামে যাওয়ার পথ ধরে যতদুর এগুবেন ততদুর শুধু হলুদ আর হলুদ, পথের দুইধারে সরিষার ফুলে বিস্তীর্ণ মাঠ হলুদে ছেয়ে গেছে। পথ থেকে গ্রামের দিকে তাকালে মনে হবে সরিষার হলুদ ফুলে ঘিরে রেখেছে গ্রাম, তার পাশেই আবার বিঘা-খানেক জমিতে মধু সংগ্রহের জন্য বসানো হয়েছে ১শত ২০টি মৌচাক বক্স। তাই স্থানীয়রা এই গ্রামের নাম দিয়েছেন “সরিষার গ্রাম, যেখানে হয় মধুরও চাষ”। এই হলুদে ঘেরা গ্রামটি হলো ঠাকুরগাঁও রাণীশংকৈল উপজেলার লেহেম্বা ইউনিয়নের দিঘীয়া গ্রাম।

স্থানীয় কৃষকরা জানায়, আগে ধান তুলে গম, ভুট্টা আবাদ করা হতো। তবে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় দেবনাথের উৎসাহে এবার দীঘিয়া গ্রামের প্রায় ৭০ একর জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫০ বিঘা জমির সরিষার বীজ বিনামূলে ১৫ জন কৃষকের মাঝে বিতরণ করেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা।

তারা আরো জানায়, এক গ্রামেই এত পরিমাণ জমিতে সরিষার চাষ এবারেই প্রথম । কৃষকরা আরো জানিয়েছেন, এবারে সরিষার বাম্পার ফলন হওয়ারও সম্ভবনা রয়েছে।

সাধারণত আমন ধান তুলার পরে গম ভুট্টা রোপন করলে বোরো ধান রোপন করতে পারতো না কৃষকরা । কৃষকদের সরাসরি আউশ ধান রোপন করতে হতো। অপরদিকে সরিষা আবাদ মাত্র ৬০ থেকে ৭০ দিনে মত সময় লাগে। এতে মাত্র ২-৩ হাজার টাকা খরচে বিঘায় কমপক্ষে ৭ মণ করে সরিষা উত্তোলন করা যায়, যা বাজারে ১৮ শত থেকে থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত মণ বিক্রি করতে পারে কৃষকরা। সরিষা আবাদ তুলার পর আবার কৃষকরা বোরো ও আউশ ধানও আবাদ করতে পারে। এক কথায় এক জমিতেই তিন ফসল উৎপাদন করতে পারছে কৃষকরা। আবাদী জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়ছে না।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায়, উপজেলা জুড়ে এবারে সরিষার আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ৮শত ৫০ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কিছুটা বেশি এবারে সরিষার আবাদের অর্জন হয়েছে যার পরিমাণ ৩ হাজার ৩ শত ৫০ হেক্টর। এর মধ্যে উপজেলার লেহেম্বা ইউনিয়নের দিঘীয়া গ্রামেই প্রায় ৭০ একর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। কৃষকরা এবারে বারি সরিষা-১৪,১৫ বিনা সরিষা,৪,৯ জাতের সরিষা আবাদ করছে।

এদিকে দিনাজপুর জেলার সেতাগঞ্জ উপজেলা থেকে মৌ-চাষী সোহেল রানা ব্যাপক সরিষার আবাদ হওয়ার সু-বাদে তিনি সরিষার গ্রাম খ্যাত দিঘীয়া এলাকায় ১২০টি মৌচাক বক্স বসিয়ে সপ্তাহে দু-মণের মত অধিক খাঁটি মধু সংগ্রহ করেন। এতে তিনি প্রতি কেজি মধু ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি ধরে বিক্রি করে থাকেন। কনকনে শীতে গ্রামের মানুষের বেশ প্রয়োজনীয় নির্ভেজাল খাঁটি মধু হাতের নাগালে পাওয়ায় খুশি ঐ এলাকাসহ আশপাশ গ্রামের মানুষেরা।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সঞ্জয় দেবনাথ জানান, সরিষা আবাদ খুব প্রয়োজনীয় একটি ফসল, এ এলাকার মানুষ সেটা বুঝতো না। আমি তাদের বুঝিয়ে এবারে একটি গ্রামে সরিষা আবাদে কৃষকদের আগ্রহ সৃষ্টি করে ব্যাপকভাবে এ এলাকায় সরিষার আবাদ করাতে পেরেছি। পরবর্তীতে অন্য গ্রামেও এ চেষ্টা অব্যাহত রাখবো। তাছাড়া সরিষা আবাদের পরই কৃষকরা দুটি ধানের আবাদ করতে পারছে । যা থেকে তারা বেশি আয় করতে পারছে।

(কেএস/এসপি/জানুয়ারি ২৪, ২০২১)