ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » শিল্প-সাহিত্য » বিস্তারিত

মহারাজার কীর্তি 

২০২১ মে ০৭ ২৩:৪৩:১১
মহারাজার কীর্তি 

আবীর আহাদ


এক দেশে ছিলো সদ্য সিংহাসনে আরোহণকারী এক প্রবল প্রতাপশালী মহারাজা । রাজ সিংহাসনে আরোহন করেই তিনি যথারীতি একটি মন্ত্রিসভা গঠন করলেন । দিন যায় । মাস যায় । এমনি করে এক বছর পূর্তির পর তিনি কী মনে করে একদিন তাঁর প্রধানমন্ত্রীকে ডেকে পাঠালেন । প্রধানমন্ত্রী যথাযথ কুর্নিশ জানিয়ে মহারাজার সামনে এসে দাঁড়ালেন । মহারাজা তখন গম্ভীর স্বরে প্রধানমন্ত্রীকে তাঁর দেশের তাবৎ মাফিয়া, চোর, ডাকাত, দুর্নীতিবাজ, মোনাফাখোর, মিথ্যাবাদী, অদেশপ্রেমিক, প্রতারক, সন্ত্রাসী, অপদার্থ, গবেট, স্তাবক ও ভীরুদের একটি এবং সৎ, সাহসী, জ্ঞানী, মেধাবী, ত্যাগী, ভদ্র, দেশপ্রেমিক, করিৎকর্মা প্রভৃতি লোকের আরেকটি তালিকা তৈরি করার নির্দেশ দিলেন । এবং বলে দিলেন, তালিকা যদি স্বচ্ছ ও যথাযথ না হয়, তাহলে প্রধানমন্ত্রীকে শূলে চড়তে হবে ।

রাজার এহেন কড়া নির্দেশ পেয়ে প্রধানমন্ত্রী দেশের সবক'টি গোয়েন্দা বাহিনীকে ডেকে যথাযথ ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দেশের ঐসব বৈশিষ্টের সৎ ও অসৎ লোকের দু'টি তালিকা অতি দ্রুততম সময়ের মধ্যে তৈরি করে তাঁর কাছে পেশ করার নির্দেশ দিলেন ।

প্রধানমন্ত্রীও গোয়েন্দা প্রধানদের প্রতি এ-হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলেন যে, যদি কোনো গোয়েন্দা সদস্য অসাধুতার আশ্রয় নিয়ে তালিকার মধ্যে নয়ছয় করেন তাহলে তাকে শূলে চড়িয়ে দেয়া হবে । এ-বিষয়টি দেখভাল করার জন্য তিনি গোয়েন্দাদের মধ্য থেকে কিছু চৌকস গোয়েন্দা সমন্বয়ে একটি গোপন কাউণ্টার গোয়েন্দা বাহিনীও সৃষ্টি করলেন । মাঠপর্যায়ের গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীর এ-আদেশ প্রতিপালন করার লক্ষ্যে সারা দেশে কঠোর ছদ্মবেশে ঐ ধরনের লোকের তালিকা তৈরির কাজে নেমে পড়লো ।

দিনরাত খেটেখুটে অতি নিষ্ঠা ও সততার সাথে প্রায় পনেরো দিনের মধ্যে গোয়েন্দা বাহিনী সারা দেশের ঐসব বৈশিষ্ট্যের লোকের দু'টি তালিকা প্রস্তুত করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পেশ করলো । তালিকা দু'টি হাতে পেয়ে প্রধানমন্ত্রী বিষয়গুলো আরো যথাযথ তদন্ত করার লক্ষ্যে তাঁর গোপন কাউণ্টার গোয়েন্দা বাহিনী দিয়ে পুনরায় তদন্ত চালালেন । কাউণ্টার গোয়েন্দা বাহিনীর তদন্তে তা যথাযথ হওয়ায় এবার প্রধানমন্ত্রী তালিকা দু'টি মহামান্য রাজার কাছে পেশ করলেন ।

দু'টি তালিকা হাতে পেয়ে রাজা মহাশয় খুব খুশি হলেন । তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দিয়ে বললেন, তোমার কাজ তুমি করেছো, এখন আমি আমার কাজ করবো । একটু অপেক্ষা করো ।

মহামান্য রাজা তালিকা দু'টি হাতে পেয়ে হঠাত্ একদিন তাঁর এক রাজকীয় ফরমানে প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিসভা ও মন্ত্রণালয় ভেঙে দিলেন । দেশের মানুষ তাজ্জব বনে গিয়ে ভাবলো, এবার নিশ্চয়ই রাজা মহাশয় দেশে একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবেন । দেশটা দুর্নীতি ও লুটপাটের মধ্যে যেভাবে হাবুডুবু খাচ্ছে, হয়তো তা থেকে এবার মহারাজা দেশটাকে উদ্ধার করবেন । এবার নিশ্চয়ই সৎ ও দেশপ্রেমিক মানুষদেরকে তিনি দেশের মন্ত্রিসভা ও প্রশাসনে নিয়োগ দেবেন । দেশের সব মানুষ একদিকে পরম খুশি ও অপরদিকে চরম উৎকণ্ঠা নিয়ে চুপচাপ বসে রইলো । দেখি, মহারাজা মহাশয় কী করেন !

তিন/চারদিন পর । রাজা মহাশয় আরেক রাজকীয় ফরমানে বলে নতুন করে প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিসভা ও মন্ত্রণালয়ের প্রধান কর্মকর্তাদের নাম ঘোষণা করলেন । আগের প্রধানমন্ত্রীসহ অধিকাংশ মন্ত্রী ও আমলা বাদ পড়ে গেলেন । দেশের মানুষসহ গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যদের মাথায় হাত ! একি ! নতুন প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিসভা ও মন্ত্রণালয়ে যাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে তারা সবাই চোর ডাকাত দুর্নীতিবাজ মিথ্যাবাদী প্রতারক অপদার্থ গবেট স্তাবক ও ভীরু ! আর নতুন প্রধানমন্ত্রীটি হলেন দেশের সবচে' বড়ো দুর্নীতিবাজ লুটেরা ও মাফিয়া শিরোমণি শাহবাজ সোবহান খান !

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতার আসন থেকে শেষ বিদায় নেয়ার সময় মহারাজাকে বিনয়ের সাথে জিজ্ঞেস করলেন, জাহাপানা, আপনি সবক'টি অসৎ লোক নিয়ে মন্ত্রিসভাসহ মন্ত্রণালয় সাজালেন, এর অর্থ জানতে পারি কি ?

মহারাজা মহাশয় সহাস্যে উত্তর দিলেন, অবশ্যই জানতে পারেন । তাহলো : সৎ মেধাবী দেশপ্রেমিক লোক আমার কোনো কাজে আসে না ! এরা খেতেও জানে না, খাওয়াতেও জানে না ! আর অসৎরা খেতেও জানে, খাওয়াতেও জানে ! বুঝলেন কিছু ?

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মাথা নেড়ে ক্ষিণকণ্ঠে বললেন, বুঝেছি জাহাপানা !