প্রচ্ছদ » ফিচার » বিস্তারিত
পুষ্পিতা গুপ্ত সেভেন কিংস লন্ডনে কাউন্সিলর নির্বাচিত
গর্বিত বাংলাদেশ, গর্বিত লন্ডনের বাঙালি সমাজ
২০২১ মে ০৮ ১৬:০৫:২১স্টাফ রিপোর্টার :যে ইংল্যান্ড একসময় বাংলাদেশ সহ গোটা ভারতবর্ষে শাসন-শোষণ চালিয়েছে সেই ঐতিহাসিক লন্ডনে উড়ছে বাঙালিদের সফলতার বিজয় নিশান। বাঙালি ও বাংলাদেশের মানুষের সফলতার ধারাবাহিকতায় লন্ডনে রেডব্রিজ সেভেন কিংস কাউন্সিলে "কাউন্সিলর" উপ-নির্বাচনে বাংলাদেশী কন্যা লেবার পার্টির জনপ্রিয় প্রার্থী পুষ্পিতা গুপ্ত বিপুল ভোটে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন তিনজন।
বৃহস্পতিবার (৬ মে) অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে ৩,৯২১ জন ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। বাতিল হওয়া ব্যালটের সংখ্যা ৩৯টি।শুক্রবার (০৭ মে) ফলাফল ঘোষণা করা হয়। লেবার পার্টির প্রার্থী হিসেবে পুষ্পিতা গুপ্ত ২,২২৭ ভোট পেয়ে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী যথাক্রমে- কনজার্ভেটিভ পার্টির প্রার্থী গ্রীতা রেণে পেয়েছেন ৭৯১ ভোট, ট্রেড ইউনিয়োনিস্ট ও সোশ্যালিস্ট কোয়ালিশনের প্রার্থী এন্ডি ওয়াকার পেয়েছেন ৫৫১ ভোট, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী নাভিদ আকবর পেয়েছেন ৩১৩ ভোট। নির্বাচিত পুষ্পিতা গুপ্তের বিজয়ে উচ্ছ্বসিত লন্ডনস্থ বাঙালি কমিউনিটি। লন্ডনের বাঙালি কমিউনিটির পক্ষে অতিশ দীপঙ্কর সাহা বলেন, পুষ্পিতা গুপ্তের বিজয়ে বাঙালি কমিউনিটি উচ্ছ্বসিত ও গর্বিত। লন্ডনে যে কেউ পুষ্পিতা গুপ্তকে প্রয়োজনে পাশে পায়। তার আন্তরিকতা ও মানুষের জন্য কাজ করার আকাঙ্খা অতুলনীয়"।
লন্ডনের বাঙালি কমিউনিটির আরেকজন সদস্য আনসার আহমেদ উল্লাহ বলেন, করোনা কালের শুরু হতে পুষ্পিতা যেসব সেবামূলক কাজ করেছেন তা অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশের প্রয়োজনে যেমন ছুটে যান তিনি, তেমনি লন্ডনের মানুষও তাকে সহজে পাশে পায়। পুষ্পিতার বিজয়ে আমরা গর্বিত"।
পুষ্পিতা গুপ্তের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি ইলফোর্ড নর্থ লেবার পার্টির নারী বিষয়ক কর্মকর্তা হিসেবে লেবার পার্টির সক্রিয় সদস্যের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ২০১২ সাল হতে লন্ডনে লেবার পার্টির সঙ্গে সক্রিয় সদস্য হিসেবে যুক্ত রয়েছেন। তিনি মানুষের পাশে থেকে তাদের জন্য কাজ করে যেতে চান। কাউন্সিলর হিসেবে তাকে ভোটাররা নির্বাচিত করায় দায়িত্ব আরো বেড়ে গেছে। ভোটারদের আকাঙ্খা পূরণে তিনি সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাবেন।
বাংলাদেশী কন্যা পুষ্পিতা গুপ্তের বাড়ি সিলেটের মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার করিমপুর চা বাগান এলাকায়। পুষ্পিতা গুপ্তের পিতা- মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত রমেন্দ্র নারায়ন সোম এবং মাতা- প্রয়াত যুথিকা সোম ছিলেন প্রগতিশীল চেতনার অধিকারী। পুষ্পিতার কাকু মুক্তিযোদ্ধা কমরেড পান্না লাল সোম কমিউনিস্ট আন্দোলনে পরিচিত মুখ। মুক্তিযুদ্ধে পুরো পরিবারের ছিল সক্রিয় অংশগ্রহণ। ১৯৯৭ সালে পুষ্পিতা লন্ডন প্রবাসী হোন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার স্বামী জ্ঞানেন্দ্রিয় লাল গুপ্তের সঙ্গে।
পুষ্পিতা গুপ্তের ভাই-বোনেরা যথাক্রমে- শিল্পী নাগ, ঝুমু সেন, মৌলি চৌধুরী, মনি দেব এবং একমাত্র ভাই সুদীপ সোম। এক বোন ব্যাতীত সবাই প্রবাসী। পুষ্পিতা গুপ্ত দুই কন্যা সন্তানের গর্বিত মা, তাঁর দু'কন্যা- শ্রীমা গুপ্ত ও আনভিতা গুপ্ত। পুষ্পীতা গুপ্তের পরিবারের সদস্যদের প্রবাসী হবার কারণ অনুসন্ধান করলে জানা যায়, তারা প্রতিষ্ঠিত হয়ে মানুষের পাশে থেকে মানুষের কল্যাণে কাজের মহৎ ব্রত নিয়ে প্রবাসী হোন। প্রবাসী জীবনে পুষ্পীতাসহ বোনদের মহান ব্রতে সহযোগী হয় তাদের স্বামী। এছাড়াও দেশে থাকাকালিন মৌলবাদী উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর দ্বারা বিভিন্ন সময় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় মনোকষ্টে প্রবাসী হোন এবং নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে মানুষের কল্যাণে নিয়োজিতকরণের লক্ষ্যে এগিয়ে যান। সেই ধারাবাহিকতায় মুক্তিযুদ্ধে অনেক ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশকে অসাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদ মুক্ত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে পুষ্পিতা গুপ্ত প্রতিষ্ঠা করেন "সেক্যুলার বাংলাদেশ মুভমেন্ট, ইউকে"। পুষ্পিতা গুপ্ত বর্তমানে "সেক্যুলার বাংলাদেশ মুভমেন্ট, ইউকে" এর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
২০১৩ সালে বাংলাদেশে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ ও বামনডাঙা, বগুড়া, খুলনা সহ বিভিন্ন জায়গায় মৌলবাদী জামাত-শিবিরের হামলায় অসহায়-নিঃস্ব পরিবার গুলোর পাশে সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে গেছেন পুষ্পিতা গুপ্ত। এছাড়াও রোহিঙ্গা সমস্যা উত্তরণে পদক্ষেপ, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ায় মৌলবাদী হামলা, গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালদের ওপর হামলায় প্রতিবাদসহ সিলেট, যশোর, খুলনা, পঞ্চগড়, রংপুর, বরিশাল, রাজশাহী, ঢাকা, পাবনা, ময়মনসিংহ সহ বিভিন্ন জায়গায় যেকোন মৌলবাদী হামলা বা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে গেছেন পুষ্পিতা গুপ্ত।
আরো জানা যায়, করোনার শুরু হতে সারা সারাদেশের ৭টি জেলায় প্রায় ৫ হাজার মানুষের ঘরে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিয়েছেন। এছাড়াও করোনা কালে লন্ডনে বিভিন্ন বাড়িতে বাজার ও খাবার পৌঁছে দিয়েছেন, হাসপাতালে দায়িত্বরতদের নিজের তৈরি খাবার নিয়মিত পৌঁছে দিয়েছেন। এমন অনেক মানবিক কাজে যুক্ত পুষ্পিতা গুপ্ত। মানবাধিকার রক্ষায় ও অসহায়ের জন্য তিনি আমৃত্যু কাজ করে যেতে চান। সেইসঙ্গে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিয়োজিত থাকবেন আমৃত্যু।
(আর/এসপি/মে ০৮, ২০২১)