ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » মুক্তচিন্তা » বিস্তারিত

করোনাকালে আইনজীবীদের অনুদান প্রদান জরুরি

২০২১ মে ২৯ ১৮:৩৭:১০
করোনাকালে আইনজীবীদের অনুদান প্রদান জরুরি

সোলায়মান তুষার


সরকারের পক্ষ থেকে আইনজীবিদের অনুদান দেয়া জরুরি। বিশেষ করে অসহায় ও করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত আইনজীবীদের পাশে দাঁড়ানো সরকারের একান্ত কর্তব্য। করোনা কালে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যে সব বিচারক এবং বিচারকার্যের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারী মৃত্যুবরণ বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদেরকেও অনুদানের আওতায় আনা জরুরি। করোনা ভাইরাসের করাল গ্রাসে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে আইন পেশা। দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে আইনজীবীদের জীবন। একেরপর এক লকডাউনের কারণে কোর্ট বন্ধ থাকায় অনেকের জীবন বিষিয়ে উঠেছে। সবচেয়ে সমস্যায় পড়েছেন শিক্ষানবিশ ও নবীন আইনজীবীরা। অনেকে বাসা ভাড়ার ব্যয় বহন করতে না পেরে পরিবারের সদস্যদের গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। স্বাধীন এ পেশার লোকজন না পারছেন সইতে এবং না পারছেন কইতে। আদালত বন্ধ থাকলে আইনজীবীদের যাওয়ার যেন কোন জায়গা নেই। স্বাধীন এ পেশার লোকজন অন্য কোথাও থেকে কোন ধরনের সহয়তা পান না। দেশের ব্যাংকগুলো পর্যন্ত তাদের ঋণ দিতে চায় না। আইনজীবীদের লোন দিতে ব্যাংকগুলোর অলিখিত নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আইনজীবীরা তাদের অসহায়ত্বের কথা কোথাও বলতে পারছেন না। নীরবে সহ্য করছেন দুঃখ-কষ্ট। করোনা ভাইরাস তাদের স্বাধীনভাবে চলার স্বাধীনতাকেও করে দিয়েছে অসার। ঢাকা আইনজীবী সমিতির একজন সদস্য ব্যয় বহন করতে না পেরে তিনি তার পরিবারের সদস্যদের গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন। এরকম বহু ঘটনা রয়েছে।

সবচেয়ে অসহায় অবস্থায় পড়েছেন শিক্ষানবিশ আইনজীবীরা। তারা সিনিয়রদের সঙ্গে কাজ করে চলার মতো যা কিছু অর্থনৈতিক সহায়তা পেতেন তাও বন্ধ। তাদের জীবন চলছে না। অনেকে বাসা ভাড়া পর্যন্ত দিতে পারছেন না। সহায়তা পাচ্ছেন না কোথাও থেকে। বৈশ্বিক করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রভাবে সর্বক্ষেত্রে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে তার আঁচ লেগেছে শিক্ষানবিশদের জীবনেও। সরকার ইতোমধ্যে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। কিন্তু এই শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের বিষয়ে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল এবং বাংলাদেশ সরকারের কোনো পদক্ষেপই এখন পর্যন্ত পরিলক্ষিত হয়নি। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলকে করোনা কালীন সময়ে শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের কথা বিবেচনা করে তাদের জন্য দুর্যোগ কালীন ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা করা জরুরি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৯ সালের শেষ দিকে চীনের উহান থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে করোনা ভাইরাস। বাংলাদেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ। এরপর ২০২০ সালের ১৮ মার্চ এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে দেশে। করোনাভাইরাসের কারণে ২০২০ সালের ২৬ মার্চ থেকে সরকারি আদেশের সঙ্গে মিল রেখে আদালত অঙ্গনও বন্ধ রাখা হয়। তবে এরই মধ্যে ভার্চুয়াল আদালত চালুর জন্য আদালতে তথ্য-প্রযুক্তি অধ্যাদেশ-২০২০ জারি করে সরকার। সে অনুযায়ী ২০২০ সালের ১১ মে থেকে আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ অনুযায়ী হাইকোর্টের প্রণীত প্র্যাকটিস ডাইরেকশন অনুসারে ভার্চুয়াল কোর্ট চালু করা হয়।

যেখানে শুধু জামিন শুনানির জন্য বিচারকদের নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতি। করোনাভাইরাসে টানা দুইমাসের বেশি সময় দেশের সব আদালত বন্ধ থাকার পর, অধ্যাদেশ জারি ও আইন সংশোধনের পর ভার্চুয়াল আদালত শুরু হয়। কিন্তু সেখানে শুধুমাত্র মামলার আবেদন গ্রহণ আর জামিন আবেদনের শুনানি করা হয়। এরপর ওই বছরের ঈদুল আযহার পর পূর্বের ন্যায় সশরীরে বিচারকাজ শুরু হয়। এদিকে করোনা ভাইরাসের প্রার্দুভাব বেড়ে যাওয়ায় গত ৫ এপ্রিল থেকে আবার লকডাউন শুরু হয়। সীমিত পরিসরে ভার্চুয়াল কোর্ট চালু থাকলেও তা জীবন ধারনের জন্য পর্যাপ্ত নয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। করােনা ভাইরাসের করাল গ্রাসে দেশের কয়েকজন খ্যাতনামা আইনজীবীসহ কয়েক শতাধিক আইনজীবী এ পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন। রয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিও।

এছাড়া নিম্ন আদালতের বিচারক, আইনজীবী ও অসংখ্য শিক্ষানবিশ আইনজীবী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারী এসময়ের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন করোনাক্রান্ত বা অন্যান্য কারণে। অনেকে করােনায় আক্রান্ত হয়ে বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। অনেকে সুস্থ হলেও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি। এ অবস্থায় সরকারের উচিত করোনাকালে ক্ষতিগ্রস্ত আইনজীবী, বিচারক এবং বিচার কাজের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বিশেষ অনুদানের ব্যবস্থাা করা । এসব ক্ষতিগ্রস্ত আইনজীবী, বিচারক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহায়তায় এগিয়ে আসা উচিত বাংলাদেশ বার কাউন্সিল সহ অন্যান্য সংগঠন গুলোর।

লেখক : একজন ব্যারিস্টার ও আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ ।