ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » মুক্তচিন্তা » বিস্তারিত

বিদেশি ব্যাংকে অর্থ পাচারকারীরা মানসিক রোগী

২০২১ জুন ০১ ১৩:১৩:৫৭
বিদেশি ব্যাংকে অর্থ পাচারকারীরা মানসিক রোগী

আবীর আহাদ


ইরানের সম্রাট রেজাশাহ পাহলবী, ইথিওপিয়ার সম্রাট হাইলে সিলাসী, ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট ফার্ডিনান্ট মার্কোস, মিশরের প্রেসিডেন্ট হোসনী মোবারক---- বিশ্বের এমনতর বহু দুর্নীতিবাজ লুটেরা শাসক সেসব দেশ থেকে লক্ষ লক্ষ কোটি ডলার/পাউণ্ড লুটপাট করে সুইস ব্যাংকে জমা রেখেছিলেন এবং পরবর্তীকালে জানা যায় যে, তারা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তারা সেসব অর্থ নাকি আর পাননি । অর্থাৎ সুইস ব্যাংক সুযোগ বুঝে সেসব অর্থ বাজেয়াপ্ত করে আত্মসাত করেছে । যেহেতু সেসব ছিলো অনৈতিক পন্থায় লুটকৃত কালো টাকা তাই তার মালিকরা আইনত: সুইস ব্যাংকের বিরুদ্ধে কোথাও মামলা করতে পারেননি । অনেক লুটেরা শাসক সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত হওয়ার পর তাদের উত্তরাধিকাররা সে-অর্থ পেয়েছে বলেও জানা যায়নি ।

বর্তমানেও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের অনেক দুর্নীতিবাজ লুটেরা প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রী ও তাদের আত্মীয়স্বজন, মন্ত্রী এমপি সচিব জেনারেল ব্যবসায়ী শিল্পপতি ও মাফিয়ারা সুইস ব্যাংকসহ আমেরিকা বৃটেন পানামা কানাডা সিঙ্গাপুর মালায়েশিয়া ও অন্যান্য দেশে অঢেল অর্থ গচ্ছিত রাখছেন । তারা কেউ কেউ সে-অর্থ ভোগ করতে পারছেন এবং আবার অনেকেই নাকি পারছেন না ! ঐসব বিদেশের ব্যাঙ্ক জানে যে, যারাই এখানে অর্থ গচ্ছিত রেখেছেন, তারা তা তাদের দেশ থেকে লুটপাট করে এনেছেন । সেসব দেশে এসব অর্থ আইনের চোখে কালো টাকা । এসব কালো টাকা মেরে দিলে লুটেরাচক্র তা নিয়ে উচ্চবাচ্য করতে বা আইনের আশ্রয় নিতে পারবেন না । ফলে অর্থগুলো ঐসব দেশের ব্যাংকগুলো মেরে দিয়ে থাকে ।

একটা উদাহরণ দেই । আমাদের দেশের বহুআলোচিত তথাকথিত প্রিন্স মুসা বিন শামসিরের কথাই ধরা যাক । তার ৯৫ হাজার কোটি টাকা নাকি সুইস ব্যাংক বাজেয়াপ্ত করে দিয়েছে বলে তিনি প্রকাশ্যে একাধিকবার স্বীকার করেছেন । এভাবে অনেকের অর্থই সুইস ব্যাংকসহ অন্যান্য বিদেশি ব্যাঙ্ক আত্মসাত করেছে বলে অনুমিত হয় । মুসা বিন শামসিরই তার জ্বলন্ত প্রমাণ ।

সুতরাং আমাদের দেশ থেকে যেসব দুর্নীতিবাজ লুটেরা ও মাফিয়াচক্র লুটপাট করে বিদেশী ব্যাঙ্কে গচ্ছিত রেখেও সেসব ব্যাঙ্কের হাতে মার খেয়েছেন ও খাচ্ছেন, তা জেনেশুনে কেনো যে তারা লুটকৃত অর্থ সেসব ব্যাঙ্কেই রাখেন তা আমাদের বোধগম্য নয় । এক সমীক্ষায় জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে এ পর্যন্ত দশ/বারো লক্ষ কোটি টাকা লুটপাট করে বিদেশে পাচার করা হয়েছে !

আমার ব্যক্তিগত ধারণা, এসব দুর্নীতিবাজ লুটেরাচক্র অর্থ লুটপাট ও তা পাচারের মধ্যে একধরনের মাদকীয় নেশা উপভোগ করে থাকে----অর্থাৎ তারা মানসিক বিকারগ্রস্ত; মানসিক রোগী । বেশ কিছুকাল আগে এসব অর্থ পাচারকারীদের নাম বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমসহ আমাদের মিডিয়ায়ও এসেছিলো । আমাদের দু:খ এই যে, সরকার ও দুর্নীতি দমন কমিশন সব জেনেও তাদের ধরে না । কারণ আর কিছুই নয় । ভাগাভাগি । এসব অর্থ পাচারকারীরা বাংলাদেশের শত্রু । দেশদ্রোহী ।

লেখক : চেয়ারম্যান, একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।