ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » দেশের খবর » বিস্তারিত

কালিয়াকৈরের স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব শামসুল হক

২০২১ জুন ০৮ ১৩:১৮:১৮
কালিয়াকৈরের স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব শামসুল হক

ইন্দ্রজিত কুমার সাহা, কালিয়াকৈর (গাজীপুর) : কালিয়াকৈর বাসীর গর্বিত সন্তান যার নেতৃত্বে গাজীপুরবাসী ধন্য, মরহুম শামসুল হক সাহেব ১৯২৭ সালে ১লা মার্চ সাবেক ঢাকা বর্তমানে গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানাধিন ঠেঙ্গারবান্ধ গ্রামে ঐতিহ্যবাহী মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আলহাজ্ব মরহুম ওসমান গনী (প্রেসিডেন্ট), মাতা মরহুম হায়তন নেছা। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ে ১৯৫২-৫৩ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ছাত্র সংসদের ভিপি পদে নির্বাচিত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্কাউট টিমের টিম লিডার হিসেবে স্কাউটের সর্বোচ্চ খেতাব উড ব্যাচ পদকে ভূষিত হন। তিনি ঐতিহাসিক রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে জড়িত হওয়ার কারণে গ্রেপ্তার হন এবং কারাবরণ করেন। তিনি ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সহ সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

ছাত্রজীবন সমাপ্ত হলে একই বছর তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। তিনি ১৯৫৬ সালে ঢাকা সদর উত্তর মহকুমা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ১৯৫৮ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। একই সময়ে তিনি নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী মুসলীম লীগের যুগ্ন সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, ১৯৬২ সালে কুখ্যাত হামিদুর রহমান কমিশনের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন।

১৯৫৪ সালে কালিয়াকৈর জয়দেবপুর থেকে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে তিনি প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করায় গ্রেফতার হন এবং ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত কারাগারে বন্দী থাকেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আইনি মোকাবিলার ব্যবস্থা করেন। ১৯৬৯ সালের গণ আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

তিনি ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে শ্রীপুর, জয়দেবপুর, কালিয়াকৈর আসন থেকে বিপুল ভোটে জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।১২ ই নভেম্বর১৯৭০ ঢাকা ডেমরা ও জয়দেবপুর থানাধীন১ নং ভাওয়াল মির্জাপুর ইউনিয়নের২ নং ওয়ার্ড ভবানীপুর বানিয়ারচালা শিরিরচালা ইন্দ্রপুর সহ বিভিন্ন এলাকায় সাইক্লোন ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক প্রাণহানি আহতদের পাশে দাড়ান।

১৯৭১ সালের ১৯শে মার্চের জয়দেবপুর সংগ্রাম পরিষদের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মরহুম শামসুল হক সাহেব। হাইকমান্ড সদস্য ছিলেন মো: হাবিবুল্লাহ (সাবেক এমপি), ডাক্তার মনিন্দ্রনাথ গোস্বামী, এম এ মোত্তালিব।
আহবায়ক ছিলেন এড. আ ক ম মোজাম্মেল হক(বর্তমানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী)। ১১ সদস্য বিশিষ্ট সংগ্রাম পরিষদের অন্যান্য সদস্যরা হলেন মোঃ শহিদুল ইসলাম বাচ্চু, মো: আয়েশ উদ্দিন, নজরুল ইসলাম খান, মোঃ আব্দুস সাত্তার মিয়া, শহিদুল ইসলাম পাঠান জিন্নাহ, মোঃ হারুন-অর-রশিদ ভূঁইয়া, মো: নূরুল ইসলাম, শেখ আবুল হোসেন, এডভোকেট হযরত আলী এবং ছায়েদ বক্স ভূঁইয়া।

তিনি ১৯৭১ সালের ২৭ শে মার্চ ঢাকা থেকে এসে নিজ বাড়িতে পিতা মাতার সাথে সাক্ষাৎ শেষে পিরুজালী হয়ে ৩০ শে মার্চ শ্রীপুরে শফির উদ্দিন আহমেদের সাথে জনসভা করেন। এপ্রিল মাসের ১ তারিখে তিনি আলহাজ্ব শফিউদ্দিন আহমেদ ও আব্দুল হাকিম মাস্টার সহ ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। যাওয়ার পূর্বে সাবেক সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল কেএম সফিউল্লাহর সাথে সাক্ষাতে মিলিত হয়েছিলেন বলে জানা যায়। পরে তারা হালুয়াঘাট হয়ে ১১ এপ্রিল ভারতের ঢালু থানায় প্রবেশ করেন। এপ্রিল মাসের ১৭ তারিখে তারা আসামের কৃষি মন্ত্রী মইনুল হোসেনের সহযোগিতায় শিলং পৌছান। সেখান থেকে মে মাসের 3 তারিখে তারা কলকাতায় গমন করেন। অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর সাথে সাক্ষাৎ করেন।

স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে তিনি বঙ্গবন্ধু সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭৩ সালে পুনরায় জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার সফল স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন সমবায় এবং পাট মন্ত্রী হিসেবে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৩ সালের৫ ও৬ সেপ্টেম্বর আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্সে জোট নিরপেক্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় উক্ত সম্মেলনে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অ্যাডভান্স টিমের লিডার হিসেবে মরহুম শামসুল হক সাহেব দায়িত্ব পালন করেন এবং বঙ্গবন্ধুর সাথে জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে যোগদান করেন । তিনি সুভিয়েত রাশিয়ায় বাংলাদেশের সফল রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন কালে ভারতের তৎকালীন হাই কমিশনার ও ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আই কে গুজরাল এর সহিত গভীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। মরহুম সামসুল হক সাহেব বাংলাদেশের স্থপতি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অত্যন্ত বিশ্বস্ত রাজনৈতিক সহযুদ্ধা ছিলেন। তিনি স্বাধীনতা ফুটবল দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভাওয়াল মির্জাপুর হাজী জমির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় এর কার্যকরী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন

যাদের নেতৃত্বের কারণে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র ও লাল সবুজে খচিত পতাকা পেয়েছি তাদের মধ্যে অন্যতম নেতা মরহুম শামসুল হক, যিনি ১৯৯৮ সালে ১৬ ই জুন ঢাকা পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। আগামী ১৬ জুন মরহুম শামসুল হক সাহেবের ২৩ তম মৃত্যু দিন। উনার আত্মার শান্তি কামনা করি।

(আই/এসপি/জুন ০৮, ২০২১)