ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » মুক্তচিন্তা » বিস্তারিত

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের একটি সুপারিশমালা

২০২১ জুন ১২ ১৫:০৬:৩৬
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের একটি সুপারিশমালা

আবীর আহাদ


মায়ানমার সামরিক বাহিনীর তাড়া খেয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বিশ্বসম্প্রদায় তথা জাতিসংঘও বোধ হয় বিষয়টি সমাধান করতে ব্যর্থ হয়েছে। অপরদিকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু-কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকারের মানবিক আশ্রয়ের কথা ভুলে গিয়ে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা অকৃতজ্ঞের সীমা ছাড়িয়ে এখন আমাদের দেশের দেশী-বিদেশি এনজিও ও স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির সাথে হাত মিলিয়ে আমাদের মাটিতে জঙ্গি মহাসমাবেশ করে আমাদেরই দেশের বিরুদ্ধে হুমকি দিয়েছে যে, তারা কোনো অবস্থাতেই মায়ানমারে ফিরে যাবে না! তারা জোর করে বাংলাদেশে থেকে যাওয়ার কথা বলছে ! এটা যেনো মামা বাড়ির আবদার! তারপরও বাংলাদেশ সরকার কী কারণে কার পরামর্শে রোহিঙ্গাদের একটা অংশকে ভাসানচরে বিল্ডিং নির্মাণ করে তাদের বসবাসের সুযোগ করে দিয়েছে তা বোধগম্য নয়! মনে হয় রোহিঙ্গাদের এদেশে বিহারীদের মতো স্থায়ীভাবে রাখার একটা বন্দোবস্ত চলছে। দেশের স্বাধীনতার সূর্য সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সিংহভাগ যেখানে গৃহহীন অবস্থায় খোলা আকাশের নীচে বসবাস করছেন, সেখানে কোথাকার এক বর্বর ও অকৃতজ্ঞ অমানুষদের প্রতি এতোটা মহানুভবতা প্রদর্শন অনেকটা বাড়াবাড়ি মনে হচ্ছে। মানবিকতা তাদের প্রতিই সাজে যারা মানবতার মর্ম বোঝে।

আসলে আমরা সেদিন সাতপাঁচ না ভেবে শুধুমাত্র সস্তা ধর্মীয় আবেগ ও মানবতার কারণে এমন একটা বর্বর জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়ে ভুল করেছিলাম বলে আজকের বাস্তবতায় তা প্রমাণিত হয়েছে। যেখানে আমাদের দেশেরই কোটি কোটি মানুষের অন্ন বস্ত্র বাসস্থান চিকিৎসা প্রভৃতির ব্যবস্থা নেই, সেখানে কোথাকার কোন অসভ্য ও বর্বর জনগোষ্ঠীকে জামাই আদর দিয়ে আমরাই তাদেরকে মাথায় উঠিয়ে আমাদের মানুষকেই তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করছি! এসব আর মেনে নেয়া যায় না।

উপরন্তু রোহিঙ্গারা নানান মারণাস্ত্রে সজ্জিত হচ্ছে! তারা সেখানকার অনেক বাংলাদেশীদের জায়গা-জমি জবরদখল করে নিয়েছে। বাংলাদেশের স্থানীয় অধিবাসী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর নানান অজুহাতে সশস্ত্র হামলাও চালাচ্ছে! বেশকিছু লোকজন তাদের আক্রমণে নিহত ও আহত হয়েছে। তারা বাংলাদেশের মাটিতে অবৈধ অস্ত্র, ইয়াবা-মাদকসহ নানান অসামাজিক কর্মে লিপ্ত হচ্ছে! তারা ছলেকলেকৌশলে ও কিছু জামায়াতী টাউটদের সহায়তায় এদেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশে গিয়ে নানান অপরাধকর্মের সাথে জড়িত হয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করছে। ইতিমধ্যে এটাও জানা যাচ্ছে যে, তারা বাংলাদেশের দেশেবিদেশী স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের সাথে গোপন সংযোগ গড়ে তুলেছে।

বিশেষ করে কতিপয় মুসলিম দেশের এনজিওর সহায়তায় তারা আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সাথে হাত মিলিয়ে বাংলাদেশের মধ্যে একটা অরাজকতা সৃষ্টি করে এখানকার রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করে তুলতে প্রয়াস চালাচ্ছে, যাতে এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো বাংলাদেশে তাদের প্রভাব বিস্তার করে ফায়দা লুটতে পারে। ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ যাতে রোহিঙ্গাদের এদেশ থেকে বহিষ্কারের কথা চিন্তা না করে । বাংলাদেশ সরকারসহ এদেশের মানুষের পক্ষে মানবিক ও ভব্যতার খাতিরে আর এতো বড়ো একটা অশিক্ষিত অসভ্য বর্বর ও বেয়াড়া সম্প্রদায়কে প্রতিপালন ও নিয়ন্ত্রণ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ফলে আমাদের নিজেদের দেশের নিরাপত্তা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রয়োজনে এর একটি তড়িৎ সমাধানে আসতেই হবে । এবং সেই সমাধানটি যেকোনো মূল্যে আমাদেরকেই করতে হবে । কারণ অসভ্য বর্বর ইতর অকৃতজ্ঞ সম্প্রদায়কে আমাদের মাটিতে আর বাড়তে দেয়া যায় না।

একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং সচেতন নাগরিক হিশেবে আমি বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে একটি সুপারিশমালা পেশ করছি, যা সরকার ও দেশের সচেতন মানুষ ভেবে দেখতে পারেন। যথা----

(এক) জাতিসংঘের মাধ্যমে সব দেশের কাছে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীদের অবস্থান ও আমাদের দেশের রাজনৈতিক আর্থসামাজিক নিরাপত্তা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিষয়টি তুলে ধরে, মায়ানমারকে তাদের নাগরিকদের তাদের দেশে ফেরত নেয়ার লক্ষ্যে একটি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়ার সর্বদেশ সমন্বিত আল্টিমেটাম আদায় করার প্রচেষ্টা চালাতে হবে;

(দুই) জাতিসংঘ ও রাষ্ট্রসমূহের আল্টিমেটাম আদায় করা সম্ভব না হলে বাংলাদেশের দুই প্রতিবেশী ভারত ও চীন সরকারের উচ্চপর্যায়ের সাথে আলাপ-আলোচনা করে বাংলাদেশ সরকার মায়ানমারকেই একটি আল্টিমেটাম দিয়ে বলতে পারে যে, এতোদিনের মধ্যে তাদের নাগরিক রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে হবে;

(তিন) মায়ানমার সরকার বাংলাদেশ সরকারের আল্টিমেটাম গ্রহণ না করলে, তখন এখানে অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদের সাত/দশ দিন সময় দিয়ে সরাসরি বলে দিতে হবে : যেপথে এসেছিলে সে-পথে পাড়ি জমাও ;

(চার) এতেও যদি কাজ না হয়, তাহলে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রয়োজনে তিন দিক থেকে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের ধাওয়া দিয়ে এদেশ থেকে বিতাড়িত করতে হবে----তাতে পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেনো এবং

(পাঁচ) মায়ানমার যদি এ-স্তরে এসে বাংলাদেশের ওপর সামরিক অভিযান চালায়, তাহলে পূর্ব-থেকে প্রস্তুত করে রাখা আমাদের সামরিক বাহিনীকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বলতে হবে ।

বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ বিজয়ী জাতি । আমাদের সামরিক বাহিনীর পাশাপাশি যুদ্ধের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও জনগণ রয়েছে । ফলে আমাদের ভয়ের কোনো কারণ নেই । কারণ আমাদের 'জয়বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু' জাতীয় চেতনার কাছে মায়ানমার একটি শিশু । তবে আমরা কোনো অবস্থাতেই আগে মায়ানমারের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালাবো না । যেমন পাকিস্তান হানাদার বাহিনী আমাদের ওপর আক্রমণ করার পরই আমরা তাদেরকে প্রতিহত করতে প্রতি-আক্রমণ পরিচালনা করেছিলাম । এ-কারণেই আমরা আমাদের সেই দুর্দিনে কতিপয় সক্রিয় বন্ধু রাষ্ট্রসহ বিশ্বজনমত পেয়েছিলাম । এখানেও একই নীতি অবলম্বন করতে হবে ।

উপরোক্ত সুপারিশমালা আমার একান্তই ব্যক্তিগত চিন্তার ফসল । আমার থেকেও হয়তো আরো সমৃদ্ধ সুপারিশ বেরিয়ে আসতে পারে । হোক চুলচেরা বিশ্লেষণ।

লেখক :চেয়ারম্যান, একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।