ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » সম্পাদকীয় » বিস্তারিত

আমায় ক্ষমা কর পিতা : পর্ব ৭
মেজর জেনারেল জিয়া তার অফিস কম্পাউন্ডে বঙ্গবন্ধুর খুনি মেজর ডালিমকে পরম উষ্ণতায় জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন,‘ইউ হ্যাভ ডান সাচ এ গ্রেট জব! কিস মি! কিস মি!’

২০২১ আগস্ট ০৭ ০০:০০:১৭
আমায় ক্ষমা কর পিতা : পর্ব ৭মেজর জেনারেল জিয়া তার অফিস কম্পাউন্ডে বঙ্গবন্ধুর খুনি মেজর ডালিমকে পরম উষ্ণতায় জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন,‘ইউ হ্যাভ ডান সাচ এ গ্রেট জব! কিস মি! কিস মি!’

প্রবীর সিকদার

১৫ আগস্ট ভোর রাত। আততায়ীদের একটি শক্তিশালী দল ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে অ্যাকশন শুরু করেছে। নিরস্ত্র বঙ্গবন্ধুর হুংকার চলছে। এরই মধ্যে শেখ ফজলুল হক মনিকে খুন করে সুবেদার মোসলেম উদ্দিন হাজির বঙ্গবন্ধু ভবনে। বঙ্গবন্ধুকে দেখেই অস্ত্র উঁচিয়ে ধরে মোসলেম উদ্দিন। বঙ্গবন্ধু থমকে দাঁড়ান। বুলেট বিদ্ধ হন বঙ্গবন্ধু। পড়ে যান সিঁড়ির ওপর। সময় সকাল ৫ টা ৪০ মিনিট। বঙ্গবন্ধুর সারা শরীর জুড়ে চলে ব্রাশ ফায়ার। তারপর সারা বাড়িতে চলে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ।

পাকিস্তান প্রত্যাগত সেনা সদস্য মোসলেম উদ্দিন কিন্তু পরে রেহাই পায়নি। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ধুরন্ধর বেনিফিসিয়ারি জেনারেল জিয়া ১৯৭৭ সালে তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেয়। মৃত্যুর আগে মোসলেম উদ্দিন জানায়, সেই প্রথম শেখ মুজিবকে গুলি করেছিলো।

সকাল ৬টা ১মিনিটে রেডিওতে খুনি মেজর ডালিমের হৃদস্পন্দন থামিয়ে দেওয়া কন্ঠস্বর ভেসে আসে,‘আমি মেজর ডালিম বলছি, স্বৈরাচারী শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়েছে।’ সকাল সোয়া ৭টার দিকে মেজর জেনারেল জিয়া তার অফিস কম্পাউন্ডে মেজর ডালিমকে পরম উষ্ণতায় জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন,‘ইউ হ্যাভ ডান সাচ এ গ্রেট জব! কিস মি! কিস মি!’

বঙ্গবন্ধু তখন শুধুই লাশ। সেনা প্রহরায় তার লাশ টুঙ্গীপাড়ায় পৌঁছে। হতবিহবল টুঙ্গীপাড়ার মানুষ সেদিন তাদের প্রিয় ‘বংশীবাদক’কে শেষবারের মতো প্রাণভরে দেখতেও পারেননি! ৫৭০ সাবানে দায়সারা গোসল সেরে বঙ্গবন্ধু শায়িত হলেন শেষ শয্যায়!

এক সময় রেডিওতে ভেসে আসে খুনি মোশতাকের কন্ঠস্বর! ততক্ষণে সে রাষ্ট্রপতি! তার কন্ঠের বয়ান,‘এক ঐতিহাসিক প্রয়োজনে বাংলাদেশের সাড়ে ৭কোটি মানুষের সত্যিকার ও সঠিক আকাঙ্খাকে বাস্তবে রূপদানের পূত দায়িত্ব সামগ্রিক ও সমষ্টিগতভাবে সম্পাদনের জন্য পরম করুণাময় আল্লাহ্ তায়ালা ও বাংলাদেশের গণমানুষের দোয়ার উপর ভরসা করে রাষ্ট্রপতি হিসাবে সরকারের দায়িত্ব আমার উপর অর্পিত হয়েছে। ……… দেশবাসীর ভাগ্য উন্নয়নকে উপেক্ষা করে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং অন্যকে বঞ্চিত করে এক শ্রেনীর পৃষ্ঠপোষকদের হাতে সম্পদ কুক্ষিগত করা হয়েছে। ……… একটি বিশেষ শাসন চক্র গড়ে তোলার লোলুপ আকাঙ্খায় প্রচলিত মূল্যবোধের বিকাশ ও মানুষের অভাব-অভিযোগ প্রকাশের সমস্ত পথ রুদ্ধ করে দেওয়া হয়। এই অবস্থায় দেশবাসী একটি শাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে অব্যক্ত বেদনায় তিলে তিলে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছিল।

দেশের শাসন ব্যবস্থার বিবর্তন সর্ব মহলের কাম্য হওয়া সত্বেও বিধান অনুযায়ী তা সম্ভব না হওয়ায় সরকার পরিবর্তনের জন্য সামরিক বাহিনীকে এগিয়ে আসতে হয়েছে। সশস্ত্র বাহিনী পরমতম নিষ্ঠার সঙ্গে তাদের দায়িত্ব সম্পন্ন করে দেশবাসীর সামনে সম্ভাবনার এক স্বর্ণদ্বার উন্মোচন করেছেন। ……………।’

পিতা! এই তোমার স্নেহধন্য মোশতাক! মুক্তিযুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে। যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে কেঁদে কেঁদেই তোমার করুণা আদায় করেছে। একটি বারও কি তুমি ভেবেছো, তোমার আশ্রয়েই বেড়ে উঠছে তোমারই হন্তারক!

তোমার রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আমিও খুনি মোশতাকের ভাষণ শুনেছিলাম আগ্রহভরে। কী অকৃতজ্ঞ, কী কৃতঘ্ন সন্তান আমি!

পিতা মুজিব, আমায় ক্ষমা কর তুমি,ক্ষমা কর।