ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » ফিচার » বিস্তারিত

৭০ বছর বয়সেও বিশ্বভ্রমণে উদ্যমী যে নারী

২০২১ সেপ্টেম্বর ০৩ ১০:৪৬:৪২
৭০ বছর বয়সেও বিশ্বভ্রমণে উদ্যমী যে নারী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলো রে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এমন বাণী শুধু ভ্রমণের নেশায় মত্ত যারা তাদের বেলায় খাটে। যদিও কোনো নারীর একাই ভ্রমণে বের হওয়া সমাজে এখনও ট্যাবু বলা চলে। নিরাপত্তা, নীতি ও চলমান সমাজের বাধা ধরা নিয়মকানুন ভ্রমণের পথ রোধ করে দেয় নারীদের। একজন নারী একাই ভ্রমণে বের হয়েছেন এটা জেনে সাংস্কৃতিক আর সামাজিক বিধিনিষেধের বেড়াজালে আটকা পড়ে প্রচুর সমালোচনার শিকার হন নারীরা। অনেকে এটাও মনে করেন, ঘর থেকে একা বের হওয়া কোনো কোনো নারী নিরাপত্তার বিষয়টি পাত্তাই দেন না।

বলছি, ভারতের ৭০ বছর বয়সী ড. সুধা মহালিঙ্গামের কথা। ২৫ বছরে ৬৬টি দেশ ভ্রমণ করেছেন এ নারী। আজ থেকে ২৫ বছর আগে কোনো ভারতীয় নারীর একাই ভ্রমণে বের হওয়া খুব একটা সহজ ছিল না। কিন্তু ভ্রমণের নেশা তাকে ঘরবন্দি করে রাখেনি। যখনই সুযোগ পেতেন বাইরে যাওয়ার ঘুরে আসতেন নিজের পছন্দের তালিকায় থাকা জায়গাগুলো।

তবে মজার ব্যাপার হলো, এ নারী কোনো প্যাকেজ ট্যুরে যাওয়া পছন্দ করেন না। সিএনএনকে এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, প্যাকেজ ট্যুর খুবই অনুমান নির্ভর। তারা আপনাকে সেটাই দেখাবে তারা যেটা দেখতে চায়। আপনি কি দেখতে চান সেটা তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়।

দুই যুগ আগে ড. সুধা তার মূলধারার গণমাধ্যমের চাকরি ছেড়ে দেন এবং জ্বালানি গবেষক হিসেবে কাজ শুরু করেন। এরপর শিগগির তিনি বিভিন্ন তেল উৎপাদনকারী দেশের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখার আমন্ত্রণ পান এবং তার বিশ্বভ্রমণের দ্বার খুলে যায়।

এখন তিনি ৭০ এ পা রেখেছেন। ভ্রমণ করেছেন ৬ মহাদেশের ৬৬টি দেশে। তার পদচিহ্ন আঁকা ভারত থেকে শুরু করে বিশ্বভ্রমণ নিয়ে বইও লিখেছেন ‘দ্যা ট্র্যাভেল গডস মাস্ট বি ক্রেজি’।

তিনি বলছিলেন, কিভাবে কাজ এবং সংসারের পাশাপাশি ভ্রমণ পরিকল্পনা করেন। ভ্রমণের জন্য কোন টাইম ফ্রেম বা আলাদা কোনো ব্যবস্থা করা থাকে না তার, পুরোটাই হঠাৎ এবং পরিকল্পনাবিহীন।

ভ্রমণে বের হয়ে বাঁধার সম্মুখীনও হয়েছেন অনেকবার। বলেন, যখন তিনি চেক রিপাবলিকে পৌঁছান তখন তার কাছে বৈধ ভিসা ছিল না। আবার চীনে গিয়ে ভেজিটেরিয়ান খাবার কষ্ট করে ম্যানেজ করেন। ইরানে গিয়ে মনুমেন্টে আটকা পড়েন। কেনিয়ার নাইরোবিতে হলুদ জ্বরের ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রমাণে জটিলতার মধ্যে পড়েন। কিছু সময় বন্ধুরা থাকলেও অধিকাংশ ভ্রমণ তিনি একাই করেন বলে জানান।

সম্প্রতি ২০১৯ সালে তিনি মাদাগাস্কার ভ্রমণে যান। ১৯৯৭ সালে কাশ্মীরে ভ্রমণ করার সময় শঙ্কা আর বিপদে পড়ার কথাও জানান তিনি। এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন জায়গা ভ্রমণের অভিজ্ঞতার কথাও বলেন এ নারী। তিনি বলেন, একাই ভ্রমণে বের হওয়া কোনো বড় বিষয় নয়, যদি কারো আর্থিক সামর্থ্য থাকে।

ড. সুধা বলেন, করোনা মহামারির মধ্যে তিনি হতাশায় ভোগেননি এবং কোনো ঝামেলা ছাড়াই উপভোগ করেছেন ভ্রমণে বের হয়ে।
করোনার মধ্যে তিনি দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছেন। তিনি বলেন, ভ্রমণ তাকে মানুষের ওপর বিশ্বাস, আস্থা আর মানবিকতার নানা গুণ শিখিয়েছে। কিভাবে এক সংস্কৃতির কোনো ছেলে মেয়ের অন্য কোনো সংস্কৃতির ছেলে মেয়ের সঙ্গে বিয়ে হয়, কিভাবে কঠিন পরিবেশে বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর মানুষ টিকে থাকে তা থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন তিনি।

কলম্বিয়া, পাতাগোনিয়া, চিলি এবং আজেন্টিনা ভবিষ্যতে ভ্রমণ তালিকায় রয়েছে তার। প্রত্যাশা রাখেন প্রতিবছর ৩ টি করে আগামী ১০ বছরে আরও বহু দেশ ভ্রমণ করার। বলেন, যদিও আমার ভ্রমণ চেকলিস্ট পূরণ হবে না।

তথ্যসূত্র : সিএনএন

(ওএস/এএস/সেপ্টেম্বর ০৩, ২০২১)