ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » আনন্দ বেলা » বিস্তারিত

গল্পগুলো তোমাদের

২০২১ নভেম্বর ২৬ ১৪:০৬:২৭
গল্পগুলো তোমাদের








পাখির কাছে শেখা
সৌরজ্যোতি বক্সী (বয়স-৮)

প্রতিদিন সকালে আমি যখন ঘুম থেকে উঠি দেখি একটা ছোট্ট সুন্দর নীল-হলুদ রঙের নাম না জানা পাখি আমাদের কাঁচের জানলার বাইরে এসে বসে। পাখিটা কাছেরই কোনো গাছে থাকে বোধহয়। ছোট্ট সরু ঠোঁটটা দিয়ে জানলার কাঁচের ওপর নিজের ছায়াটাকে রোজ কিছুক্ষণ ঠোকরাতে থাকে সে। ও আমাকে রোজ স্কুলের জন্যে তৈরী হতে দেখে। আমি ওকে আসতে দেখলে ভীষণ খুশী হই আর মাঝে মাঝে ভাবি ইস ওর কি মজা !! ওকে স্কুলে যেতে হয়না,রোজ পড়তে বসতে হয়না,হোমওয়ার্ক ক্লাসটেষ্ট কিচ্ছু নেই । আবার কখনো বা আমার মনে হয় শুধু উড়ে উড়েই ও নিজের কত সময় নষ্ট করে !! কিন্তু ওর মতন উড়তে পারিনা বলেও আবার আমার খুব দুঃখ হয় জানো !

আমার বাবা-মা বলে যে ওরা পাখি তাই ওরা গাছে থাকে,খড়কুটো বা শুকনো কাঠি খুঁজে এনে বাসা বানায়,ডিম পাড়ে,ডিমে তা দেয়,খাবার সংগ্রহ করে এনে বাচ্চাদের খাওয়ায় । ওটাই ওদের কাজ।

যেমন আমার কাজ পড়াশোনা করা,বাবা মা আর গুরুজনদের কথা শোনা আর সময়ের কাজ সময়ে করা ।

পাখি যেমন নিজের কাজ নিজেই করছে আমাকেও তেমনি আমার কাজগুলো সুন্দরভাবে নিজের মতন করে করতে হবে।তবেই তো আমি বড় হব,প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠব।

অভাবপূরণ
শ্রেয়া বিশ্বাস (বয়স ৯)
এক গ্রামে এক ধনী শেঠজি ছিল।শেঠজির মনটা ছিল বড্ড ভাল।প্রতিদিন ভোরে মন্দিরে গিয়ে শেঠজি গরীব বাচ্চাদের খাবার-দাবার,জামাকাপড় বা কিছু না কিছু দান করে আসত।তাই শেঠজি মন্দিরে এলেই গরীব অনাথ বাচ্চারা ছুটে এসে তাকে ঘিরে ধরত কিছু পাবার আশায়।শেঠজি রোজই মন্দিরে আসেন, দানধ্যান করেন কিন্তু রোজই লক্ষ করেন যে একটা ছোট্ট মেয়ে কোনদিন তাঁর কাছে ছুটে আসেনা ,দূরে দাঁড়িয়ে কেবল তাকিয়ে থাকে। একদিন শেঠজি নিজেই তার কাছে যান,জানতে চান “কি ব্যাপার মা,সব্বাই আসে তুই তো কোনদিন আমার কাছে কিছু চাসনা,তোর খিদে পায়না ?”

“আমার চাইতে ভাল লাগেনা বাবা,আমি চাইনি বলেইতো তোমার মতন একজন বড় মানুষ আজ নিজে আমার কাছে এল।ঈশ্বর যার জন্যে যেদিন যেটুকূ খাবার মেপে রেখেছেন সে সেদিন সেটুকুই খেতে পায়”। মেয়েটির কথা শুনে শেঠজি মুগ্ধ হয়ে গেলেন এবং তাকে নিজের মেয়ের মতন করে মানুষ করার জন্যে নিজের বাড়িতে নিয়ে গেলেন ।এরপর ঐ অনাথ মেয়েটিকে তিনি অনেক লেখাপড়া শেখালেন এবং নিজের মনের মতন করে তাকে মানুষ করলেন।মেয়েটির কোনদিন আর কোনকিছুর অভাব রইলনা ।

রাজা আর সেই দুখীনি বৃদ্ধা
আবীরা মুখার্জী (বয়স-৮)
একদিন রাজা আর সুনীল বিকেলে খেলতে বেরিয়েছে।রাস্তায় তারা দেখল একজন গরীব বৃদ্ধা পথের ধারে শুয়ে রয়েছে।রাজা এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করল “তুমি এখানে শুয়ে আছো কেন?কত গাড়ী চলছে,সরে যাও ,ওঠ এভাবে রাস্তায় শুয়ে থেকনা,দুর্ঘটনা ঘটতে পারে”।

-“আমার নড়াচড়া করার শক্তি নেই বাবা,তিনদিন হল আমি কিছু খাইনি”...বৃদ্ধার কথায় খুব দুঃখ হল রাজার।সে এক দৌড়ে বাড়ি গেল,মাকে গিয়ে বল্ল,”আমায় কিছু খেতে দেবে মা?”রাজার মা রাজাকে খাবার জন্যে কয়েকটা কেক,বিস্কুট আর মিষ্টি দিলেন।রাজা সেগুল নিয়ে দে ছুট। বৃদ্ধার কাছে এসে বলল “এই নাও ওঠ ,খেয়ে নাও এগুলো”।বৃদ্ধা পরম তৃপ্তি দিয়ে খাবারগুলো খেয়ে রাজাকে অনেক আশীর্বাদ করলেন “তুমি বড় ভাল ছেলে বাবা,ভগবান তোমার মঙ্গল করুন”। বাড়ি ফিরে রাজা তার মাকে সমস্ত ঘটনা খুলে বলল। সব শুনে মা বললেন, “আমি খুব গর্ববোধ করছি রাজা,এমনিভাবেই সবসময় তুমি গরীবদের সাহায্য করবে”। রাজা বলল “আমি প্রাণপণ চেষ্টা করব মা”।

উফফ্‌, নাকটা গেল রে !!
রৌনক রায় (বয়স ৯)
ছোট্ট বালু বাঁদর দিনরাত গাছে ঝোলে আর বদমায়েশি করে ।এটা ছুঁড়ছে,ওটা ফেলছে,পাখিদের তাড়া করে বেড়াচ্ছে এই ওর কাজ,জিনিস ছোঁড়া আর নষ্ট করা ওর যেন একটা স্বভাব হয়ে দাঁড়িয়েছে ।ভাল ভাল পাকা পাকা ফল নিজেও খাবেনা কাউকে খেতেও দেবেনা,সব কেবল ছুঁড়ে ছুঁড়ে নষ্ট করবে।একদিন টুইটু নামের একটা ছোট্ট মিষ্টি পাখি একটা পাকা পেঁপে দেখে খেতে নেমেছে ঠিক সেই সময় বালু সেটাকে ছিঁড়ে নিয়ে থপ্‌ করে ছুঁড়ে মারল জঙ্গলের ভেতর।“যদি খাবেইনা তাহলে ফলটাকে অমনি নষ্ট করলে কেন?”-জিজ্ঞাসা করল টুইটূ। “যাও যাও,নিজের কাজ কর গিয়ে বেশি পাকামি করতে হবেনা তোমায়,বেশ করেছি ছুঁড়েছি,আমার যা খুশী করব,তোমার তাতে কি?”-জবাব দিল বালু।বলতে বলতেই বালুর চোখে পড়ল একটা রবারের লাল রঙের বল,যথারীতি সেটা তুলে ছুঁড়ে মারল বালু।বলটা লাগল গিয়ে সামনের গাছে,আর সঙ্গে সঙ্গে সটান ফেরত এসে সোজা বালুর নাকে। “উউউউউউহ্‌,আহহ্‌,মাগো,গেলাম...নাকটা গেল রে !!!” চিতকার করে উঠল বালু।টুইটূ পিছন ফিরে মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করল”আর কোনদিন ছুঁড়বে জিনিস অমনি করে?” “না ,আর কখখনো নয়,খুব শিক্ষা হল যা হোক”-জবাব দিল বালু ।

আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু
সঙ্কর্ষণ সেনগুপ্ত (বয়স-১০)
প্রত্যেক দিনের মতন সেদিন বিকেলেও আমি পার্কে গেছিলাম খেলা করতে।বন্ধুদের সাথে খেলায় মত্ত এমন সময় হঠাত কুঁই কুঁই করে করুণ সুরে একটা কান্নার মতন আওয়াজ।দেখলাম কিছু দুষ্টু ছেলে একটা বাচ্ছা কুকুরকে তাক্‌ করে ঢিল ছুঁড়ছে। আমার খুব রাগ হল।আমি ও আমার বন্ধুরা মিলে ছেলেগুলোকে বকা-ঝকা করে তাড়িয়ে দিলাম।দেখলাম কুকুরছানাটা বেশ আহত,ঠিকমত হাঁটতে পারছেনা।আমি কোলে করে তাকে বাড়িতে নিয়ে এলাম।মা তাকে একবাটি গরম দুধ দিল।সে চুক্‌চুক্‌ করে দুধটুকু খেয়ে নিল।কালোসাদা রঙের কুকুরছানাটির নাম দিলাম শ্যাডো-ইংরেজীতে যার মানে ছায়া।রাতে বাবা অফিস থেকে ফেরার পর আমরা শ্যাডোকে পশুদের ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলাম।ডাক্তারবাবু তার পায়ে একটা ব্যাণ্ডেজ বেঁধে দিলেন।বাড়ি ফিরে শ্যাডোর কি আনন্দ ! টুক্‌টুক্‌ করে লেজ নাড়াচ্ছে আর আমার পেছন পেছন ছুটে বেড়াচ্ছে।বাবা আর মা শ্যাডোকে বাড়িতে রাখতে রাজী হল।সেই থেকে শ্যাডো আমার সবসময়ের সঙ্গী।আমার তো ভাই-বোন নেই তাই শ্যাডোকে আমি আমার নিজের ভাইয়ের মতন ই ভালোবাসি।এখন শ্যাডোর বয়স এক বছর।রোজ যখন স্কুল থেকে বাড়ি ফিরি শ্যাডো লাফিয়ে উঠে আমাকে আদর করে।বিকেলে আমার সাথে খেলা করে।সন্ধ্যেবেলা যখন পড়াশোনা করতে বসি আমার পায়ের কাছে চুপটি করে শুয়ে থাকে শ্যাডো।রাত্তিরে আবার আমার সাথে ছাড়া ঘুমায়না।মা বলে শ্যাডোর নামকরণ সার্থক,ও সত্ত্যি ই আমার ছায়াসঙ্গী।