ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » মুক্তিযুদ্ধ » বিস্তারিত

যখন আমি যুদ্ধে গেলাম

২০২১ ডিসেম্বর ১২ ১৬:৩৮:৪১
যখন আমি যুদ্ধে গেলাম

দেবেশ চন্দ্র সান্যাল


বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠতম অর্জন গুলির মধ্যে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন সর্ব শ্রেষ্ঠতম। ১৯৪৭-এর দেশ ভাগের পর থেকেই পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের সঙ্গে বি মাতা সুলভ আচরণ করে আসছিল পশ্চিম পাকিস্তানিরা। পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির অধিকার স্বাধিকার হরণ করতে চেয়েছিল । এখানকার সম্পদ লুটে নিয়ে গিয়েছে পশ্চিম পাকিস্তানিরা। এমন কি ১৯৫২ সালে বাঙালির মায়ের ভাষা বাংলা ভাষাকেও কেড়ে নেওয়ার
পারিকল্পনা করেছিল। তারা উর্দূকে রাষ্ট্র ভাষা করার চেষ্টা করে ছিল।

৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে বাঙালিদের বিজয়ের পর পাকিস্তানের সামরিক সরকার প্রধান জে, ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা হস্থান্তর না করে টেক্কা খান কে দিয়ে বাঙালি নিধণ যজ্ঞ “অপারেশন সার্চ লাইট” শুরু করে। পাকিস্তানি সৈন্যদের জ্বালাও পোড়াও গণহত্যা ও নির্যাতন দেখে সর্বকালের সর্ব শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে শেষ বাণী প্রদান করেন। বাঙালি জাতিকে যার কাছে যা আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করার নির্দেশ দেন। শুরু হয় মহান মুক্তিযুদ্ধ। জাতির ক্রান্তিকালে আমি ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে একটি গেরিলা গ্রুপ নিয়ে দেশের অভ্যন্তরে আসি। তখন মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার অর্থ ছিল-“স্বজ্ঞানে সুস্থ শরীরে মৃত্যুর জন্য যাওয়া।’

পাকিস্তানি সৈন্যরা ছিল দীর্ঘ দিনের প্রশিক্ষণ প্রাপ্তত্ত আধুনিক অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত, আমাদের দেশের ও অনেক জামায়াতে ইসলামী ও অন্যান্য ইসলামী রাজনৈতিক দলের মৌলবাদি,পীচ কমিটি, রাজাকার,আলবদর,আল শামস তাদের পক্ষ
নিয়ে ছিল। ভারত যে আমাদের সহযোগিতা করতে পারবে এর কোন নিশ্চয়তা ছিল না । যুক্তরাষ্ট্র ও চীন সহ অনেক দেশ পশ্চিম পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে ছিল। এক অনিশ্চয়তার মধ্যে আমরা ঝাঁপ দিয়ে ছিলাম। কত দিনে দেশ স্বাধীন হবে তার কোন নিশ্চয়তা ছিলনা আমাদের গ্রুপ ১. বেলকুচি থানা আক্রমন যুদ্ধ ২. কালিয়া হরিপুর রেলওয়ে ব্রীজ সংলগ্ন
রাজাকার ক্যাম্প এ্যাম্বুস ৩. কল্যাণপুর ও ৪. ধীতপুর- এ পাকিস্তানি হানাদার সৈন্য ও তাদের এদেশীয় দোসরদের
বিরুদ্ধে সমুখ যুদ্ধ করে বিজয়ী হয়েছি। আমরা ছিলাম দেশ প্রেমে উজ্জীবিত।“মারবো না হয় মরবো” মন্ত্রে দীক্ষিত।
পাকিস্তানি হানাদাররা ছিল অন্যায় কারী। তারা গণহত্যা, জ্বালাওপোড়াও, লুটতরাজ, নারী ধর্ষণ, নির্যাতন, নিপিড়ন
প্রভৃতি মানবতা বিরোধী কাজ করেছে। তাই তারা পরাজিত হয়েছে। ১৬ ডিসেম্বর’৭১ লজ্জা জনক ভাবে তারা
মাথানত করে আমাদের কাছে আত্মসমপর্ণ করতে বাধ্য হয়েছে। আমরা ছিলাম দেশ প্রেমিক। স্বাধীণতা পাওয়া ছিল
আমাদের ন্যায্য অধিকার। তাই আমরা বিজয়ী হয়েছি। পাকিস্তানি সৈন্য ও তাদের এ দেশীয় দোসররা এদেশের ত্রিশ
লক্ষ মানুষ হত্যা, নির্যাতন, নিপিড়ন করেছে। দুই লক্ষাধিক মা-বোনের সম্ভম লুন্ঠন করেছে।

লেখক :বীর মুক্তিযোদ্ধা,সিরাজগঞ্জ।