ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » অগ্নিকন্যা » বিস্তারিত

শ্বশুরবাড়ির নির্যাতনে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে শিকলবন্দি রুমি

২০২১ ডিসেম্বর ১৩ ০৯:৪১:৩২
শ্বশুরবাড়ির নির্যাতনে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে শিকলবন্দি রুমি

ছাদেকুল ইসলাম রুবেল, গাইবান্ধা : বিয়ের পর ভালোই চলছিলো রুমি বেগম ও এনামুল মিয়া দাম্পত্য জীবন। ঘরে আসে একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তান। যে এখন বিয়ে উপযোগী কন্যা হিসাবে বাবা এনামুলের নিকট জীবন যাপন করছে। অপর দিকে স্বামী শ্বশুর শাশুড়ীর নির্যাতনে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে মৃত পিতার বাড়িতে অসহায় মায়ের সাথে শিকলবন্দি জীবনযাপন করছে রুমি বেগম (৪০)।

গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলার আমলাগাছী বাজারে দেখা যায়, মানসিক ভারসাম্যহীন নারী পায়ে শিকলপাড়া অবস্থায় এক পা এক পা বাড়িয়ে চলছেন। একে তো দু পায়ে দুটো বালা তাতে তালা দিয়ে শিকল বাধা, পায়ের গোড়ালী গুলোসহ হাটু পর্যন্ত নানা স্থানে ধরেছিলো ঘা যা আজ কড়া পড়েছে। এক পা এক পা করে বাজারের এপার হতে ওপার এ গ্রাম হতে ও গ্রাম ঘুরে ফিরছেন আপন মনে। ঘুরতে ঘুরতে কখনো গলা ছাড়িয়ে গান গায় আবার একা একা কথা বলে স্পষ্ট ভাষায়। ইংলিশ ও বাংলা লেখা সহসাই পড়ছে জোড়ে। কিন্তু সে ক্যামেরা সামনে কোন কিছু বলতে চায়না বন্দি জীবনের বিষয়ে কিছু জানাতেও চায় না অভাগী মানসিক ভারসাম্যহীন শিকলবন্দি এ নারী। রুমি বেগমের পিতার বসতবাড়ীতে গিয়ে দেখা যায়, ছোট একটি ছাপড়া ঘরে ছাগলের পাশে একটি টং এর উপরে তার বিছানা, যেখানে তার অমানুবিক জীবন যাপন যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। অসহায়ের প্রতিচ্ছবির দেখা মেলে তার বসতঘরে।

স্থানীয়দের নিকট জানা যায়, ভালো ফলাফল নিয়ে এসএসসি পাশ করার পর বিয়ে হয় রুমি বেগমের তারপর সেখানে এক কন্যা সন্তানের জননী হন রুমি বেগম। সেখানে স্বামী শশুর শাশুড়ীর নির্যাতনে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে শিকল বন্দি জীবন যাপন করছেন রুমি বেগম। সে উপজেলার বরিশাল ইউনিয়নের কয়ারপাড়া গ্রামের মৃত দবির উদ্দিন মেলেটারির কন্যা । চার বোনের মধ্যে সে তৃতীয়। পুরুষহীন অসহায় পরিবারের সামর্থ্য না থাকায় বিনা চিকিৎসায় দিনের পর দিন শিকল বন্দি জীবন যাপন করছে অভাগী রুমি বেগম।

রুমি বেগমের মা মেহেরুনেসা সহ পরিবারের অন্যান্য জানান, স্বামী শশুর শাশুড়ীর নির্যাতনে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে তিন সাড়ে তিন বছর হলো শিকলবন্দি জীবন যাপন করছেন রুমি। তার চিকিৎসায় সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যয় করেছে পরিবার বর্তমানে ব্যয় বহন করা সম্ভব না হওয়ায় ও তাকে না হারানোর ভয়ে কামারের নিকট গিয়ে পায়ে কড়া বালা শিকল পড়িয়ে দিয়েছে অভাগী রুমির অসহায় মা মেহেরুনেসা। তিনি সরকারি সহায়তায় দিয়ে তার কন্যার সুচিকিৎসার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমপি ও সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

(এসআইআর/এএস/ডিসেম্বর ১৩, ২০২১)