ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » মুক্তচিন্তা » বিস্তারিত

ঋণখেলাপি ও দুর্নীতিবাজকে ধিক্কার!

২০২১ ডিসেম্বর ২৩ ১৫:৩৮:১৫
ঋণখেলাপি ও দুর্নীতিবাজকে ধিক্কার!

চৌধুরী আবদুল হান্নান


ধিক্কার আর ঘেন্নায় জর্জরিত হয়ে লজ্জায় মাথা নত করে দেশের একজন অসাধারণ নাগরিকের বিমান বন্দর ত্যাগ করার দৃশ্যটি বড়ই উপভোগ্য ছিল। বিশিষ্ট নাগরিকেরা যখন বড় ধরনেরনিচু কাজ করেন, তখন এমন উপভোগ্য-দৃশ্যের অবতারণা তো হবেই ।

অশ্লীল কথা-বার্তা আর একজন চিত্রনায়িকাকে ধর্ষণের হুমকির ঘটনা তার জীবনে এমন বড়দুর্ঘটনা বয়ে আনবে তা তিনি নিশ্চয়ই অনুমানও করতে পারেননি। তবে সবই সম্ভব হয়েছেদেশের সচেতন মানুষের একযোগে সোচ্চার হয়ে ধিক্কার জানানোর ফলে। মানুষের ধিক্কার ও ঘৃণা এখানে মহৌষধ হিসেবে কাজ করেছে এবং এমন ধন্বন্তরি ঔষধ অন্যরোগেও প্রয়োগ করার সময় এসেছে।

জনরোষ আর গণধিক্কারে ঋণখেলাপি ও দুর্নীতিবাজদের শক্ত ভিত কাঁপিয়ে দেওয়ার একটিউদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।
২০১৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর সমকালে “ ঋণখেলাপিদের লজ্জা দিতে চীনে মোবাইল রিংটন “শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল — সে দেশে ঋণখেলাপিদের বাধ্য করা হচ্ছেরিংটন হিসেবে “আপনি যাকে ফোন করেছেন সে ঋণখেলাপি, তাকে বলুন আইন মানতে, ঋণপরিশোধ করতে “ ব্যবহার করতে। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল সামাজিক মূল্যবোধ জাগ্রত করা। ঋণখেলাপিদের লজ্জা দিতে আমাদের ব্যাংকগুলো চীনের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করতে পারে
আইনের জাল দিয়ে পুঁটি-টেংরা ধরা যায়, বোয়াল মাছ আটকানো যায় না। তাছাড়া, আইনতো আর এখন নিজস্ব গতিতে চলে না, অর্থ আর ক্ষমতার প্রভাবে দিক পরিবর্তন করে ।

ব্যাংক থেকে যারা অবলীলায় অর্থ বের করে নিতে পারে, ফেরত দিতে হয় না, তারা বড়ক্ষমতাশালী। অবৈধ অর্থ শক্তির দুর্দান্ত প্রতাপের কাছে আমরা বার বার অসহায় হয়ে পড়ছি। আমরা প্রতিকারহীন এক গুরুতর সমস্যার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। মুদ্রা বাজারে প্রবেশ করে এ অতিরিক্ত অর্থে সৃষ্ট সামাজিক অস্হিরতার জ্বালা ভোগ করে চলেছেপ্রতিটি নাগরিক। অতি সম্প্রতি এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের মতামতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, যারা ঋণখেলাপি, বিলখেলাপি, অর্থ পাচারকারী তারাই সব চেয়ে বড় অপরাধী কিন্ত তারাই আবার গুরুত্বপূর্ণজায়গায় প্রতিষ্ঠিত এবংসমাজে যতক্ষণ পর্যন্ত দুর্নীতিবাজদের ঘৃণা, পরিত্যাজ্য না করবেততক্ষণ পর্যন্ত দুর্নীতি দূর হবে না।

মহামান্য রাষ্ট্রপতি বলেন, দুর্নীতি ও দুর্নীতিবাজদের সাময়িকভাবে বয়কট করতে হবে। সৎ, আন্তরিক ও নিষ্ঠাবানদের সামাজিকভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। তাহলেই দুর্নীতি হ্রাস পাবে। সমাজের উঁচু স্তরে বিচরণকারী ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপী আর দুর্নীতিবাজদের অত্যাচারে দেশেরপ্রতিটি নাগরিক ক্ষতিগ্রস্ত, তাই ওই দুর্বৃত্তদের প্রতিহত করতে সকলকেই অংশ নিতে হবে, বিশেষকরে তরুণদের। দেশের রাজনীতিকদের কাছে তরুণদের কিছু শেখার নেই, দিক নির্দেশনা পাওয়ারও নেই, এমনকি চাকুরিজীবী সিনিয়রদের কাছেও। কারণ, যত বড় পদ আর যত বেশি দিন চাকুরি তত বেশিঘুষ, দুর্নীতির সুযোগ। ঋণখেলাপি আর দুর্নীতিবাজদের প্রতিহত করতে কোনো ঔষধই যখন কার্যকর হতে দেখা যাচ্ছেনা , তাদের প্রতি ঘৃণা, ধিক্কার জানানোর প্রক্রিয়া সূচনা করা যায় যাতে তাদের মধ্যে কিছুটাহলেও লজ্জা-বোধ জাগ্রত হয় !

১। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে গণভবন , বঙ্গভবন বা অন্য কোথাও তাদের আমন্ত্রণ নাজানানো।

২। বাড়ি করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি পেতে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করার শর্তারোপকরা।

৩। বিদেশ ভ্রমন নিয়ন্ত্রণ করা।

৪। পাশপোর্ট ইস্যু , গাড়ি ক্রয়ের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করা ইত্যাদি।

ঋণখেলাপীরা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে পারে না — এমন আইন বিদ্যমান আছে ।কাছেই এবিষয়ে সরকার উদ্যোগী হলে, এক পর্যায়ে ইচ্ছাকৃত ঋণখলাপি আর দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধেএকটি সামাজিক আন্দোলন সূচনা হতে পারে।
নষ্টদের হাতে সব কিছু চলে যাওয়ার আগে আমাদের ঘুম ভাঙতে হবে।

লেখক : সাবেক ব্যাংকার।