ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » দেশের বাইরে » বিস্তারিত

বিদেশি বিনিয়োগের শর্ত শিথিল করছে ফিলিপাইন

২০২২ জানুয়ারি ১৭ ১৬:১৭:০৭
বিদেশি বিনিয়োগের শর্ত শিথিল করছে ফিলিপাইন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিদেশি খুচরা বিক্রেতাদের প্রবেশের নিয়ম সহজ করার মাধ্যমে এশিয়ার সবচেয়ে কঠিন বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) শর্ত শিথিল করতে যাচ্ছে ফিলিপাইন। সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই)- এর মাধ্যমে এক দেশে থেকে অন্য কোনো দেশে ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে বিনিয়োগ ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করা যায়।

ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতের্তে এ সংক্রান্ত একটি আইনে স্বাক্ষর করেছেন। এই আইনটি কার্যকর হলে বিদেশি খুচরা বিক্রেতারা ফিলিপাইনের অভ্যন্তরে নিজেদের দোকানও খুলতে পারবেন। আইনটির বিষয়ে সরকারের প্রজ্ঞাপন জারির সময় ৬ জানুয়ারি। এর ১৫ দিন পর এটি কার্যকর হবে বলে জানা গেছে। আইনটির সমর্থনে প্রতিযোগিতামূলক বাজার সৃষ্টি হবে বলে অনেকে এটিকে স্বাগত জানালেও স্থানীয় কোনো কোনো সমালোচক ও ব্যবসায়ী বলছেন, এটি দেশের শিল্পখাতকে ধ্বংস করবে।

প্রজাতন্ত্র আইন নম্বর ১১৫৯৫ এর সংশোধন করে রিটেইল ট্রেড লিবারেশন অ্যাক্ট ২০০০ করা হয়েছে দেশটিতে। এতে বিদেশি কোম্পানিগুলোর জন্য ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধনের প্রয়োজনীয়তা ২ দশমিক ৫ মিলিয়ন থেকে ৪৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার করা হয়েছে। খুচরা বাণিজ্য উদারীকরণ এই আইনের আওতায় অন্যান্য ক্ষেত্রেও যেমন প্রয়োজনীয় নিট মূল্য, শাখার সংখ্যা এবং ট্র্যাক রেকর্ডের শর্তগুলোও সরানো হয়েছে।

আইনটি ফিলিপাইনের অর্থনীতিকে উন্মুক্ত করার লক্ষ্যে তিনটি মূল আইনের মধ্যে একটি। যেটি করতে দুতের্তের অর্থনৈতিক টিম চাপ সৃষ্টি করে বলে জানা যাচ্ছে।

ফিলিপাইনের অর্থসচিব কার্লোস ডমিনগুয়েজ বলেছেন, আগের খুচরা বাণিজ্য আইন ‘আনুপাতিকভাবে বড় উদ্যোগের পক্ষে ছিল, ফিলিপাইনের খুচরা বাজারে স্টার্টআপের মতো বিভিন্ন ছোট বিনিয়োগকারীদের প্রবেশে বাধা দেয় এটি এবং বিদেশি খুচরা বিক্রেতাদের জন্য জটিলও ছিল।

স্থানীয় খুচরা শিল্প সংশ্লিষ্টরা এটির বিরোধীতা ও কঠোর সমালোচনা করছেন। তবে আগামী জুন মাসে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি পর্বে করোনা মহামারির কবল থেকে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করতে এটিকে অগ্রাধিকারমূলক আইন হিসেবে বিবেচনা করেন দেশটির বর্তমান প্রধান দুতের্তে।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে সুইডিশ আসবাবপত্রের বৃহত্তম কোম্পানি আইকেএ এবং জাপানের ইউনিক্লোর শাখা থাকা সত্ত্বেও স্থানীয় খুচরা ব্যবসায়ীরা আধিপত্য ধরে রেখেছে। পারিবারিকভাবে গড়ে উঠা বহুজাতিক কোম্পানি এসএম ইনভেস্টমেন্ট এবং গোকংওয়েই গ্রুপের রবিনসন্স রিটেইল হোল্ডিংস সবচেয়ে বড় আধিপত্যকারী প্রতিষ্ঠান।

দেশটির বাণিজ্য ও শিল্প বিভাগের তথ্য-উপাত্ত থেকে জানা গেছে, আইকেএ এবং ইউনিক্লোর মতো মাত্র ২০টি বিদেশি খুচরা বিক্রয় কোম্পানি দেশটিতে ব্যবসা করার ২০০০সালের সংশোধনী আইন অনুযায়ী অনুমোদনের যোগ্য হয়। যাদের মধ্যে সুইডিশ পোশাক কোম্পানি এইচ অ্যান্ড এম, ফ্রান্সের খেলার সামগ্রী বিক্রয় প্রতিষ্ঠান ডেকাথলন এবং জাপানের ফ্যামিলি মার্টও রয়েছে।

অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ নিয়ন্ত্রক সীমাবদ্ধতা সূচকে ফিলিপাইন এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে এবং এটির খুচরা বিক্রয় খাত হলো প্রধান।

ফিলিপাইনের সেন্ট্রাল ব্যাংকের তথ্য বলছে, দেশটি ২০২০ সালে খুচরা বিক্রয় খাতে ৮৩ দশমিক ৫ মিলিয়ন এফডিআই গ্রহণ করেছে। যেটি ছিল পুরো বছরের হিসাব।

নতুন আইনের শর্ত সাপেক্ষে সব ধরনের ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করতে পারবেন ফিলিপাইনের বাজারে।

ফিলিপাইনের আমেরিকান চেম্বার অব কমার্সের সিনিয়র পরামর্শক জন ফোর্বস বলেন আইনটির গঠন কাঠামো খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং নতুন অনেক বিদেশি বিনিয়েোগকারীকে আকর্ষণ করবে এটি।

ব্রিটিশ চেম্বার অব কমার্স ফিলিপাইনের নির্বাহী পরিচালক ক্রিস নেলসন বলেছেন, এই আইনটি সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের জন্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে প্রতিযোগিতামূলক বাজার ব্যবস্থাকে উন্নত করবে।

কিন্তু ফিলিপাইন রিটেইলার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা আইনটি নিয়ে সন্দিহান। সংগঠনটির ভাইস চেয়ারম্যান রবার্তো ক্লাউডিও বলেছেন, ন্যূনতম পরিমাণ বিনিয়োগের সঙ্গে, সরকার যথেষ্ট বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করবে কি-না আমি সন্দেহ পোষণ করি।

ক্লাউডিও বলেন, যে স্থানীয় ছোট উদ্যোক্তারা বিদেশি প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুত নাও হতে পারে। তিনি বলেন, আমি উদ্বিগ্ন যে নাথান রোডের খুচরা বিক্রেতারা এখানে আসবে এবং জুতা বা ক্যামেরা বিক্রি করবে।

তিনি আরও বলেন, অধিকাংশ ফিলিপিনো উদ্যোক্তাদের এন্ট্রি পয়েন্ট হলো খুচরা বিক্রয় মার্কেট। আপনি যদি তাদের বিদেশি প্রতিযোগিতার মধ্যে ফেলে দেন দেন, তাহলে তারা অসুবিধায় পড়বে।

তবে ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিকের অর্থনীতিবিদ ভিক্টর আবোলা বলেছেন যে এই আইনগুলো অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে একটু সময় লাগবে। এগুলো সবই এফডিআই-এর জন্য ভালো উদ্দীপনা।

আবোলা বলেন, আগামী মে মাসে দেশটিতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি আরও বলেন, তবে আমি মনে করি না আমাদের এখনই একটি বড় প্রবাহ আশা করা উচিত কারণ বিদেশি বিনিয়োগকারীরা নতুন প্রশাসন না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। সূত্র: নিক্কেই এশিয়া।

(ওএস/এসপি/জানুয়ারি ১৭, ২০২২)