প্রচ্ছদ » মুক্তিযুদ্ধ প্রতিদিন » বিস্তারিত
২৫ মার্চ, ১৯৭১
পাকহানাদার বাহিনী শহরে ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষকে হত্যা করে
২০২২ মার্চ ২৫ ০৯:২৪:০৬উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ ডেস্ক : আজ বাংলার বুকে নেমে আসে কালরাত্রি, অত্যাচার, উৎপীড়ন, পাশবিকতা, নৃশংসতা আর হিংস্রতার কালো থাবা। পাকহানাদার বাহিনী পূর্বপরিকল্পিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পূর্ণ সামরিক সম্ভার নিয়ে রাত ১ টা অতিক্রম করার সাথে সাথে শুরু করে সারা দেশব্যাপী পৃথিবীর ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসলীলা।সামরিক ভাষায় ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে পরিচিত ছিল এই হত্যা-অভিযান।
প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান সন্ধ্যা পৌনে ছয়টায় প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে সরাসরি এয়ারপোর্টে চলে যান।রাত পৌনে আটটায় তিনি গোপনে বিমান যোগে ঢাকা ত্যাগ করেন।নিরপরাধ বাঙালিদের ওপর কাপুরোষোচিত সশস্ত্র হামলা চালাবার নির্দেশ দেয়।
পাকহানাদার বাহিনী জেনারেল ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে জল্লাদের মতো বাংলাদেশের নিরস্ত্র নিরপরাধ জনগনের ওপর মেশিনগান,মর্টার আর ট্যাঙ্ক নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং শহরে ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষকে হত্যা করে।
রাত ১ টা বাজার সাথে সাথে পরিকল্পনানুযায়ী ২২ তম বেলুচ রেজিমেন্টের সৈন্যরা পিলখানা ইপিআর হেড কোয়ার্টারে আক্রমণ চালায়।কেন্দ্রীয় কোয়ার্টার গার্ডে ১৮ জন বাঙালি গার্ড থাকলেও তারা পাল্টা আক্রমণের সুযোগ পায়নি।
পিলখানা আক্রমণের সাথে সাথে রাজারবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাঁখারি বাজারসহ সমগ্র ঢাকাতেই শুরু হয় প্রচন্ড আক্রমণ। বিভিন্ন এলাকাতে যথেচছ হত্যা, লুন্ঠন, ধর্ষণ এবং অগ্নিসংযোগ করে চলে বর্বর পাক হানাদার বাহিনী।
২৬ মার্চের প্রথম প্র হরে মুক্তিসংগ্রামের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।গোপন ওয়ারল্যাস বার্তায় তিনি বলেন: “পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আমাদের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে।ছাত্র-জনতা-পুলিশ-ইপিআর শত্রুর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে।সশস্ত্র মুক্তি সংগ্রাম শুরু হয়েছে। আমি ঘোষণা করছি আজ থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র।সর্বস্তরের নাগরিকদের আমি আহ্বান জানাচ্ছি,আপনারা যে যেখানে যে অবস্থাতেই থাকুন,যার যা আছে তাই নিয়ে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ না করা পর্যন্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলুন।সম্মিলিতভাবে শত্রুর মোকাবেলা করুন।এই হয়তো আপনাদের প্রতি আমার শেষ বাণী হতে পারে।আপনারা শেষ শত্রুটি দেশ থেকে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে যান।”
এর আগে সকালে প্রেসিডেন্ট ভবনে ভূট্টো-ইয়াহিয়া এবং ইয়াহিয়া ও পিপলস পার্টির উপদেষ্টাদের মধ্যে আলোচনা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বঙ্গবন্ধুর কাছে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার ঢাকা ত্যাগের খবর সঙ্গে সঙ্গেই পৌছে ছিল।রাত ৯ টার পর বঙ্গবন্ধু তাঁর বাসভবনে উপস্থিত দলীয় নেতা,কর্মী,সমর্থক,ছাত্র নেতৃবৃন্দও সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন,আমরা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েছি।কিন্তু জেনারেল ইয়াহিয়া খান সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণের মধ্যদিয়ে সমস্যার সমাধান করতে চাচ্ছেন।এ ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট অখন্ড পাকিস্তানের সমাপ্তি টানতে চলেছেন।
পীলখানায় ইপিআর ব্যারাক ও অন্যান্য স্থান থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার লিখিত বাণী ওয়ার্লেসের মাধ্যমে সারা দেশে ম্যাসেজ আকারে পাঠানো হয়। এই ওয়ার্লেস বার্তা চট্টগ্রাম ইপিআর সদর দফতরে পৌঁছায়। চট্টগ্রাম উপক’লে নোঙর করা একটি বিদেশী জাহাজও এই ম্যাসেজ গ্রহণ করে। চট্টগ্রামে অবস্থানকারী আওয়ামী লীগের শ্রম সম্পাদক জহুর আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার বাণী সাইক্লোস্টাইল কওে রাতেই শহরবাসীর মধ্যে বিলির ব্যবস্থা করেন।
রাত ১টায় পাকবাহিনীর একটি দল বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের অদূরে শুক্রাবাদে ব্যারিকেডের মুখোমুখি হয়। এখানে প্রতিরোধ ব্যুহ ভেঙে হানাদাররা রাত দেড়টায় বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সামনে আসে। হানাদার বাহিনী বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে।
বঙ্গবন্ধুকে রাত দেড়টায় তাঁর বাসভবন থেকে বন্দী করে শেরেবাংলা নগরস্থ সামরিক বাহিনীর সদর দফতরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে বঙ্গবন্ধুকে সেনানিবাসে স্থানান্তর করা হয়। সকাল পর্যন্ত আদমজী কলেজের একটি কক্ষে বঙ্গবন্ধুকে আটক রাখা হয়।
তথ্যসূত্র : মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
(ওএস/এএস/মার্চ ২৫, ২০২২)