ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » স্বাস্থ্য » বিস্তারিত

‘স্বাস্থ্যখাতে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে কম ব্যয় করে বাংলাদেশ’

২০২২ এপ্রিল ০২ ১৭:৪৭:২৯
‘স্বাস্থ্যখাতে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে কম ব্যয় করে বাংলাদেশ’

স্টাফ রিপোটার : স্বাস্থ্যসেবায় এশিয়ার সবচেয়ে কম খরচ হয় বাংলাদেশে উল্লেখ করে অর্থনীতিবিদ ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, আমি খুবই হতাশ বাংলাদেশের সমসাময়িক (২০২১ সাল) স্বাস্থ্যসেবায় খরচ হওয়া জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) রেশিও সাউথ এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্ন।

শনিবার (২ এপ্রিল) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ আয়োজিত ‘স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর: বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের বিকাশ’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

রেহমান সোবহান বলেন, এ ব্যয় স্বল্প আয়ের দেশের তুলনায়ও কম। কিন্তু তার তুলনায় প্রাইভেটভাবে স্বাস্থ্যখাতেই ভালো পরিমাণে অগ্রগতি হয়েছে।তবে সেকারণে চিকিৎসা খরচের ৬৭ শতাংশের বেশি ব্যক্তির পকেট থেকে যাচ্ছে।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, চলমান স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় চিকিৎসা খরচ বহন করতে গিয়ে অসংখ্য মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাচ্ছে। অন্যান্য দেশে যেখানে বিনামূল্যে ও অতি সহজ উপায়ে জনগণকে চিকিৎসা ও ওষুধ দেওয়া হয়, সেখানে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। স্বাস্থ্যনীতি থাকলেও সেটি কার্যকর নয়। এছাড়া অন্যান্য দেশে জিডিপির বড় একটা অংশ স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় করলেও বাংলাদেশ সেখানে এক শতাংশের কম। ফলে বিনিয়োগ না বাড়ায় অনেককিছু অগ্রগতি হলেও পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ।

সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক বলেন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার যে পরিবর্তন হয়েছে আমরা সবাই জানি। বিশ্বে আমাদের স্বাস্থ্য নিয়ে ইতিবাচক ধারণা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কি ছিল, আর এখন কি অবস্থা সেটি আমরা দেখতে পাচ্ছি। সেইসঙ্গে ২০০৯ সালের পর বর্তমান সরকার স্বাস্থ্যখাতে কী পরিবর্তন করেছে সেগুলোও আলাদাভাবে আলোচনায় এলে আরও ভালো হতো।

তিনি বলেন, অনেক দেশ জিডিপির ২ থেকে ৩ শতাংশ ব্যয় করে স্বাস্থ্যখাতে, আমাদের এক শতাংশেরও কম। তারপরও আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এগিয়েছে। যেটি ইতিবাচক। তবে অনেক অব্যবস্থাপনাও রয়েছে। আমাদের পুষ্টি এখনো ঘাটতি রয়েছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে। এটির পরিবর্তন হওয়া দরকার। আমাদের ব্যক্তি খরচ অনেক বেশি। অভ্যন্তরীণ রোগীরা বিনামূল্যে ওষুধ পেলেও বহির্বিভাগে এখনো সেটি সেভাবে করা যায়নি। ফলে এ ব্যয় বেড়েই চলেছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ক্লিনিক, জেলা সদর হাসপাতালসহ চিকিৎসার প্রতিটি স্তরে যে জনবল সংকট সেটিরও সমাধান দরকার।

সুইডিশ ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন এজেন্সির (সিডা) স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ডা. জহিরুল ইসলাম বলেন, আমাদের মাতৃ ও শিশু মৃত্যু কমেছে। কিন্তু স্বাস্থ্যে যে বৈষম্য বাড়ছে, সেটি খুবই দুঃখজনক। এ জন্য এ খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, অনেক মানুষ স্বাস্থ্য ব্যয় মেটাতে গিয়ে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাচ্ছে। গড় আয়ু বাড়লেও স্বাস্থ্যসেবা ভালো না হওয়ায় শেষ সময়ে গিয়ে বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন বয়স্করা। এজন্য একটি স্বাস্থ্য কমিশন জরুরি। সরকার যদি নাও করে ব্যক্তি উদ্যোগে হলেও এটি হওয়া দরকার।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের অন্যতম প্রধান কাজ হলো বৈষম্যহীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। আমাদের সংবিধানেও এটি ভালোভাবে বলা হয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে যে নারী আন্দোলন হয়েছে, এর মধ্যে নারীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা, নিরাপদ গর্ভপাত রক্ষা করাসহ অনেক কাজ করেছে নারীরা। নারীর ক্ষমতায়নে নারীর অধিকার নিয়ে, পুরুষদের সচেতনতা নিয়ে কাজ করেছে মহিলা পরিষদ।

বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচের উপদেষ্টা কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. রওনক জাহান বলেন, মুক্তিযুদ্ধে চিকিৎসকদের ভূমিকা নিয়ে দেশে তেমন লেখালেখি নেই। একই সঙ্গে তথ্যপ্রুযক্তি, অর্জনের সঙ্গে কোথায়, কেন আমাদের স্বাস্থ্যখাতের ঘাটতি সেগুলোও চিহ্নিত করা হয়েছে বইটিতে। বাংলাদেশের যে অর্জন সেটি আমরা কেবল দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে বিশেষ করে ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা করি। পাশের নেপালও আমাদের অনেক ছোট মনে করে। থাইল্যান্ডসহ ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে আমরা কতটা এগোতে পেরেছি সেটি দেখা উচিত। থাইল্যান্ড গত ৬০ বছরে সার্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পেরেছে। কীভাবে পেরেছে, সেটা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। তাদের সঙ্গে কেন তুলনা করি না আমরা।

বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. রহমান জাহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন, দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচের আহ্বায়ক আহমাদ মোশতাক রাজা চৌধুরী প্রমুখ।

(ওএস/এএস/এপ্রিল ০২, ২০২২)