ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রচ্ছদ » ফিচার » বিস্তারিত

সংবাদকর্মীদের অনুপ্রেরণার নাম বিমল কুমার সাহা

২০২২ জুন ০১ ১৯:১২:১৮
সংবাদকর্মীদের অনুপ্রেরণার নাম বিমল কুমার সাহা


শেখ ইমন, শৈলকুপা : বয়স ৭৫ বছর । তবে বয়সে প্রবীণ হলেও কর্মে তরুণ। কখনো মোটরসাইকেল, কখনো বাস, আবার কখনো ভ্যানে চড়ে বা পায়ে হেটে সংবাদের পিছনে দৌড়ান। দিন বা রাত যেখানে খবর সেখানেই ছুটে যান। তিনি ঝিনাইদহের প্রবীণ সাংবাদিক বিমল কুমার সাহা। এই বয়সেও তরুণদের সাথে সাংবাদিকতায় প্রতিযোগীতা করে চলেছেন। ৫৫ বছর সাংবাদিকতার বয়সে অসংখ্য পত্র-পত্রিকা ও টেলিভিশনে কাজ করেছেন।

১৯৬৭ সালে ইংরেজি পত্রিকা দ্যা ওয়েভ এর মাধ্যমে সাংবাদিকতার হাতেখড়ি শুরু তার। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ইংরেজি দৈনিক মর্নিং নিউজের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ছিলেন। এরপর ১৯৬৯ সালে তিনি দৈনিক ইত্তেফাকের ঝিনাইদহ প্রতিনিধি হিসেবে কাজ শুরু করেন। ইংরেজি দৈনিক দ্যা নিউ নেশান এর ঝিনাইদহ জেলা প্রতিনিধি হিসেবেও কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। বাংলাদেশ টেলিভিশনের ঝিনাইদহ জেলা প্রতিনিধি ছিলেন ১৯৮৪ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত। বর্তমানে দৈনিক ইত্তেফাকের দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি ও ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের ঝিনাইদহ জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত আছেন।

শুধু সংবাদ লেখা নয়, ভিডিও ফুটেজ,ভিডিও এডিটিং ও ফটো এডিটিং এর কাজেও তিনি অত্যন্ত পারদর্শী। তরুণ সংবাদকর্মীদের অনুপ্রেরনার নাম বিমল কুমার সাহা। সাংবাদিকতার এই দীর্ঘ সময়ে দৈনিক ইত্তেফাক ও ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনে অসংখ্য চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদন করেছেন যা দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ৮০’র দশকে ভারতের রহস্য ঘেরা সংগঠন আনন্দমার্গ এর উপর বিশেষ প্রতিবেদন করে সাড়া ফেলেছিলেন তিনি। ভারত কতৃক বাংলাদেশ সিমান্তে অবজারভেশন টাওয়ার নির্মাণের প্রতিবেদনটি তিনিই প্রথম করেন। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের তৎপর চরমপন্থি সংগঠনগুলোর উপরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ধারাবাহিকভাবে প্রতিবেদন করেছেন। ঝিনাইদহের চাঞ্চল্যকর নানা খবরে বিট্রিশ গনমাধ্যম (বিবিসি) তার ভয়েস রেকর্ড নেয়। তৃনমূুলের সাংবাদিকতা করলেও দৈনিক ইত্তেফাকে সাড়া জাগানো জাতীয় পর্যায়ের রিপোর্ট ও করেছেন তিনি। যা এখনও অব্যাহত আছে। সাংবাদিকতার পাশাপাশি দীর্ঘদিন কলেজে শিক্ষকতাও করেছেন এই প্রবীণ সাংবাদিক।

সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের জন্য স্থানীয়ভাবে ও জাতীয় পর্যায়ে নানাভাবে সম্মানিত হয়েছেন। ২০১৯ সালে ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের পক্ষ থেকে এ্যক্সিলেন্ট পারফরমেন্স অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। দৈনিক ইত্তেফাক থেকেও পেয়েছেন নানা সম্মাননা। তৃণমূল সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য 'বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ২০২১' গুণী সম্মাননাও রয়েছে তার ঝুলিতেই। সোমবার (৩০ মে) সন্ধ্যায় রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরা (আসিসিবি) মিলনায়তনে জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাঁর হাতে এই সম্মাননা স্মারক তুলে দেয়া হয়।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নিজামুল হক নাসিম, জুরিবোর্ড প্রধান অধ্যাপক ড. মো. গোলাম রহমান, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ও মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড কমিটির আহ্বায়ক সায়েম সোবহান তানভীর।

দীর্ঘ ৫৫ বছরের সাংবাদিকতা প্রসঙ্গে প্রবীণ সাংবাদিক বিমল কুমার সাহা বলেন, সাংবাদিকতা অনেক কঠিক বিষয়। এই পেশায় টিকে থাকতে হলে সাংবাদিকতা নেশা হিসেবে নিতে হবে। নানা চরাই-উৎরাই পেরিয়েই এই পেশায় টিকে থাকা সম্ভব।

নানা সম্মাননা পাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সাংবাদিকতার শুরু থেকেই অসহায়, দুস্থ্য, নিপীড়িত মানুষের কথা তুলে ধরেছি নানাভাবে। যেখানেই অনিয়ম-দুর্নীতি, দুর্যোগ-দুর্ভোগ সেখানকার কথা তুলে এনেছি গনমাধ্যমে। তারই স্বীকৃতিস্বরুপ বিভিন্ন সংগঠন আমাকে নানাভাবে সম্মানিত করেছে। এমন প্রাপ্তি কাজের উৎসাহ বাড়িয়ে দেয় বহুগুনে। যতদিন বেঁচে আছি গনমাধ্যমে নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের কথাই তুলে ধরবো।

প্রসঙ্গত, প্রবীণ সাংবাদিক বিমল কুমার সাহা ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার কবিরপুর এলাকার সম্ভ্রান্ত হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহন করেন । তার বাবা স্বর্গীয় বৃন্দাবন চন্দ্র সাহা।

(এসই/এএস/ জুন ০১, ২০২২)