ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » মুক্তচিন্তা » বিস্তারিত

ঐতিহ্যের স্মারক মহাকাব্য রামায়ণ

২০২২ জুন ১২ ১৮:৪৫:৫০
ঐতিহ্যের স্মারক মহাকাব্য রামায়ণ

আবীর আহাদ


ধর্মীয় গোঁড়ামির ঊর্ধে উঠে ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে যারা আঁকড়ে ধরেছে, তারাই জগতে সভ্য সুন্দর ও সত্যের পূজারি। এরই আলোকে আমরা বাঙালি জাতি কী সভ্য ও সত্য সংস্কৃতির উত্তরাধিকার তা ভাবতেই গর্বে বুক ফুলে ওঠে। সেই ঐতিহ্যের ধারক-বাহক হতেই হবে, এমন কোনো কথা নয়। তবে ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় অজানাকে জানা, জ্ঞানের সীমাকে বৃদ্ধি করা এবং সেসব থেকে দীক্ষা নিয়ে পথ রচনা করতে নিশ্চয়ই আপনাকে আমাকে অনুপ্রাণিত করবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা কী সেই ইতিহাস ও ঐতিহ্যের গর্বিত উত্তরাধিকারী, আসুন, সে-বিষয়ে আলোকপাত করি।

গ্রীক মহাকবি হোমার রচিত মহাকাব্য "ইলিয়াড" ও "ওডিসী" যেমন গ্রীস তথা ইউরোপীয় ইতিহাস ও ঐতিহ্যের গর্ব, ঠিক তেমনই ভারতীয় মহাকবি বেদব্যাস রচিত মহাকাব্য "মহাভারত" ও বাল্মীকি রচিত মহাকাব্য "রামায়ণ" ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বস্তরের মানুষের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের গর্ব। কিন্তু দুঃখের বিষয়, ধর্মীয় গোঁড়ামি ও সাম্প্রদায়িক মনোভাবের কারণে ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানরা এই মহাকাব্য দু'টিকে তাদের ঐতিহ্য ও গর্ব বলে মনে করেন না। বিশেষ করে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মুসলমানরা তো ধর্মীয় অন্ধত্বের কারণে এ মহাকাব্য দু'টির ওপর মোটেই শ্রদ্ধাশীল নন! আপনাকে এর স্পিরিটে দীক্ষা নিতে হবে, মানতে হবে, তা কিন্তু নয়, তবে জানতে তো কোনো অসুবিধা থাকার কথা নয়!

আমরা জাতিতে বাঙালি। বঙ্গ বা বাংলাদেশ আমাদের জন্মভূমি। আমরা কী সৌভ্যবান জাতি যে, সেই প্রাচীনকালে আমাদের জন্মভূমি দিনাজপুরের ঘোরাঘাটের গভীর অরণ্যে বসে মহাকবি বাল্মীকি "রামায়ণ" মহাকাব্য রচনা করেছিলেন! মহাকাব্য দু'টি ঐতিহাসিক সাক্ষ্য দেয় যে, আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশের লোকরা ৫০০০ বছর পূর্বেও সভ্য জাতি ছিলো। অথচ ইউরোপীয় ঐতিহাসিকরা প্রায়শই জ্ঞানদান করে যে, ফরাসী-ওলন্দাজ ও ইংরেজরা নাকি ভারতীয় উপমহাদেশের অসভ্য মানুষকে সভ্য বানিয়েছে! "রামায়ণ" ও "মহাভারত" নামক দু'টি সূর্যের মত ঐতিহাসিক প্রখর সত্যকে কিভাবে ইংরেজ ফরাসী বা বিশেষ করে ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানরা ঢেকে দেয়ার চেষ্টা করে তা বোধগম্য নয়। অথচ বিস্ময়কর ব্যাপার এই যে, পৃথিবীর বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়ার মুসলমানরা ধর্মীয় গোঁড়ামির ঊর্ধে উঠে মহাকাব্য রামায়ণ ও মহাভারতকে শ্রদ্ধার আসনে ঠাঁই দিয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানদেরকে গোঁড়ামি পরিত্যাগ করে সত্যকে সত্য বলার নীতি গ্রহণ করার মানসিক সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। আমাদেরকে তাই জানতে হবে, বুঝতে হবে জ্ঞানে সভ্যতায় ও সত্যে উদ্ভাসিত হতে হবে।

লেখক : চেয়ারম্যান, একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।