ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রচ্ছদ » অর্থ ও বাণিজ্য » বিস্তারিত

পাচারের অর্থ দেশে ফেরত আনা বহাল রেখে অর্থবিল পাস

২০২২ জুন ৩০ ০১:০৬:১২
পাচারের অর্থ দেশে ফেরত আনা বহাল রেখে অর্থবিল পাস

স্টাফ রিপোর্টার : বিভিন্ন সময় পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব বহাল রেখে জাতীয় সংসদে অর্থবিল-২০২২ পাস হয়েছে। এ বিলে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য সংশোধনী আনা হয়নি। যে ১৭টি সংশোধনী গৃহীত হয়েছে সেগুলো মূলত ভাষাগত পরিবর্তন।

বুধবার (২৯ জুন) স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল বিলটি পাসের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। এসময় সংসদে সরকার ও বিরোধী দলীয় এমপিরা টেবিল চাপড়ে অর্থমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান।

এর আগে, অর্থবিল-২০২২ জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাবগুলো সংসদে কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। সংসদ সদস্যরা অর্থবিলের ওপর আনীত সংশোধনীগুলোর মধ্যে ১৭টি প্রস্তাব কণ্ঠভোটে গৃহীত হয়।

প্রস্তাবিত বাজেটে আনা সংশোধনীর মধ্যে রয়েছে- ৭ শতাংশ কর দিয়ে শুধু পাচার করা নগদ টাকা দেশে আনা যাবে। যারা সরকারের দেওয়া এই সুযোগ নেবেন না, তাদের জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। জরিমানার পরিমাণ হবে নির্ধারিত করের সমপরিমাণ।

আর জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ আনার ক্ষেত্রে যে সুযোগ রাখা হয়েছিল তা বাতিল করা হয়েছে। একই সঙ্গে কম হারে করপোরেট কর সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রেও সংশোধন আনা হয়েছে। যেসব কোম্পানি বছরে ৩৬ লাখ টাকার বেশি ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করবে তারা কম হারে করপোরেট কর পরিশোধের সুবিধা পাবে।

বিল পাসের আগে সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় সমাপনী ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বাজেটের অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এবারের বাজেটে অর্থনীতিকে সচল রাখা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, শিক্ষা-স্বাস্থ্য খাতকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া, রপ্তানি আয় বৃদ্ধি, কর্মসুজন বাড়ানো, পল্লী উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী বাড়ানো, কভিড-১৯ পরবর্তীসময়ে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও ঘোষিত প্রণোদনাকে এবারের বাজেটে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার সংসদে মোট ২৩টি বাজেট দিয়েছে। আর এবারের বাজেটটি চলতি মেয়াদের চতুর্থ।

তার আগে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ সমাপনী বক্তব্য দেন। এসময় তিনি বাজেটের ওপর তেমন কোনো আলোচনা না করলেও পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ায় সরকারকে অভিনন্দন জানান। অবশ্য তিনি শারীরিক অসুস্থতার কারণে ৯ জুন বাজেট উপস্থাপনের দিন সংসদে থাকতে পারেননি বলে স্পিকারকে জানান।

বৃহস্পতিবার ৩০ জুন। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষ দিন। সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট পাস করা হবে।

এর আগে গত ৯ জুন সংসদে আগামী অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন। যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৭৪ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা বেশি। মোট আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৪৪ হাজার কোটি টাকা বেশি। বাজেটে পরিচালন বা আবর্তক ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৩ হাজার ২৪২ কোটি টাকা। উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা।

প্রস্তাবিত বাজেটের মোট আয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। বরাবরের মতো প্রধান আয়ের খাত হিসেবে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৪০ হাজার কোটি টাকা বেশি। এনবিআর-বহির্ভূত রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব বহির্ভূত আয় ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা।

প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। আর চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৩০ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা বেশি। বাজেটে প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থানের জন্য বৈদেশিক উৎস থেকে (অনুদানসহ) পাওয়া যাবে এক লাখ ১২ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেওয়া হবে এক লাখ ৪৬ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক খাত থেকে এক লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। ব্যাংক বহির্ভূত ঋণ ৪০ হাজার এক কোটি ও সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। অন্যান্য খাত থেকে নেওয়া হবে ৫ হাজার এক কোটি টাকা।

আগামী অর্থবছরের জন্য জিডিপির আকার প্রাক্কলন করা হয়েছে ৪৪ লাখ ৪৯ হাজার ৯৫৯ কোটি টাকা। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে মোট জিডিপির আকার ধরা হয়েছে ৩৬ লাখ ৭৬ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা।

অর্থবিল পাসের জন্য ভোটে দেন স্পিকার। এ সময় বেশিরভাগ সংসদ সদস্য এতে সমর্থন জানিয়ে কণ্ঠভোটের পক্ষে রায়। যার মাধ্যমে পাস হয় অর্থবিল-২০২২।

(ওএস/এএস/জুন ৩০, ২০২২)