ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রচ্ছদ » অর্থ ও বাণিজ্য » বিস্তারিত

ফলের বাজারে জ্বালানির উত্তাপ

৩০০ টাকা ছাড়িয়েছে আপেল-কমলা, আঙুর ৪৬০

২০২২ আগস্ট ০৯ ১৭:৫৯:৪৭
৩০০ টাকা ছাড়িয়েছে আপেল-কমলা, আঙুর ৪৬০

স্টাফ রিপোর্টার : জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বিভিন্ন পণ্যে। ফলের বাজারেও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে। গত তিনদিনে বিভিন্ন ফলের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। আপেল ও কমলার কেজি ৩০০ টাকা ছাড়িয়েছে। আড়াইশো টাকা ছুঁয়েছে আমের কেজি। আর আঙুরের দাম কেজিতে ৮০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪৬০ টাকা দরে।

দাম বেড়েছে কমলা, মাল্টা, নাটফল, আনার ও আনারসেরও। জ্বালানির দাম বাড়ানোর পর কয়েকদিন খুচরাপর্যায়ে এসব ফলের দাম ৩০-১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, মৌসুম শেষ হয়ে আসায় এখন আম শেষের পথে। বাজারে এখন বারি ফোর ও আশ্বিনা আম পাওয়া যাচ্ছে। বারি ফোরের তুলনায় আশ্বিনা আমের সরবরাহ বেশি। তবে ধীরে ধীরে এ দুই জাতের আমের সরবরাহও কমে আসছে। ফলে কয়েকদিন ধরে আমের দাম বাড়তি। এরমধ্যে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোয় আমের বাজার আরও চড়া।

তাদের দাবি, জ্বালানির দাম বাড়ানোর কারণে পরিবহন খরচ অনেক বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা পরিবহনের জন্য বাড়তি যে টাকা ব্যয় করছেন, তা গিয়ে যোগ হচ্ছে পণ্যের দামে। এতে স্বাভাবিকভাবেই দাম বেড়ে যাচ্ছে। এখানে ব্যবসায়ীদের কিছু করার নেই।

মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা বারি ফোর আমের কেজি বিক্রি করছেন ২৪০-২৫০ টাকা। তেলের দাম বাড়ার আগে এ আমের কেজি বিক্রি হচ্ছিল ১৬০-১৮০ টাকা দরে। আশ্বিনা আমের কেজি এখন ৭০-১২০ টাকা, যা আগে ছিল ৬০-৮০ টাকার মধ্যে।

আমের দাম বাড়ার বিষয়ে রামপুরার ব্যবসায়ী মো. ঝন্টু বলেন, আমের মৌসুম শেষ। এখন বারি ফোর ও আশ্বিনা আম কিছু পাওয়া যাচ্ছে। কয়েকদিন পর এগুলোও পাওয়া যাবে না। মৌসুম শেষের দিকে দাম একটু বেশি থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তবে গত দু-তিনদিনে দাম অনেক বেশি বেড়ে গেছে। এর মূল কারণ তেলের দাম বাড়া।

একই কথা জানিয়েছেন কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী বশির উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমের দাম এমনিতেই বাড়তি ছিল। এখন তেলের দাম বাড়ায় তা আরও উসকে দিয়েছে। গত তিনদিনে বারি ফোর আম কেজিতে ৬০ টাকার ওপরের বেড়েছে। ব্যবসায়ীদের আসলে কিছু করার নেই। জ্বালানি তেলের কারণে পরিবহন খরচ যা বেড়েছে, তাতে এ দাম বাড়া স্বাভাবিক।’

এদিকে, খুচরা ব্যবসায়ীরা দক্ষিণ আফ্রিকার আপেলের (গ্রিন আপেল) কেজি বিক্রি করছেন ৩০০-৩২০ টাকা, যা জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর আগে ছিল ২৪০-২৮০ টাকা। গালা আপেলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৭০-২৯০ টাকা, যা আগে ছিল ২২০-২৪০ টাকা। ফুজি আপেলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৪০-২৬০ টাকা, যা আগে ছিল ১৮০-২০০ টাকার মধ্যে।

আপেলের দামের বিষয়ে মালিবাগ হাজীপাড়ার ব্যবসায়ী মিজানুর বলেন, ‘৬-৭ বছর ধরে ঢাকায় ফলের ব্যবসা করছি। এর আগে কখনো আপেলের এতো দাম দেখিনি। আড়তে আপেলের অস্বাভাবিক দাম। দরদাম করতে গেলে আড়তদার খারাপ ব্যবহার করছেন। অনেক সময় কার্টনে পচা আপেলও থাকে। তখন লোকসান গুনতে হয়।’

জয়নাল নামে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ‘গত তিনদিনে ঘাটে আপেলসহ সব ধরনের ফলের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। একদিকে আমদানি কমে যাওয়া, অন্যদিকে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে এ দাম বেড়েছে।’

তিনি বলেন, ‘ফলের দাম বাড়ার কারণে আমরাও অস্বস্তিতে আছি। বিক্রি আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। লাভও কমে গেছে। যা বিক্রি হচ্ছে, তা দিয়ে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ছে। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে আমাদের পক্ষে ঢাকায় থাকা অসম্ভব হয়ে পড়বে।’

হাসপাতালে এক আত্মীয়কে দেখতে যাওয়ার জন্য মালিবাগ বাজারে আপেল কিনতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী আরমান হোসেন। আপেলের দাম শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেন তিনি।

আরমান বলেন, ‘এক কেজি আপেলের দাম ৩২০ টাকা চাচ্ছে। দরদাম করে ৩০০ টাকায় কিনেছি। কমলা, মাল্টা, আঙুরের দামও অনেক। কমলার কেজি সাড়ে তিনশো টাকা, আঙুর ৪৫০ টাকা ও মাল্টা ২০০ টাকা চাচ্ছে। ফলের এতো দাম কিছুতেই স্বাভাবিক না।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাজারে সবকিছুর দাম অস্বাভাবিক। জিনিসপত্রের দামে মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এভাবে চলতে থাকলে কম খেয়েও খরচের লাগাম টানা সম্ভব হবে না।’

রাজধানীর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মাল্টার কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮০-২১০ টাকা, যা আগে ছিল ১৬০-১৮০ টাকা। নাটফলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩২০-৩৬০ টাকা, যা আগে ছিল ২০০-২৪০ টাকার মধ্যে। কমলা বিক্রি হচ্ছে ৩২০-৩৬০ টাকা কেজি, যা আগে ছিল ২৫০-৩০০ টাকার মধ্যে।

আঙুরের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৪৬০ টাকা কেজি, যা কয়েকদিন আগে ছিল ৩২০-৩৮০ টাকা। আনারের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০-৩০০ টাকা, যা আগে ছিল ২২০-২৫০ টাকা। কয়েকদিন আগে ৫০ টাকা পিস বিক্রি হওয়া আনারস এখন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা।

ফলের এমন দাম বাড়ার বিষয়ে বাদামতলীর ব্যবসায়ী মো. আকবর বলেন, ‘আম, কাঁঠালের মৌসুম শেষ। আপেল, কমলা ও মাল্টার আমদানি তুলনামূলক কম। ডলারের দাম বাড়ার কারণে আমদানি খরচ বেড়েছে। এর সঙ্গে এখন নতুন করে যোগ হয়েছে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি। সবকিছু মিলে এখন ফলের দাম বাড়তি। ডলারের দাম না কমলে সামনে ফলের দাম আরও বাড়তে পারে।’

(ওএস/এসপি/আগস্ট ০৯, ২০২২)