ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রচ্ছদ » অগ্নিকন্যা » বিস্তারিত

দুই নারী কসাই, আলোচনা সর্বত্রই!

২০২২ অক্টোবর ২৮ ১৭:৩৩:২৫
দুই নারী কসাই, আলোচনা সর্বত্রই!

শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : জমিলা বেগম আর লক্ষী রানী-দুই নারী কসাই। যাদের আলোচনা সর্বত্রই। তাদের সাফল্যের কাহিনী ভাইরাল হয়েছে ইউটিউব, ফেসবুক, ইলেক্ট্রনিক আর প্রিন্ট মিডিয়া সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে। দিনাজপুরের এই নারী কসাইয়ের বেড়ে ওঠা গল্প নিয়ে আমাদের আয়োজন দুই নারী কসাই, আলোচনা সর্বত্রই!

জমিলা বেগম

নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে পুরুষের সঙ্গে সমান তালে পাল্লা দিয়ে চলা সফল নারী কসাই জমিলা বেগম ওরফে জমিলা কসাই।

দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার ঝাড়বাড়ি হাটের জমিলা বেগম ওরফে জমিলা কসাই এর বয়স এখন পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই। ৩নং শতগ্রাাম ইউনিয়নের প্রসাদ পাড়া গ্রামে তার বাড়ি। নিজেকে কসাই হিসেবে প্রতষ্ঠিত করতে জমিলাকে সমাজে রইতে হয়েছে নানা ঝুট-ঝামেলা। অজোপাড়া গায়ে তার জীবনযুদ্ধটা ছিল বেশ কঠিন। মানুষের কটু কথা ও সব বাধাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজেকে সফল নারী কসাই হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পেয়েছেনও সম্মাননা ও পুরস্কার।

জমিলা বেগমের মাংস বিক্রির দোকানটির নাম রাখা হয়েছে, ‘মায়ের দোয়া মাংস ভান্ডার’। এ মাংসের দোকানে মিলবে শতভাগ হালাল মাংস। দোকানটির বিশেষ গুণ হলো এখানে ক্রেতার পছন্দ মতো মাংস দেওয়া হয়। সঠিক পরিমাপে বিক্রি করা হয় হাড়-চর্বি বাদে মাংস।

বিয়ে বাড়ি, খৎনাসহ আশপাশের গ্রাম-শহরের বিভিন্ন ব্যক্তি’র কাছেও তিনি বেশ বিশ্বস্ত ও সুপরিচিত। আর এ কারণে অনুষ্ঠানে জমিলার দোকানের মাংস বেশ জনপ্রিয়। দুই দশকের টানা অভিজ্ঞতায় তিনি ক্রেতাদের কাছে হয়ে উঠেছেন বিশ্বস্ত। এলাকায় এখন ‘জমিলা কসাই’ নামেই পরিচিত তিনি।

বীরগঞ্জ উপজেলার ঝাড়বাড়ী হাটে মায়ের দোয়া মাংস ভান্ডাওে জরজমিনে গিয়ে দেখা মেলে জমিলার। খুব সকাল থেকে শুরু হয়েছে তার কর্মব্যস্ততা। কেউ দোকান গোছগাছ করছেন আবার কেউ গরু জবাই করে চামড়া আলাদা করছেন। জমিলা খাতুন নিজেও গরুর চামড়া আলাদা করছেন। কিছুক্ষণ পর দোকানে বসে মাংস কাটতে শুরু করলেন জমিলা বেগম।

এদিকে দোকানে মাংস আসার আগেই দোকানের বাইরে ক্রেতাদের ভিড় ছিল চোখে পরার মতো। জমিলা বেগম নিজে মাংস কাটছেন, ডিজিটাল পাল্লায় মাপছেন। আবার টাকা গুনছেন। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী কেউ এক কেজি, কেউ দুই কেজি, কেউ পাঁচ কেজি আবার কেউ ২০ কেজি পর্যন্ত মাংস কিনছেন। তার হাত যেন আরেক ডিজিটাল পাল্লা। ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী যা পাল্লায় তুলছেন তা একেবারে সমপরিমাণ হয়ে যাচ্ছে নিমিষেই।

প্রতি সপ্তাহের সোমবার বাদে ছয়দিনই মাংস বিক্রি করেন তিনি। তবে শুক্রবার তার মাংস বিক্রি বেশি হয়। অন্যান্য দিনে মাংস বিক্রি ৭ থেকে ১০ মণ হলেও এই দিনে বিক্রি হয় ২০ থেকে ২৫ মণ মাংস। গড়ে প্রতিদিন ৩ থেকে ৪টি গরু জবাই করে মাংস বিক্রি করেন তিনি। শুধু নিজ এলাকার নয়, বাইক, প্রাইভেট কার নিয়ে ক্রেতারা আসেন দূর-দূরান্ত থেকে। বিশেষ করে বীরগঞ্জের গোলাপগঞ্জ, গড়েয়া হাট, কাহারোল, বসুনিয়া, লাহিড়ী, কালমেঘ, পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ, খানসামা উপজেলা এমনকি ঠাকুরগাঁও ও নীলফামারী শহর থেকেও ক্রেতা আসেন জমিলার দোকানে মাংস নিতে।
ঠাকুরগাও জেলার গড়েয়া থেকে মাংস কিনতে আসা সৈয়দ মোজাম্মেল জানালেন, জমিলার দোকানের মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে হাড়ছাড়া মাংস বিক্রি করেন। পরিমাণে সঠিক দেন। অন্যান্য দোকানে মাংস দেয় একরকম, বাসায় এসে দেখি মাংসে হাড় আর চর্বি। অনেক সময় ওজনও সঠিক পাওয়া যায় না। আমরা দীর্ঘ দিন ধরে জমিলা কসাইয়ের দোকান থেকে গরুর মাংস কিনি। কোন ঝামেলা নেই তার মাংসে।

কাহারোল উপজেলার ১৩ মাইল থেকে মাংস কিনতে আসা বাবুল আহমেদ জানালেন, আমার হোটেলে প্রাায় ১০ থেকে ১৫ কেজি মাংস বিক্রি করে থাকি। আমি প্রতিদিন জমিলা কসাইয়ের মাংসের দোকান থেকে মাংস ক্রয় করে থাকি। তিনি হাড় ও চর্বি ছাড়া ভালো মাংস আমাকে দেন। একারণে আমার হোটেলের গ্রাহকদের আস্থা আমার প্রতি। আমি ৮ বছর ধরে জমিলা ভাবির দোকান থেকে মাংস ক্রয় করছি, ঝামেলা ছাড়াই।

জমিলা কসাইয়ের ছেলে জহুরুল ইসলাম বলেন, পারিবারিক সমস্যা থাকায় ছোটবেলা থেকে ব্যবসায় মায়ের পাশে দাঁড়ানোর কারণে বেশিদূর পড়ালেখায় এগুতে পারিনি। তবে মাকে নিয়ে অনেক গর্ব হয়। মা বিভিন্ন সময় সরকারি-বেসরকারি সংগঠন থেকে পুরস্কার পেয়েছেন। ছেলে হিসেবে সেটা আমার জন্য অনেক গর্বের। মায়ের কারণে আজ আমি সমাজে প্রতষ্ঠিত ব্যবসায়ী হতে পেরেছি। পাশাপাশি ৭ থেকে ৮ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে আমাদের দোকানে।

জমিলা বেগম জানান, আমার বাবা জাকির হোসেন পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলা থেকে বীরগঞ্জের ঝাড়বাড়ী হাটে এসে পানের ব্যবসা শুরু করেন। আমরা চার ভাইবোনের মধ্যে আমি তৃতীয়। স্কুলে যাওয়া হয়নি আমার। ১৪ কিংবা ১৫ বছর বয়সে বগুড়ার মহাস্থানগড় গোকুল উত্তর পাড়ার ছ’মিল বন্দর এলাকার রফিকুল ইসলাম ভান্ডারীর সঙ্গে বিয়ে হয়। আমার স্বামী পেশায় একজন কসাই ছিলেন। তার প্রথম স্ত্রী থাকা অবস্থায় আমাকে বিয়ে করেন। আমার প্রথম সন্তান জহুরুলের জন্মের কিছুদিন পর আমার স্বামী মাদকাসক্ত হয়ে ব্যবসা নষ্ট করে ফেলেন। ২০০০ সালের দিকে আমার স্বামী রফিকুল ইসলামকে নিয়ে বগুড়া থেকে বাবার বাসায় এসে ঝাড়বাড়ী হাটে একটি মাংসের দোকান শুরু করি। সে সময় দোকানে স্বামীকে সময় দিতাম। আস্তে আস্তে আমি নিজে পুরো কাজ হাতে নেই। এতে পরিবারে সচ্ছলতা ফিরে আসে।

তিনি আরও জানান, বিভিন্নজনের কাছ থেকে প্রায় তিন লাখ টাকা ধারদেনা করে হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যান আমার স্বামী। তখন দুশ্চিন্তায় দিন কাটতে থাকে। আমার স্বামীর পাওনাদাররা আমাকে টাকার জন্য চাপ দিতে থাকেন। নিরুপায় হয়ে ছেলে জহুরুলকে সঙ্গে নিয়ে বাজারের মাংসের দোকান চালু করলাম। নাম দিলাম মায়ের দোয়া মাংস ভান্ডার। নিজে হাটে গিয়ে দেখেশুনে গরু বাকিতে কিনতাম। পরদিন মাংস বিক্রি করে গরুর দামের সঙ্গে ৩’শ থেকে ৫’শ টাকা বেশি দিতাম। এভাবে শুরু করে পরে আস্তে আস্তে মাংস ক্রেতাদের কাছে মায়ের দোয়া মাংস ভান্ডার বিশ্বস্ত হয়ে ওঠে। পরে দিনে দিনে ব্যবসা বাড়তে থাকে।

মা-ছেলে মিলে আস্তে আস্তে শোধ করে দেই স্বামীর দেনা। বাড়ির পাশে ১১ শতক জমি কিনে বাড়ি বানাই। ছোট পরিসরে একটি গরুর খামারও শুরু করেছি। বাড়ির সামনে একটি মুদিখানার দোকান দিয়েছি। মাংস বিক্রি শেষে সেখানেও সময় দেই। সব মিলিয়ে ছেলে জহুরুল, তার স্ত্রী ( বউ মা) এবং দুই নাতি এবং মেয়ে সোহাগীকে নিয়ে আল্লাহর রহমতে ভালেঅ আছি, সুখেই আছি।

জমিলা বেগম বলেন, গল্পটা যেমন সহজে সাফল্যে রূপ নিল, বাস্তবতা ততটা সহজ ছিল না। ঝাড়বাড়ি হাটে আরও চার-পাঁচজন মাংস ব্যবসায়ী রয়েছেন। স্বামী চলে যাওয়ার পর যখন দোকান শুরু করি তখন অনেকেই বিরোধিতা করেন। থানায় ও ইউনিয়ন পরিষদে আমার নামে অভিযোগও দিয়েছিলেন। কিন্তু এলাকার কিছু লোক আমার পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। উৎসাহ ও সাহস দেন।

শুধু মাংস বিক্রিই নয়, হাটে গিয়ে গরু কেনা, গরু জবাই করা, মাংস কাটা, ওজন দেওয়া প্রায় সব কাজই করেন এই নারী।

প্রতিনিয়ত দেখা যায়,নিজের দোকানে বসে মাংস কাটছেন জমিলা বেগম। বাইরে অপেক্ষমাণ ক্রেতা। জমিলা বেগম মাংস কাটছেন, ডিজিটাল পাল্লায় মাপছেন, টাকা গুনছেন।

দিনাজপুর বীরগঞ্জের জমিলা বেগম নারী কসাই হিসেবে নিজেকে স্বাবলম্বী ও প্রতিষ্ঠিত করায় জেলা ও উপজেলা থেকে “জয়িতা” পদক লাভ করেছেন আগেই। সরকারের সহযোগিতা পেলে গরুর খামারটির মাধ্যমে সমাজের অবহেলিত ও অসচ্ছল নারীদের উন্নয়নে কাজ করতে চান তিনি।ইতোমধ্যেই উপজেলার শতগ্রাম ইউনিয়নের ঝাড়বাড়ি এলাকায় নিজ বাড়িতে গড়ে তোলা খামারে কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন প্রায় দশজন মানুষ।

লক্ষী রানী শর্মা

একদিনে ২০ থেকে ৩০টি খাসি জবাই করে বিক্রির রেকর্ড গড়েছেন,আরেক নারী কসাই লক্ষী রানী শর্মা।
দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ৪ নম্বর শহরগ্রাম ইউনিয়নের ফুলবাড়ী হাটে লক্ষীর মাংস দোকান। এ হাটে প্রায় ১০ বছর ধরে খাসির মাংস বিক্রি করেন তিনি। শুধু বিক্রি নয়, খাসি জবাই, চামড়া ছাড়ানো, মাংস কাটাসহ কসাইয়ের সব দ্বায়িত্ব পালন করেন তিনি নিজেই।

লক্ষ্মী রানি শর্মার বয়স ৩৫ ছুঁই ছুঁই। তিনি হাটে মাংস কেটে বিক্রি করেন। আর অন্যপাশে ফুলবাড়ী হাট দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে ছেলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়েন। মুলতঃ লক্ষ্মী রানি শর্মা ছেলেমেয়েকে পড়ালেখা করানো আর সংসার চালানোর জন্য বেছে নিয়েছেন কসাইয়ের মতো কঠিন পেশা। এমনটাই জানালেন তিনি।

লক্ষী রানী এই প্রতিবেদককে জানান, শুরুতে শুনতে হয়েছে নানান কথা। পেশায় স্বাবলম্বী হয়েই জবাব দিয়েছেন সেসব কথার। ইচ্ছা থাকলে কঠিন কাজও জয় করা যায়, তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তিনি নিজেই।

স্বামী ঊষা দেব শর্মা (৫০) বিভিন্ন হাটে হাটে ঘুরে খাসি সংগ্রহ করেন। আর লক্ষ্মী রানী ভোর থেকেই তার দোকানে প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১৫টি খাসির মাংস বিক্রি করেন। তবে হাটবারে (রবি ও বুধবার) বিক্রি হয় বেশি মাংস। তাই, খাসিও জবাই হয় বেশি।

সরজমিনে লক্ষী রানীর সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি অকপকটে জানিয়ে দেন তার বেড়ে ওঠার গল্প। তার বাবার বাড়ী বোচাগঞ্জ উপজেলার সেতাবগঞ্জ মাধবপুর গ্রামে। ৩ ভাই ৭ বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। বিয়ে হয় ১৭ বছর আগে, সতিনের সংসার। বিয়ের পর থেকেই স্বামীকে দেখেন ভবঘুরে। সংসারের প্রতি তেমন একটা নজর নেই স্বামীর। এরই মধ্যে লক্ষ্মী রানির কোলে আসে এক ছেলে সন্তান। সংসারে অভাব অনটন আরও বাড়ে। নিরুপায় হয়ে বাড়ির হাঁস-মুরগি, বিয়ের গয়না বিক্রি করে সাড়ে ৮ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে ফুলবাড়ী হাটে দোকান ভাড়া নিয়ে খাসির মাংস বিক্রি শুরু করেন তিনি। প্রথমে তেমন বেচাকেনা না হলেও লক্ষ্মী রানী খাসির মাংস ব্যবসায়ী হিসেবে এখন বেশ জনপ্রিয়। আস্থা অর্জন করেছেন,গ্রাহকের। একদিনে সর্বোচ্চ ২৫ থেকে ৩০টি খাসি জবাই করে, বানিয়ে মাংস বিক্রি করার রেকর্ড রয়েছে তার।

তিনি জানান, প্রথমে শ্বশুর বাড়ি থেকেও বাধা দেওয়া হয়েছিল। কোনো কিছ্ইু কানে না তুলে ব্যবসা চালিয়ে গেছি। তখন যারা নিষেধ করেছিল তারাই এখন বলে লক্ষী রানী শর্মা সঠিক সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছিল বলে তার পরিবার বেঁচে আছে। ছেলে স্কুলে পড়ছে। মেয়ের বয়স চার বছর।

তিনি বলেন, ফেরত দেইনা কাউকেও। গরীব মানুষ যদি ১০০ টাকার মাংস চায় সেটাও দিয়ে থাকি। শুধু স্থানীয়রা নন, দূর দূরান্ত থেকে সনাতন ধর্মের মানুষ মাংস কিনে নিয়ে যাচ্ছেন তার দোকান থেকে। শুধু তাই নয়, হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য মাংস কিনতে আগে থেকেই সিরিয়াল দিতে হয় তাকে। শুধু সনাতন ধর্মের নয়, মুসলিমদের জন্যও আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে আমার। কর্মচারী ইসমাইল হোসেন মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য নিজেই খাসি জবাই করে মাংস বিক্রি করে থাকে। তবে সনাতন ধর্মে মানুষই এই দোকানের ক্রেতা বেশি।
এই ব্যবসা করে সংসার নিয়ে বেশ ভালোই আছেন তিনি।

বোচাগঞ্জ উপজেলা থেকে ছাতোই এলাকা থেকে মাংস কিনতে আসা রমেশ চন্দ্র জানালেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে লক্ষ্মী রানির দোকান থেকে মাংস ক্রয় করি। এখানে সঠিক পরিমাণ ও নিখুঁতভাবে কোনো প্রকার পানি ছাড়া মাংস কাটে। যেভাবে চাই, সেভাবেই তিনি মাংস বিক্রি করেন। এজন্য আমি শুধু নই, অত্র এলাকার সনাতন ধর্মের মানুষ সকাল থেকেই মাংস কিনতে লক্ষী রানির দোকানে ভিড় করেন।

লক্ষ্মী রানীর মাংসের দোকানের কর্মচারী প্রাণ নাথ বলেন, আমরা দু’জন কর্মচারী আছি। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আমরা কাজ করি। শুক্র, সোম ও বুধবার প্রচুর ভিড় থাকে। অনেক সময় মাংস দিতে হিমসিম খেতে হয়।

এ নিয়ে কথা হয় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ওয়াহেদ আলী’র সাথে। তিনি বলেন, আমরা ৮/১০ বছর ধরে দেখছি লক্ষ্মী রানী শর্মা এই হাটে খাসির মাংস বিক্রি করে আসছে। মহিলা মানুষ সাহস করে এ ব্যবসা চালিয়ে আসছে এজন্য আমরা তাকে সাধুবাদ জানাই। আমরা সব সময় তার সঙ্গে আছি। খুব পরিষ্কার ও যত্ন সহকারে লক্ষ্মী মাংস বানায় ও বিক্রি করে। আর তাই ধীরে ধীরে সে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। মহিলা কশাই এই অঞ্চলে তিনিই প্রথম। একজন মহিলা হয়ে সে পুরুষের থেকেও বেশি কাজ করতে পারে। তার সাফল্য কামনা করেন, ইউপি চেয়ারম্যান ওয়াহেদ আলী সহ সকলেই।

(এস/এসপি/অক্টোবর ২৮, ২০২২)