ঢাকা, বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » দেশের খবর » বিস্তারিত

দুর্বৃত্তের ছোড়া এসিড থামাতে পারেনি সাতক্ষীরার সোনালিকে 

২০২২ নভেম্বর ২৯ ১৬:২৮:১৬
দুর্বৃত্তের ছোড়া এসিড থামাতে পারেনি সাতক্ষীরার সোনালিকে 

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরায় এসিডদগ্ধ সোনালী খাতুন(১৯) এবারের এসএসসি পরীক্ষায় এ-গ্রেড (৪.৯৬) পেয়ে উত্তীর্ন হয়েছেন। তিনি ২০২২ সালে পাটকেলঘাটার কুমিরা পাইলট বহুমুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভকেশনাল বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করেন। তিনি সাতক্ষীরার তালা উপজেলার নকাটি গ্রামের নুর ইসলামের মেয়ে।

সরেজমিনে আজ মঙ্গলবার সকালে নকাটি গ্রামে যেয়ে জানা গেছে, ২০০২ সালের ১৯ নভেম্বর মাত্র ১৮ দিন বয়সে বাবা মায়ের কোলে থাকা অবস্থায় এসিড আক্রান্ত হন সোনালি। এরপর স্থানীয় একটি ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়ার পর খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা দিতে হয় তাকে। সেখান থেকে সোনালীকে ঢাকার একটি হাসপাতালে এক বছর উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হয়। এ ঘটনায় হওয়া মামলায় আসামীরা গ্রেফতার হয়ে কারাভোগ করেছে। বর্তমানে মামলাটি নিষ্পত্তি হয়ে গেছে।

সোনালির বাবা নুর ইসলাম জানান, ‘অত্যন্ত মেধাবী সোনালী অনেক প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে নিজের পরিশ্রম ও একাগ্রতা দিয়ে এসএসসি পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করেছে। বাবা হিসাবে তিনি অনেক গর্বিত। ভবিষ্যতে মেয়েকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে চান।’

নূর ইসলাম আরও জানান, ‘প্রতিবেশীদের সাথে বাঁশঝাড় কেটে ফেলা নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হওয়ায় তারা মামলা করেন। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিপক্ষের লোকজন রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় তাদের ওপর এসিড ছুড়ে মারে। এতে সোনালী ও তার মা খোদেজা বেগম মারাত্মক দগ্ধ হন। অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আজ তাদের বাড়িতে আনন্দের জোয়ার বইছে। তবে সোনালীর শরীরের ক্ষত স্থান এখনও চুলকায় ও চোখ দিয়ে পানি ঝরে।’

এসিড সন্ত্রাসের শিকার সোনালী খাতুন জানান, ‘এসএসসি পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করায় সে অনেক খুশী। ভবিষ্যতে উচ্চশিক্ষা গ্রহনের ইচ্ছা আছে তার’। এসিড আক্রান্ত হওয়ায় সহপাঠীরা তাকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহন করেনি উল্লেখ করে তিনি জানান, ‘স্কুলের শিক্ষক থেকে শুরু করে সমাজের সকল স্তরের ব্যক্তিরা তাকে সাহস যুগিয়েছে। চেষ্টা করেছে তাকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহন করে সমাজের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনার। তারা সেই কাজে সফলও হয়েছেন।’

কুমিরা পাইলট মাধ্যমিক বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিক্ষক গৌতম কুমার দাশ জানান, ‘সোনালীর এই সাফল্যে তিনি এবং তাঁর শিক্ষকমন্ডলী গর্বিত। সোনালী সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করে আজ মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়েছে। সোনালীর অদম্য মানসিকতা, সাহস ও সকলের সহযোগিতা তাকে এতো দূর আসতে সাহায্য করেছে। সোনালীকে উচ্চশিক্ষা গ্রহনের সুযোগ তৈরিতে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও ব্যক্তি পর্যায় থেকে তাকে সহযোগিতা করাটা জরুরি।’

(আরকে/এসপি/নভেম্বর ২৯, ২০২২)