ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রচ্ছদ » মুক্তিযুদ্ধ » বিস্তারিত

নওগাঁ হানাদারমুক্ত হয় ১৮ ডিসেম্বর

২০২২ ডিসেম্বর ১৭ ১৭:৩৯:২৬
নওগাঁ হানাদারমুক্ত হয় ১৮ ডিসেম্বর

নওগাঁ প্রতিনিধি :একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বেতার তরঙ্গ মারফত খবর ভেসে এলো, পাকি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পন করেছে। অবশেষে বাঙ্গালী জাতি পেল তার বহু আকাঙ্খিত স্বাধীনতার স্বাদ। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশ পাকি হানাদার মুক্ত হলেও নওগাঁবাসী তখনো হানাদার মুক্ত হয়নি। সেদিন বিজয়ের খবর শোনার পর ওই রাতেই নওগাঁর দায়িত্বপ্রাপ্ত পাকি মেজরের সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা জালাল হোসেন চৌধুরীর কথা হয়। এই আলাপ আলোচনার ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত হয়, স্থানীয় পাকি সেনারা মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পন করবে। কথামত পরেরদিন ১৭ ডিসেম্বর আনুমানিক সকাল ৭টার দিকে মুক্তিবাহিনী জালাল হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে ফতেপুর থেকে সড়ক পথে নওগাঁর দিকে অগ্রসর হতে থাকে। পথিমধ্যে কাদোয়া ও খলিশাকুড়ি গ্রামের মাঝখানে পৌঁছিলে সন্ধি ভঙ্গ করে পাকি হানাদার বাহিনী আকষ্মিকভাবে মুক্তিবাহিনীকে লক্ষ্য করে নওগাঁ সদর হাসপাতালের পানির ট্যাঙ্কের ওপর থেকে গুলি চালায়। এসময় জালাল হোসেন চৌধুরী মুক্তিযোদ্ধাদের নির্দেশ দেন, রাস্তার দুই পাশে অবস্থান নিয়ে সামনে অগ্রসর হবার জন্য। মুক্তিযোদ্ধারা যতই সামনে অগ্রসর হতে থাকেন, পাকি বাহিনীর গুলিবর্ষনের মাত্রা ততই বাড়তে থাকে। একসময় মুক্তিযোদ্ধারা জগৎসিংহপুর ও খলিশাকুড়ি গ্রামে অবস্থান নিলে দুই বাহিনীর মধ্যকার দূরত্ব একেবারেই কমে আসে। মাঝখানে শুধু ছোট যমুনা নদী।

এসময় পাকিবাহিনী শেলের গোলা নিক্ষেপ করলে জালাল হোসেন চৌধুরী তার দলকে এবার পাল্টা গুলি চালাবার নির্দেশ দেন। বেঁধে যায় উভয় পক্ষের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ।

১৮ ডিসেম্বর দিনটি ছিল শনিবার। এদিন সকাল বেলা বগুড়া থেকে অগ্রসরমান ভারতীয় মেজর চন্দ্রশেখর , পশ্চিম দিনাজপুর জেলার বালুরঘাট থেকে নওগাঁ অভিমুখে অগ্রসরমান পিবি রায়ের নেতৃত্বে মিত্র বাহিনী ও মুক্তিবাহিনী নওগাঁয় প্রবেশ করে। হানাদার বাহিনীর তখন আর কিছুই করার ছিলনা। ফলে প্রায় দুই হাজার পাকিসেনা নওগাঁ কেডি স্কুল থেকে পিএম গার্লস স্কুল ও সরকারী গার্লস স্কুল থেকে শুরু করে পুরাতন থানা চত্ত্বর (বর্তমানে এসপির বাংলো) ও এসডিও অফিস (বর্তমানে ডিসির বাংলো) থেকে শুরু করে রাস্তার দু’পাশে মাটিতে অস্ত্র রেখে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে অবনতমস্তকে আতœসমর্পণ করে।

এসময় নওগাঁর বিহারী সম্প্রদায় স্বপরিবারে কেডি সরকারী স্কুলে আশ্রয় নেয়। তৎকালিন নওগাঁ মহকুমা প্রশাসক সৈয়দ মার্গুব মোরশেদ মুক্তি বাহিনী ও মিত্র বাহিনীকে স্বাগত জানান। নওগাঁর বীর মুক্তিযোদ্ধারা বিজয় উল্লাসে ‘’ জয়বাংলা’’ ধ্বনি দিতে দিতে এসডিও অফিস চত্ত্বরে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন এবং উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা পতাকার প্রতি সালাম জানিয়ে সম্মান প্রদর্শন করেন। এভাবেই নওগাঁ হানাদারমুক্ত হয় একাত্তরের ১৮ ডিসেম্বর।

(বিএস/এসপি/ডিসেম্বর ১৭, ২০২২)