ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » মুক্তচিন্তা » বিস্তারিত

মনুষ্যত্ব ও বিবেক জাগ্রত করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে

২০২৩ মার্চ ০৫ ১৬:৫১:২২
মনুষ্যত্ব ও বিবেক জাগ্রত করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে

মোহাম্মদ ইলিয়াছ


ছোট একটা গল্প দিয়ে শুরু আজকের লেখা। সচরাচর দেখবেন কেউ কোন মুরুব্বীর পায়ে হাত রেখে ছালাম করলেই তারা বলেন, মানুষের মত মানুষ হও। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন জাগতে পারে, মানুষ হয়ে জন্ম গ্রহন করার পরও যদি আবার মানুষের মত মানুষ হতে হয়, তাহলে কি লাভ হলো এই মানুষ জন্ম নিয়ে। এমন প্রশ্ন যে আমার মনেও দু’একবার আসেনি তা কিন্তু নয়। কিন্তু উত্তর খুঁজতে গিয়ে যা জানলাম, তারই কিছু অংশ শেয়ার করব মাত্র।

কেন এমন আশীবার্দ করেন মুরুব্বীরা। দুটো পা আর দুটো হাত থাকলেই কি আমরা সত্যিকার অর্থে মানুষ হয়ে গিয়েছি? নাকি এই মানুষ সেই মানুষ নয়। হাত-পা ছাড়াও একধরনের মানুষ হওয়া। যেখানে থাকবে মনুষ্যত্ব, বিবেক আর মানবীয় গুনাবলী। এসব গুনের অধিকারী কি আমরা সত্যি হতে পেরেছি? নাকি শুধু মানুষ হিসেবে নিজেদের বড়াই করা।

আমাদের সমাজে বেশিরভাগ মানুষ সত্যিকার মানুষ হবার পিছনে না ছুটে সময় ব্যয় করছি কাগজের অর্থের পিছনে। তারা মনে করেন, এটা থাকলেই আমরা মানুষ হয়ে যাব । তার মানে টাকা হলো আমাদের মানুষ হবার মূল শক্তি বা বাহক।

সারা দেশে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়ছে। পাসের হার বাড়ছে। কিন্তু রুচিমান মানুষ কি বেড়েছে? মনুষ্যত্ব কি বেড়েছে? বাড়েনি! আমাদের মনুষ্যত্বকে জাগ্রত করা দরকার। মানুষে মানুষে বিভেদ বন্ধ করা দরকার। তা না হলে সমাজ এগোবে না। সাহিত্য বাঁচবে না।’

একখণ্ড সাদা পৃষ্ঠায় আমি মারামারি করি। কবিতার মাধ্যমে ছবি আঁকি। সেই ছবিটি বাংলাদেশের ছবি। কিন্তু যে বাংলাদেশ স্বপ্নে ও কবিতায় দেখি, বাস্তবের সঙ্গে তার মিল পাওয়া যায় না। মানুষে মানুষে হিংসা-বিদ্বেষ আমাদের সংস্কৃতি ও সম্ভাবনাকে ধ্বংস করতে চায়। আমাদের সাহিত্যকে ধ্বংস করতে চায়।’

ধর্মের নামে হত্যা, জঙ্গি তৎপরতা সেই বলকে দাবিয়ে রাখতে চায়। এখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে সার্বিকভাবে মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হবে। একবিংশ শতাব্দীতে আমাদের এখনো বলতে হচ্ছে “আবার তোরা মানুষ হ”। মানুষ না হলে মনুষ্যত্ব থাকবে না। সংস্কৃতি থাকবে না।’

বাঙালি উদার ও আবেগপ্রবণ জাতি। পরের উপকার করলে সে ধন্য হয়। এতদিন এটাই জেনে এসেছি। দেখেও এসেছি। কিন্তু এখন বাস্তবে দেখছি এর উলটো চিত্র। এখন সহনশীলতা ও ধৈর্য আমরা হারিয়ে ফেলেছি। শিক্ষার হার এত যে বাড়ছে, তাতে কী লাভ হচ্ছে? শিক্ষিত হয়ে আমরা আরও বর্বরতার দিকে ধাবিত হচ্ছি কি না তা ভেবে দেখার সময় এসেছে। কোনো ধরনের শিক্ষাই আমাদের মূল্যবোধ ও মনুষ্যত্ববোধ তৈরিতে সহায়ক হচ্ছে না।

আমরা মানুষ, সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব, অন্যান্য প্রাণী বা সব কিছু থেকে আমাদের আলাদা করা হয় বিচার বুদ্ধির জন্য, বিবেকের জন্য। কিন্তু আমরা কি আমাদের বিচার-বুদ্ধি, বিবেককে কাজে লাগাচ্ছি বা লাগাই? আমাদের প্রতিদিন কী পরিমাণ নৈতিক স্খলন, বিবেকের স্খলন হচ্ছে তা আমরা ভেবে দেখি না। আমাদের কাছে থাকা মানবীয় গুণাবলি বিসর্জন দিচ্ছি প্রতিনিয়ত, হারিয়ে যাচ্ছে নীতি- নৈতিকতা, লোপ পাচ্ছে আমাদের ভালো-মন্দ বিচার করার ক্ষমতা।

মানুষের প্রতি মানুষের সহমর্মিতা বিলীন হয়ে যাচ্ছে, প্রেম-ভালোবাসা ও দয়া-মায়া, ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের মাঝ থেকে। আমরা কিন্তু মানবীয় গুণাবলি হারিয়ে ক্রমেই মানুষ হিসেবে নয়, ক্রমেই হিংস্র প্রাণীর মতো নিষ্ঠুর আচরণ করছি। এমন কেন হচ্ছে? সময়ের আবর্তনে সভ্য মানুষ হিসেবে আমাদের মধ্যে মানবতাবোধ যেখানে বৃদ্ধি পাবার কথা, সেখানে মানবতবোধ কমছে, প্রতিনিয়ত কমে যাচ্ছে। কিন্তু কেন? শিক্ষিত মানুষের মধ্যে মানবীয় গুণাবলি আরও বেশি থাকার কথা, তা কিন্তু এখন আর তেমন দেখা যাচ্ছে না। আজকাল

প্রতিনিয়ত ক্ষতবিক্ষত হতে হয়, দৈনিক পত্রিকার পাতা উলটালেই নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। মা নিজের হাতে তার সন্তানকে বিষ খাইয়ে হত্যা করছে। বাবার লাঠি বা অস্ত্রের আঘাতে পুত্র মৃত্যুবরণ করছে। স্বাধীন জীবন-যাপনের জন্য মেয়ে বাবা-মাকে হত্যা করছে, ছেলে জন্মদাতা পিতা-মাতাকে হত্যা করছে। সামান্য জমি বা টাকার জন্য ভাই ভাইকে হত্যা করছে।

কিন্তু, আমরা কি বিবেক নিয়ে ভাবি? এখন আমরা ব্যস্ত আছি কে কতটা নীচে নামতে পারি সেই প্রতিযোগিতায়। কী পরিমাণ নৈতিক স্খলন হচ্ছে প্রতিদিন তা আমরা ভেবে দেখি না, জীবনযাত্রার দৌড়ে সবাই শামিল কে কাকে কীভাবে পেছনে ফেলে নিজে এগিয়ে যাবে তা নিয়েই ব্যতিব্যস্ত, বিবেকের স্খলন হচ্ছে তা আমাদের কাছে যেন কোনো ব্যাপারই নয়। যেকোনো মূল্যে সম্পদশালী হতে হবে। আমাদের কাছে থাকা মানবীয় গুণাবলি বিসর্জন দিচ্ছি প্রতিনিয়ত, সম্পদ আহরণের জন্য, ভোগ বিলাসের জন্য। আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে নীতি নৈতিকতা, লোপ পাচ্ছে আমাদের ভালো-মন্দ বিচার করার ক্ষমতা।

বাঙালি উদার ও আবেগপ্রবণ জাতি। পরের উপকার করলে সে ধন্য হয়। এতদিন এটাই জেনে এসেছি। দেখেও এসেছি। কিন্তু এখন বাস্তবে দেখছি এর উলটো চিত্র। এখন সহনশীলতা ও ধৈর্য আমরা হারিয়ে ফেলেছি। শিক্ষার হার এত যে বাড়ছে, তাতে কী লাভ হচ্ছে? শিক্ষিত হয়ে আমরা আরও বর্বরতার দিকে ধাবিত হচ্ছি কি না তা ভেবে দেখার সময় এসেছে। কোনো ধরনের শিক্ষাই আমাদের মূল্যবোধ ও মনুষ্যত্ববোধ তৈরিতে সহায়ক হচ্ছে না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, আমরা ক্রমেই আদিম যুগে ফিরে যাচ্ছি।

আমরা আবার সামনের দিকে ঘুরে দাঁড়াই, নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে আমাদের সুকুমার বৃত্তিগুলোকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে, নৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয় রোধ করে আমাদের মনুষ্যত্ববোধকে জাগিয়ে বাংলাদেশেকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাই। যে জন্য ৩০ লাখ শহিদ আত্মত্যাগ করেছেন, অসংখ্য মা-বোন সম্ভ্রম হারিয়েছেন। একটি সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমরা মনোনিবেশ করি, আমরাই একটি সুন্দর সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারি।

লেখক : সহকারী পরিচালক (অর্থ ও বাজেট), অবসর সুবিধা বোর্ড, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ঢাকা।