ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » মুক্তচিন্তা » বিস্তারিত

চা শিল্পের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার অবদান

২০২৩ জুন ০৩ ১৭:৪২:১২
চা শিল্পের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার অবদান

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ


জাতীয় চা দিবস ২০২৩। জাতীয় বোর্ডের উদ্যোগে দেশে তৃতীয়বারের মতো এই দিবসটি উদযাপন করা হচ্ছে। এ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হবে। আর চা নিয়ে বিশ্বব্যাপী আরেকটি দিবসও উদযাপন করা হয়। সেটির নাম ‘আন্তর্জাতিক চা দিবস’। এটি ২১ মে পালন করা হয়। যদিও প্রথমে ১৫ ডিসেম্বর ছিল বিশ্ব চা দিবস। বিশ্বের এই দ্বিতীয় সর্বাধিক ব্যবহৃত পানীয়ের পুষ্টিগত গুরুত্বের প্রতি সচেতনতা বাড়াতে জাতিসংঘের উদ্যোগে এই দিবসটি পালিত হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে এই দিবসটি উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে চা শিল্পে জাতির জনক অবদান এবং চা বোর্ডে যোগদানের তারিখকে স্মরণীয় করে রাখার লক্ষ্যে। ১৯৫৭ সালের ৪ জুন প্রথম বাঙালি হিসাবে তৎকালীন চা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসাবে যোগ দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। চা বোর্ডের চেয়ারম্যান থাকাকালে এবং স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে চা শিল্পে বঙ্গবন্ধু অবদান রাখেন।চা শিল্প বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প। জাতীয় অর্থনীতিতে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। চা গাছের জন্য অধিক পরিমাণে বৃষ্টিপাত ও তাপের প্রয়োজন হয় বলে বাংলাদেশের বৃষ্টিবহুল পাহাড়ি অঞ্চলে ব্যাপকভাবে চায়ের চাষ হয়।

জাতীয় চা দিবস পালনের পেছনে এ দিনটির গুরুত্ব কী? তা হয়তো অনেকেরই অজানা। আসুন জানি এর ইতিহাস-

জাতীয় চা দিবস সর্বপ্রথম ২০২১ সালে পালিত হয়। চা বোর্ডের চেয়ারম্যান থাকাকালে এবং স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে চা–শিল্পে বঙ্গবন্ধুর অবদানকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রতিবছর ৪ জুন চা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয় এবং গত ২০২১ সালে সর্বপ্রথম জাতীয় চা দিবস পালিত হয়।

বঙ্গবন্ধু চা বোর্ডের চেয়ারম্যান থাকাকালীন ১১১-১১৩, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকায় সরকার কর্তৃক বরাদ্দকৃত দশমিক ৩৭১২ একর ভূমির ওপর চা বোর্ডের প্রধান কার্যালয়ের নির্মাণকাজ ত্বরান্বিত হয়। তিনি ১৯৫৭ সালে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে টি রিসার্চ স্টেশনের গবেষণা কার্যক্রম জোরদার করে উচ্চফলনশীল জাতের (ক্লোন) চা গাছ উদ্ভাবনের নির্দেশনা দেন। চায়ের উচ্চফলন নিশ্চিত করতে সর্বপ্রথম বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ও শ্রীমঙ্গলের ভাড়াউড়া চা বাগানে উচ্চফলনশীল জাতের চারা রোপণের উদ্যোগ নেয়া হয়। তিনি ‘টি অ্যাক্ট-১৯৫০’ সংশোধনের মাধ্যমে চা বোর্ডের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য কন্ট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ড (সিপিএফ) চালু করেছিলেন, যা এখনো চালু রয়েছে।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় চা বাগানগুলো প্রায় বিধ্বস্ত হয়ে যায়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ শিল্পকে টেকসই খাতের ওপর দাঁড় করানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেন। তিনি স্বাধীনতার পর ‘বাংলাদেশ টি ইন্ডাস্ট্রিজ ম্যানেজমেন্ট কমিটি’ গঠন করে যুদ্ধোত্তর মালিকানাবিহীন/পরিত্যক্ত চা বাগান পুনর্বাসন করার পদক্ষেপ নেন। এছাড়া যুদ্ধবিধ্বস্ত পরিত্যক্ত বাগানগুলোকে ১৯৭৫ সালের মধ্যে বাগান মালিকদের কাছে পুনরায় হস্তান্তর করেন।

স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ধ্বংসপ্রাপ্ত চা কারখানাগুলো পুনর্বাসনের জন্য ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া’ থেকে ঋণ গ্রহণ করে চা শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানির ব্যবস্থা নেন। চা শিল্পের অস্তিত্ব রক্ষায় বঙ্গবন্ধু সরকার চা উৎপাদনকারীদের নগদ ভর্তুকি দেয়ার পাশাপাশি ভর্তুকি মূল্যে সার সরবরাহের ব্যবস্থা করেন। ওই সার সরবরাহ কার্যক্রম এখনো অব্যাহত আছে। তিনি চা শ্রমিকদের শ্রমকল্যাণ নিশ্চিত করেন। যেমন বিনামূল্যে বাসস্থান, সুপেয় পানি, বেবি কেয়ার সেন্টার, প্রাথমিক শিক্ষা, চিকিৎসা ও রেশন প্রাপ্তি নিশ্চিত করেন। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ টি রিসার্চ স্টেশনকে পূর্ণাঙ্গ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটে উন্নীত করেন বঙ্গবন্ধু। বর্তমানে এটি বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট নামে বাংলাদেশের চা উৎপাদন শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

চা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বাংলাদেশে মোট ১৬৭টি চা বাগান রয়েছে। এই ১৬৭টি চা বাগানের মধ্যে মৌলভীবাজারে ৯১টি, হবিগঞ্জে ২৫টি, সিলেটে ১৯টি বাগান রয়েছে। তাছাড়াও চট্টগ্রামে ২২টি, রাঙামাটিতে ২টি এবং ঠাকুরগাঁওয়ে ১টি চা বাগান রয়েছে। বাংলাদেশে চায়ের মোট ভূমির পরিমাণ ২ লাখ ৮৭ হাজার ৪২২ দশমিক ৬৯ হেক্টর। চা বাগানে মোট চাষযোগ্য ভূমির পরিমাণ ১ লাখ ১৮৩ হাজার ৫৯৪ দশমিক ৪৩ একর। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, চা বাগানের মোট শ্রমিকের পরিমাণ ১ লাখ ৪৩ হাজার ৯৭ জন। এদের মধ্যে অধিকাংশই নারী শ্রমিক।চা বাংলাদেশের একটি অতিপুরাতন ও ঐতিহ্যবাহী শিল্প। এই চা শিল্পের সাথে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের চা শিল্প ও চায়ের সাথে জড়িত শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

জাতীয় অর্থনীতিতে চা-শিল্পের গুরুত্ব অপরিসীম ও সুদূরপ্রসারী। জিডিপিতে এই খাতের অবদান শূন্য দশমিক ৮১ শতাংশ।তাই পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য উত্তরসূরি ও তারই তনয়া বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে দেশের চা শিল্পের উন্নয়নের পাশাপাশি চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নত করে এই দেশের মূল জনস্রোতের সাথে তাদেরকে একত্রিভূত করার জন্য নানামুখী পরিকল্পনা ও উদ্যোগ গ্রহণ করেন, যার কার্যক্রম এখনও অব্যাহত আছে এবং চা শ্রমিকরা তার সুফল ভোগ করছে।দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি, ক্রমাগত নগরায়ন জনগণের শহরমুখীতা, গ্রাম পর্যায়ে শহরের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি গ্রামীণ মানুষের রুচি ও অভ্যাসের পরিবর্তন, তাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ইত্যাদির কারণে চায়ের অভ্যন্তরীণ চাহিদা ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাস্তবতার আলোকে চায়ের গুণগত মান বৃদ্ধি ও নতুন নতুন জায়গা চা চাষের আওতায় এনে চায়ের মোট উৎপাদন ও সরবরাহ বৃদ্ধির জন্য নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

এই উদ্দেশ্যে সমগ্র বাংলাদেশ চা আবাদের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা করে রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, দিনাজপুর, লালমনির হাট, জামালপুর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় মোট ১০,১৭২ হেক্টর ক্ষুদ্রায়তনের চাষযোগ্য জমি চিহ্নিত করা হয়। পরবর্তীতে এই প্রকল্পের আওতায় ২০০০ সালে উত্তরবঙ্গের পঞ্চগড়ের তেতুলিয়ায় ২০০৫ সালে, পার্বত্যচট্টগ্রামে ২০০৭ সালে, ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী ও লালমনির হাটের হাতিয়াবান্দায়, ২০১৪ সালে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে ও দিনাজপুরের বীরগঞ্জে ক্ষুদ্র পর্যায়ে চায়ের চাষ শুরু হয়।

বর্তমান শেখ হাসিনা সরকারের আন্তরিকতা ও পৃষ্ঠপোষকতায় প্রয়োজনীয় নীতি ও কৌশল প্রণয়ন, সর্বোপরি তার সুষ্ঠু বাস্তবায়নের ফলে দেশের উত্তর জনপদের পঞ্চগড়ে চা চাষ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। চট্টগ্রাম ও সিলেটের পরে পঞ্চগড় দেশের অন্যতম চা অঞ্চল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। ১৯৯৯ সালে উত্তরবঙ্গে চা চাষের পরিকল্পনা করা হয়। পরবর্তীতে ২০০০ সালে সেখানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চায়ের চাষ শুরু হয়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর হতেই মূলত চা শিল্পের উন্নয়ন, চায়ের গুণগত মানের পরিবর্তন এবং উৎপাদনের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। বর্তমান সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় ও ধারাবাহিক রাষ্ট্র পরিচালনায় চা শিল্পের উন্নয়নে গতি আরও ত্বরান্বিত হয়েছে। বর্তমানে চায়ের উৎপাদন ৩১.৩৮ মিলিয়ন কেজি থেকে বেড়ে ৬৭ মিলিয়ন কেজিতে পৌঁছেছে।

বাংলাদেশে ২০১২ সালে যেখানে চা উৎপাদন হয়েছিল ৬২ দশমিক ৫২ মিলিয়ন কেজি, সেখানে ২০২১ সালে রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদন হয় ৯৬ দশমিক ৫১ মিলিয়ন কেজি।
বর্তমান বিশ্বে বাংলাদেশের চায়ের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে।

সূত্র মতে, বর্তমান বিশ্বে ২৩টি দেশে বাংলাদেশের চা রপ্তানি হয়ে থাকে। গত পাঁচ বৎসরে দেশ থেকে মোট ১৫০ কোটি ২৪ লাখ ৭০০ কোটি টাকার চা বিদেশে রপ্তানি হয়েছে। এই সময় দেশ থেকে গড়ে চা রপ্তানি হয় ২২ কোটি ৫৬ লাখ টাকার। এতে বাড়ছে রপ্তানি আয় এবং সমৃদ্ধ হচ্ছে আমাদের অর্থনীতি।

বর্তমান সরকার চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য ইতোমধ্যে ১৭০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেছে। বিভিন্ন এনজিও শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সরকার শিশুদের শতভাগ ভর্তির উপর জোর দিচ্ছে। চা শ্রমিক ও তাদের সন্তানদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য সরকার একটি রোড ম্যাপও প্রণয়ন করেছে এবং সেই অনুপাতে কাজ করছে। সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় ৫০ হাজার শ্রমিককে বছরে ৫ হাজার টাকা করে ভাতা দিচ্ছে। তাছাড়া সরকার তাদের প্রতি মাসে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, স্বামী নিগৃহীত ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা ও শিক্ষা উপবৃত্তিও দিচ্ছে।

সম্প্রতি চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরী ১২০ টাকা থেকে ১৭০ টাকা করা হয়েছে। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদেরকে তৈরি ঘর দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি করেছেন। আশা করি এতে চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নত হবে, চা শিল্পের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি ঘটবে এবং সর্বোপরি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এই শিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। চা বাগান, পাহাড়ের ঢালে সাজানো সবুজের সমারোহ দেখে চোখ জুড়িয়ে যায় আমাদের। এই বাগানের পাতা থেকে তৈরি চা আমাদের ক্লান্তি দূর করে, মনে প্রশান্তি দেয়। নানা জরিপের তথ্যে চোখ বুলিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের দশম বৃহৎ চা উৎপাদনকারী দেশ আর রপ্তানিতে নবম।

বাংলাদেশে চা চাষের ইতিহাস বেশ সমৃদ্ধ আর পুরাতন। ১৮৫৪ সালে সিলেটে যখন চায়ের বাগান করে চা উৎপাদন শুরু হয় তখন সিংহভাগের দখলে ছিল ব্রিটিশ বণিকরা। মাইলের পর মাইল বিশাল এই চা বাগানে কাজ করবার জন্য দরকার ছিল বিপুল শ্রমিক। বিহার, উড়িষ্যা, অন্ধ্রপ্রদেশ, উত্তর প্রদেশসহ ভারতের বিভিন্ন এলাকা থেকে নিচু বর্ণের হিন্দু, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকজনকে কাজের প্রতিশ্রুতি দিয়ে চা বাগান এলাকাগুলোতে নিয়ে আসা হয়। চা বাগানের মাঝে ছোট মাটির ঘরে চা শ্রমিকদের বসবাস শুরু হয়।

রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে একটি কুড়ি আর দুটি পাতা ছিড়ে শৌখিন মানুষের কাপে চা পৌঁছে দিচ্ছে চা শ্রমিকরা। মাঝে পেরিয়ে গেছে অনেক সময়, ভারত ভাগ হয়েছে, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে কিন্তু চা শ্রমিকদের ভাগ্য চা বাগানের হাড়ভাঙ্গা খাটুনির গণ্ডিতে বাঁধা পড়ে আছে। বংশানুক্রমে সমাজের মূলধারা থেকে বিছিন্ন এই মানুষগুলোর নিজেদের ভূমির অধিকার নেই। ইংরেজ আমলে ভারতের বিভিন্ন এলাকা থেকে নিয়ে আসা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর এই শ্রমিকেরা মাইলের পর মাইল পাহড়ি টিলা আর ঢাল পরিষ্কার করে চা বাগানের সূত্রপাত করেছিল। বিনিময়ে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই মানুষেরা চা শ্রমিকের কাজটিই করে যাচ্ছে।

মোট চা শ্রমিকের প্রায় ৬৪ শতাংশই নারী এবং তাদের প্রায় সবাই খুব ছোটবেলা থেকেই চা বাগানে কাজ করা শুরু করেছে। প্রতিটি চা শ্রমিককে দিনে ২৩ কেজি চা পাতা তোলার লক্ষ্য দিয়ে দেওয়া হয়। বাগান বিশেষে হয়তো এই লক্ষ্যটি ১৮ থেকে ২৪ কেজিতে উঠানামা করে।

তবে এই লক্ষ্য দিয়ে দেওয়ার ব্যাপারটি সিলেটের পাশাপাশি দেশের অন্যান্য চা বাগানেও আছে। আর এই লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হলে কাটা যায় মজুরী। অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হলে যেমন মজুরী কাটা যায় তেমনি লক্ষ্যের চেয়ে বেশি পাতা তুলতে পারলে প্রতি কেজি পাতার জন্য দুই থেকে তিন টাকা বাড়তি মজুরী দেওয়া হয়।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লক্ষ্যে অর্জনে চা শ্রমিকেরা পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাহায্য নেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পরিবারের শিশু সদস্যদের যুক্ত করা হয়। যে বয়সে শিশুটির সময় কাটানোর কথা ছিল স্কুলের প্রাঙ্গণে সমবয়সীদের সাথে খেলাধুলা করে সেখানে দুটি পাতা আর একটি কুঁড়ির খোঁজ করতেই অস্ত যায় সোনালী সূর্য।

তবে, খোলা চোখে চা বাগানে শিশু শ্রমের ব্যাপারটি সেই অর্থে দৃশ্যমান নয়। পরিবারের বাকি সদস্যদের সাথে কাজ করতে করতে চা বাগানের কাজে জড়িয়ে যায় তারা। তবে পূর্ণবয়স্ক হওয়ার আগে নিবন্ধিত করা হয় না তাদের। ফলে মালিকপক্ষের কাঁধে শিশুশ্রমের দায় চাপানো যায় না। পরিবারের সদস্যরা কয়েক টাকা বাড়তি মজুরীর আশায় নিজেরাই তাদের সন্তানদের কাজে নিয়োজিত করে থাকেন।

চা বাগানের চৌহদ্দিতে মাঝেমধ্যেই দেখা মিলে স্কুলের। ইউনিসেফ কিংবা অন্য কোনো দাতব্য সংস্থার স্কুলের রঙিন দালানগুলো দূর থেকে ডাকতে থাকে শিশুদের। চা শ্রমিকদের অনেকেই এখন স্বপ্ন দেখেন তাদের সন্তানেরা চা বাগানের বাইরে পা রাখবে। কিন্তু সেই আশা অনেক সময় ধোঁয়ার মতো শূন্যে মিলিয়ে যায়।

প্রাথমিক কিংবা প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা হলেও চা বাগান এলাকা থেকে বহুদূরের উচ্চ বিদ্যালয়ে সন্তানদের পাঠাবার সাহস করেন না অনেকেই। মূলধারার জনগোষ্ঠীর সাথে মিশে যেতে আছে ভাষার সমস্যাও। বিভিন্ন জরিপের ফলাফল বলছে চা বাগানের শ্রমিকদের মধ্যে দশটিরও বেশি ভাষা প্রচলিত আছে। চা বাগানের শ্রমিকদের যেহেতু আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা, বিহারের বিভিন্ন এলাকা থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল, স্বাভাবিকভাবেই তাদের মাতৃভাষা ছিল আলাদা।

উড়িষ্যা থেকে আসা চা শ্রমিকের বংশধরেরা কথা বলেন 'দেশালি' ভাষায়, যেটি বাংলা আর ওড়িয়া ভাষার একটি মিশ্রিত রূপ। প্রচলিত আছে ভোজপুরি, হিন্দি, অসমীয়া, মুন্ডা, ওরাং, তেলেগু, খাসি আর সাঁওতালী ভাষাও। দারিদ্র্যের যাঁতাকলে পিষ্ট প্রান্তিক এই মানুষগুলোর কাছে মাতৃভাষা চর্চা আর নিজেদের ভাষায় লেখাপড়ার দাবিটাও ঝাপসা হয়ে আছে।

জীবনের দুষ্টচক্র

চা গাছ রক্ষণাবেক্ষণ, পরিচর্যা আর চা পাতা সংগ্রহের প্রধান কাজটি নারী শ্রমিকেরা করে আসছে বংশানুক্রমে। নারী শ্রমিকরা পুরুষ শ্রমিকদের তুলনায় অনেক যত্নের সাথে এই কাজ করে। পুরুষ শ্রমিকদের একটি বড় অংশই কাজ করে চা পাতা প্রক্রিয়াজাত করার কারখানায়, নিরাপত্তাকর্মী, চা পাতা পরিবহন, ওজনকারী, বাগানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা কর্মচারীদের বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে কিংবা শ্রমিকদলের সর্দার হিসেবে। কিন্তু চা শ্রমিকদের এই বিশাল অংশের কি চা বাগানে কাজ করা ছাড়া অন্য কোনো কাজ করার সুযোগ নেই?

এই প্রশ্নের মূল উত্তর লুকিয়ে আছে চা শ্রমিকদের আবাসন ব্যবস্থার সাথে। ১৮৫৪ সাল থেকেই যখন চা শ্রমিকদের ভারতবর্ষের বিভিন্ন এলাকা থেকে নিয়ে আসা হয় তখনই তাদের আবাসনের দায়িত্ব নিয়েছিল চা বাগানের মালিক সম্প্রদায়। চা বাগানে কাজ করে এমন যে কারো আবাসন চা বাগান কর্তৃপক্ষই করে দেবে। চা বাগানে কাজ করে না এমন কেউ চা বাগানে বসবাস করতে পারবে না। ফলে চা বাগানের আবাসন বাঁচিয়ে রাখতে প্রতি পরিবারের অন্তত একজনকে চা শ্রমিক হিসেবে বংশানুক্রমে কাজ করেই যেতে হবে।

স্বল্প মজুরীতে ক্রমবর্ধমান পরিবারের চাহিদা মেটাতে একই পরিবার থেকে অনেকেই চা বাগানে কাজ নিতে শুরু করে। পরিবার আলাদা হয়ে গেলে চা বাগান কর্তৃপক্ষ তাদের নতুন আবাসনের ব্যবস্থা করে দেয়।

এই স্বল্প মজুরীতে যেখানে তাদের জীবন ধারণই কঠিন সেখানে তাদের কেউ টাকা সঞ্চয় করে জমি কিনে মূলধারার সমাজে বসবাস শুরু করবে এই চিন্তাটিও করা কঠিন। ভাষা আর সংস্কৃতির বিস্তর ফারাকের কারণে মূলধারার বাঙালি সমাজের কাছেও নিগ্রহের শিকার এই চা শ্রমিকেরা। চা বাগানের শিশুরাও প্রাক প্রাথমিক আর প্রাথমিক স্কুলের গণ্ডি পেরোতে পেরোতেই ডাক পড়ে চা বাগানে কাজ করার। পরিবারের বয়স্ক সদস্যের কেউ চা শ্রমিকের পদ থেকে অবসর নিলে সেই পরিবারের কাউকে চা শ্রমিক হিসেবে নিবন্ধনের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়, যাতে তার পরিবারের আবাসনটি টিকিয়ে রাখা যায়।

এভাবে যুগের পর যুগ ধরে চা বাগানের ভেতরেই জীবন বাঁধা পড়ে আছে তাদের। চা বাগানের শ্রমিকেরা বংশানুক্রমে শত শত বছর ধরে চা বাগানের ভেতরের জমিতে বসবাস করেও পায় না জমির মালিকানা, এক টুকরো জমির জন্য এরা জিম্মি হয়ে আছে মালিকশ্রেণির কাছে। তবে এর মধ্যেও খুব অল্পসংখ্যক লোক চা বাগান থেকে বেরিয়ে এসে শিক্ষা গ্রহণ করে মূলধারার সমাজে মিশতে শুরু করেছেন।

চা শ্রমিকদের নেতাদের নিয়ে গঠিত হয় পঞ্চায়েত। এই পঞ্চায়েতের মূল কাজ চা শ্রমিকদের সাথে চা বাগানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দ্বন্দ্ব নিরসন করা, মালিকপক্ষের কাছ থেকে সুযোগ সুবিধা কিংবা বকেয়া মজুরী আদায়ে সহায়তা করা। এছাড়াও পঞ্চায়েত শ্রমিকদের মধ্যবর্তী পারিবারিক কিংবা সামাজিক দ্বন্দ্ব নিরসন, বিয়ে, সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজনের দায়িত্ব পালন করে থাকে।

চা বাগানে শ্রমিক বিদ্রোহও হয়েছে অনেকবার। তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিদ্রোহটি হয়েছিল ১৯২১ সালের ২০ মে। বৃহত্তর সিলেট এলাকার চা বাগানের প্রায় ত্রিশ হাজার শ্রমিক 'মুল্লুকে চলো' এই নামে আন্দোলনের ডাক দেয়। নিজের জন্মভূমিতে ফিরে যাবার লক্ষ্যে তারা চা বাগান থেকে বেরিয়ে দলে দলে রওনা হয় চাঁদপুরের মেঘনা ঘাটের দিকে। তবে সেখানে চলে পুলিশের গুলি, মারা যায় অনেকেই। বাকিরা জীবনের ভয়ে পালিয়ে আবারো চা বাগানে আশ্রয় নেয়।

চা শ্রমিকের আবাসন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা—এসবই যেন দুর্ভাগ্যের আয়না। তাদের বসবাসের ব্যবস্থা করার দায়িত্ব বাগান মালিকের। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা ২০১৫-এর পঞ্চম তফশিলে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেয়া আছে। শুধু তাই নয়, ঘর মেরামতের দায়িত্বও বাগান মালিকের। শ্রম বিধিমালার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা [৭ (১) খ] অনুসারে, প্রতি বছর লেবার লাইনে বসবাসকারী শতকরা অন্তত ১০ ভাগ শ্রমিকের জন্য ‘মির্তিঙ্গা টাইপ’ (পাকা দেয়ালের) গৃহ নির্মাণ করতে হবে। গৃহের মেরামত, ব্যবহার ও দেখাশোনার জন্য মালিক-শ্রমিক উভয়ের দায়িত্ব শ্রম বিধিমালায় দেয়া আছে। চা শ্রমিকরা বাগান মালিকের দেয়া গৃহের ব্যাপারে সন্তুষ্ট নন। প্রথমত, বাগান মালিকরা যদি প্রতি বছর ১০ শতাংশ হারে ঘর ‘মির্তিঙ্গা টাইপ’ করে দিতেন, তবে চা বাগানের লেবার লাইন বা শ্রমিক কলোনিতে এখন আর কোনো কাঁচা ঘর থাকত না। বাংলাদেশ টি বোর্ডের ২০১৯ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে, চা বাগানে পাকা ঘরের (মির্তিঙ্গা টাইপ) সংখ্যা ১৮ হাজার ৪৯০ আর কাঁচা ঘরের সংখ্যা ৫৭ হাজার ৫৯। এ অবস্থা আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। গৃহ নিয়ে আরো নানা উদ্বেগ আছে, শ্রম আইন যেসবের মীমাংসা হওয়া দরকার।

পাতাতোলা শ্রমিকদেরই করতে হয় চা শিল্পের সবচেয়ে কষ্টের কাজ। বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদের নিদারুণ কষ্টের মধ্যে গর্ভের সময় পার করতে হয়। তাদের অধিকাংশ সন্তান প্রসবের কাছাকাছি সময় পর্যন্ত ভারী ও কষ্টের কাজ করেন। ফলে অনেকের গর্ভপাত ঘটে এবং অনেকে মৃত সন্তান জন্ম দেন। তাছাড়া অধিকাংশ নারী বাড়িতেই মাটির ওপর করা বিছানায় অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে সন্তান প্রসব করেন। ফলে মা ও শিশু উভয়ই ঝুঁকির মধ্যে থাকে।

চা বাগানগুলোয় বাগান ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হাসপাতাল ও ডিসপেনসারি আছে। কিন্তু এসব হাসপাতালে যে চিকিৎসা পাওয়া যায়, তাতে শ্রমিকরা সন্তুষ্ট নন। ক্যান্সার, যক্ষ্মাসহ বড় কোনো রোগে পড়লে বাগানের হাসপাতাল ও ডিসপেনসারিতে ভালো চিকিৎসা মেলে না। শ্রম আইন ও বিধিমালায় যেসব প্রসূতি কল্যাণ সুবিধা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা চা শ্রমিক ও তাদের পরিবারের পাওয়ার কথা, তার অনেক কিছুই তারা পান না। তবে চা বাগানের কাছাকাছি যেসব সরকারি স্বাস্থ্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান আছে, সেখানে চা শ্রমিকদের যেতে বাধা নেই। তাদের কেউ কেউ সেখানে যাচ্ছেনও; সংগত কারণেই তাদের সংখ্যা কম।

চা শ্রমিকের জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চা বাগান মালিক ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ যে শিক্ষার ব্যাপারে সবসময় উদাসীন থেকেছে, তার সপক্ষে জোরালো সব লক্ষণ আমরা দেখতে পাই। চা বাগানগুলোয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় খুবই কম। তবে প্রান্তিক এই জনপগোষ্ঠীর দরকার একটু সহানুভুতি, ভালোবাসা আর মানুষ হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়ানোর অধিকার।

পরিশেষে বলতে চাই, বাংলাদেশের চা শ্রমিক ও তাদের পরিবার-পরিজন শুধু দরিদ্র এবং পশ্চাত্পদই নয়। বিভিন্ন ভাষা, জাতি-পরিচয়, ধর্ম, সংস্কৃতি ও একটি বিশেষ পেশা অবলম্বন করে বেঁচে থাকা মানুষ এরা। এরা সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন ও পেছনে পড়ে আছে। তাদের জীবনমান উন্নয়নে সমান সুযোগ-সুবিধাই যথেষ্ট নয়; দরকার আরো বেশি কিছু। কাজেই চা শ্রমিকদের প্রতি সুবিচার করতে হলে প্রথমেই শ্রম আইন ও শ্রম বিধিমালা তাকে যেসব অধিকার দেয়, সেসব নিশ্চিত করতে হবে। এরপর সামাজিক নিরাপত্তার জন্য রাষ্ট্র তাদের জন্য যে বরাদ্দ রেখেছে, তা আরো বাড়াতে হবে। ভূমির মালিকানা বঞ্চিত চা বাগানে ‘বাঁধা’ পড়া এসব মানুষের জন্য আরো অনেক কিছু করার আছে তাদের নিয়োগদাতা, রাষ্ট্র এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের। তাদের ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষা এবং বৈচিত্র্যময় জাতি-পরিচয় বাঁচিয়ে রাখতে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যা যা করা সম্ভব, তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে সেসব ব্যাপারে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেয়া দরকার।

সামাজিক ন্যায়বিচার ও রাজনৈতিক সুরক্ষাই পেছনে পড়ে থাকা চা শ্রমিক ও তাদের পরিবার-পরিজনকে মুক্তির পথ দেখাতে পারে। তাইত বাংলাদেশের চা শিল্পে বঙ্গবন্ধুর অসামান্য অবদানের কারণে ২০২০ সালের ২০ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠকে জাতীয় চা দিবস-সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়। ওই সভায় প্রতি বছর ৪ জুনকে জাতীয় চা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে সরকার। একইসাথে এটি দিবস-সংক্রান্ত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পরিপত্রের ‘খ’ শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মূলত বঙ্গবন্ধুর চা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসাবে যোগদানের দিনটিকে চা দিবস ঘোষণা করেছে সরকার। এজন্য ৪ জুনকে জাতীয় চা দিবস হিসেবে পালন করা হয়৷তাই আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে চা আবাদ ও উৎপাদনে।

লেখক : কলাম লেখক ও গবেষক।